‘বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের বিচ্ছেদ সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদের ঐক্যে যারা ফাটল ধরিয়েছিল তাদের দেশের শত্রু অ্যাখ্যা দিয়ে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন বলেছেন, এই দুজনের বিচ্ছেদ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2014, 03:50 PM
Updated : 18 April 2014, 05:21 PM

স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে ‘তাজউদ্দীন আহমদ: নেতা ও পিতা’ শিরোনামের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য কামাল।

শুক্রবার রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তনে তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে শারমিন আহমেদের লেখা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

কামাল বলেন, “অঙ্ক করে বাংলাদেশের সংগ্রাম, স্বাধীনতা যুদ্ধকে মেলানো যাবে না। বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের বিচ্ছেদ স্বাধীন বাংলার ইতিহাসে সব থেকে বড় ট্রাডেজি- এটা একশ’ পার্সেন্ট ঠিক কথা। এটা আমি এফিডেভিড করে লিখে দিয়ে যেতে চাই।

“যারা বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের ঐক্যে ফাটল ধরিয়েছে তারা অভিশপ্ত, এদেশের শত্রু।”

ইতিহা্সকে ধরেই একটা জাতি বাঁচতে পারে মন্তব্য করে ড. কামাল বলেন, তরুণ প্রজন্মের জন্য এ ধরনের ইতিহাস লেখা গুরুত্বপূর্ণ।

“রাজনীতিতে যে নীতির কতো গুরুত্ব এই দুজনের (বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন) কাছ থেকে বুঝেছি। নীতির রাজনীতি আমরা তাদের মধ্যে দেখেছি। যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে জনগণের কাছে দেয়া ওয়াদার কথাই তারা প্রথম চিন্তা করতেন।”

রাজনীতি নিয়ে শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “রাজনীতি মানেই ক্ষমতায় যাওয়া-এটা অনেক বড় ভুল। বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের প্রতি এটা অশ্রদ্ধাও।

“ইতিহাসে কেউ ভুল করে থাকলে সেটাও ধরানো দরকার। সঠিক কাজ করে ভুল ধরানো যায়, তরুণ সমাজ মিলে এই কাজটা করবে।”

তাজউদ্দীনকে নিয়ে লেখা গ্রন্থ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, এখানে কিছু কথা আছে যা বিতর্কের সৃষ্টি করবে। কারণ একটা সময় থেকে, দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখক বিষয়টাকে দেখেছেন। তবে সত্যের যতদূর কাছে পৌঁছানো যায় তিনি সেই চেষ্টা করেছেন।

বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতাকারীরা একাত্তরে তারা হেরে গেলেও পঁচাত্তরে জিতে যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ২৫ মার্চের কালরাত থেকে শুরু করে তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে কাটানো কয়েকটি বিশেষ মুহূর্ত তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, এই বইয়ে তাজউদ্দীন আহমদের জীবন ও বাংলাদেশের মূল দর্শনের মিল আছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস উন্মোচিত হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদের রাজনৈতিক জীবন ও দর্শনের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

দুই নেতার মতপার্থক্যের বেশ কিছু দিকও তুলে ধরেন তিনি।

এই অধ্যাপক বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে ক্রমাগত প্রচার করা হচ্ছে। মানুষকে সত্য ভুলিয়ে দেয়া হচ্ছে।”

বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী হাজী গোলাম মুরশেদ স্মৃতিচারণ করে বলেন, সততা, সত্যবাদিতা আর মর্যাদাবোধকে এক করলে হয় তাজউদ্দীন।

“আমি কখনোই কারো সহকারী ছিলাম না, সহকর্মী ছিলাম। আমি নেতা-পরিচালক খুঁজেছি। বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের মধ্যে আমি তা পেয়েছি।”

বঙ্গবন্ধুর এই সহকর্মী বলেন, “বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু হতেন না যদি তাজউদ্দীন না থাকতেন। তবে বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছিল মানুষ্যসৃষ্ট।”

তাজউদ্দীন আহমদের কলেজ জীবনের বন্ধু এম এ করীম বলেন, “আমরা কৃষক পরিবারের সন্তান হওয়ায় বন্ধুত্বটা তাড়াতাড়িই হয়ে যায়। তবে শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষের শোষণ থেকে এখনো মুক্তি মেলেনি।”

স্মৃতিচারণে তিনি বন্ধু তাজউদ্দীনর সঙ্গে কাটানো বেশ কিছু ঘটনা তুলে ধরেন।

শারমিন আহমেদ বলেন, “মেয়ে হিসাবে বাবাকে নিয়ে লিখা ভীষণ কষ্টকর। কিন্তু ইতিহাসকে তুলে আনার প্রয়াস ছিল। ভুল-ত্রুটি যা আছে তা সংশোধন করা হবে।”

তাজউদ্দীনের ছোট ভাই আফসার উদ্দীন আহমেদ, ঘনিষ্ঠ সহকারী মঈদুল হাসান, ছোট মেয়ে মাহজাবিন আহমেদ মিমি, গ্রন্থের লেখক শারমিনের স্বামী আমর খাইরি আব্দুল্লা ও বইয়ের প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্যের প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান নাইম বক্তব্য রাখেন।