‘নির্যাতন কেন্দ্র চালান বদর কমান্ডার কাশেম আলী’

জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাশেম আলী একাত্তরে চট্টগ্রামে আলবদর বাহিনী গঠন করে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের ধরে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন,হত্যাসহ অন্যান্য অপরাধে নেতৃত্ব দেন বলে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যে বলা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2014, 04:56 PM
Updated : 10 April 2014, 04:56 PM

কাশেম আলীর বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন প্রসিকিউশনের সর্বশেষ সাক্ষী ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো.নুরুল ইসলাম।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ প্রসিকিউশনের ২৪তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন তিনি।

ফাইল ছবি

সাক্ষ্যে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন,“তদন্তকালে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘঠিত বিভিন্ন অপরাধ সংশ্লিষ্ট ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং সংঘঠিত অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে আমি নিশ্চিত হই, মীর কাশেম আলী হত্যা,নির্যাতন, লাশগুম,অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন।”

তিনি বলেন,মীর কাশেম আলী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।তিনি ওই সময় চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন।একইসঙ্গে চট্টগ্রাম শহর শাখারও সভাপতি ছিলেন তিনি।

পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ৬ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রাদেশিক কার্যকরী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক পদে যান।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন,মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় ইসলামী ছাত্রসংঘের বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে চট্টগ্রামে সশস্ত্র আলবদর বাহিনী গঠন করেন মীর কাশেম আলী।

“সেই আলবদর বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে স্বাধীনতাবিরোধী মূলধারার সাথে একাত্ম হয়ে সারা বাংলাদেশ বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘঠিত করেন মীর কাশেম আলী।”

নুরুল ইসলাম বলেন,চট্টগ্রাম শহরের দোস্ত মোহাম্মদ পাঞ্জাবি বিল্ডিং,সালমা মঞ্জিল ও ডালিম হোটেলসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে সহযোগীদের নিয়ে আলবদর বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে তোলেন মীর কাশেম।

“এসব নির্যাতন কেন্দ্রগুলোতে বহু মানুষকে ধরে নিয়ে দিনের পর দিন নির্যাতন করেন এবং অনেক লোককে হত্যা করেন।”

সাক্ষ্য দেয়া শেষে এ সাক্ষীকে জেরা শুরু করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী নাজিবুর রহমান।পরে  অসমাপ্ত জেরা শেষ করতে আগামী ১৫ এপ্রিল দিন রেখে এ মামলার কার্যক্রম মুলতবি ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল।

গতবছর ৫ সেপ্টেম্বর মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়।তার বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগের মধ্যে আটজনকে নির্যাতনের পর হত্যা,লাশ গুম এবং ৩৪ জনকে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেমকে গত বছর ১৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয়।এরপর ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। 

মীর কাশেম জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম প্রধান অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত।তিনি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এবং রাবেতা আল ইসলামী নামে একটি এনজিওর সাবেক আবাসিক প্রতিনিধি।

জামায়াত সমর্থক বলে পরিচিত দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনেরও চেয়ারম্যান তিনি। ওই প্রতিষ্ঠানেরই সংবাদপত্র দৈনিক নয়া দিগন্ত এবং টেলিভিশন চ্যানেল দিগন্ত টেলিভিশন।

১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসংঘ নাম বদলে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করলে মীর কাশেম তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন।