‘ধাপে ধাপে ভোট আর নয়’

চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে আগামীতে আর ধাপে ধাপে নির্বাচন করতে চায় না নির্বাচন কমিশন। এজন্য স্থানীয় সরকার উপজেলা পরিষদ আইনে সংশোধনের প্রস্তাব দেয়ার কথা ভাবছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2014, 04:41 AM
Updated : 1 April 2014, 04:46 AM

পঞ্চম দফায় উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ।

একদিনেই ভোট করার পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, “কোনো কারণে আগে সম্ভব না হলে মেয়াদ শেষে সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচন করার বিধান যুক্ত করতেই আইন সংশোধনের প্রস্তাব করার চিন্তা করছি আমরা।”

মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা থাকায় এবার উপজেলা নির্বাচন ধাপে ধাপে করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

এবারের নির্বাচনে গোলযোগ-সহিংসতা ও অনিয়মের অভিযোগ থাকায় বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা হয়েছে।

নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আবু হাফিজ বলেন, “ঝামেলাহীন নির্বাচন করতে পারলে বেশি সন্তুষ্ট হতাম। সব উপজেলায় একদিনেই ভোট করতে পারলে ঝামেলাহীন নির্বাচন হতো। ধাপে ধাপে নির্বাচন করা যাবে না।”

তিনি বলেন, “প্রথম পর্ব অনেকটা গোলযোগহীন ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলেও পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘প্ররোচনায়’ তা সহিংস রূপ পায়। পরবর্তীতে অধিকাংশ কেন্দ্রে সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও বিচ্ছিন্ন গোলযোগে শতভাগ সন্তোষ আসছে না।”

নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ  বলেন, “দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে গোলযোগের মাত্রা প্রায় ৩ শতাংশ করে থাকলেও চতুর্থ ধাপে তা বেড়ে অন্তত ৮ শতাংশ হয়েছে। আর পঞ্চম পর্বে সহিংসতা না হলেও গোলযোগ হয়েছে প্রায় ২ শতাংশ।”

এর আগে সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি একদিনেই উপজেলা ভোট হলেও শপথের পর চেয়ারম্যানরা একেক সময়ে সভা করেন। তাতে প্রথম সভা থেকে ৫ বছরের মেয়াদ শুরু হয়। এবার ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে সাড়ে চারশ’র বেশি উপজেলার মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে।

এ সময়ের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষা, এইচএসসি পরীক্ষা, স্বাধীনতা দিবস, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, মহিলা বিশ্বকাপ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের সূচি পড়ে যায়। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের পেতে সুবিধাজনক সময় হিসেবে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকে ভোটের তারিখ রাখে নির্বাচন কমিশন।

এ প্রসঙ্গে আবু হাফিজ বলেন, “মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন করতে হয়েছে। ধাপে ধাপে ভোট করা ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। এটা কম্পেলিং সিচুয়েশন, আমরা বাধ্য হয়েছি।

“নেক্সট টাইম ইলেকশনের জন্য আমরা ওপিনিয়ন জানাব সরকারের কাছে। আইন সংশোধন করার প্রস্তাব দেব।মেয়াদ শেষের আগে কোনো কারণে ভোট করতে না পারলেও মেয়াদের পরে সুবিধাজনক সময়ে যেন নির্বাচন করা সম্ভব হয়।”

তিনি বলেন, সংসদে নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে শপথের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উপজেলায়ও একই ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। তাহলে নির্বাচিতদের মেয়াদ একই সময়ে শুরু ও শেষ হবে।

তাতে আগামীতে একদিনে উপজেলা নির্বাচন করার কাঠামোও তৈরি হবে বলে মনে করেন তিনি।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও মন্ত্রী-সাংসদসহ সংশ্লিষ্টদের আচরণবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন অনেকটা ‘সফল’ হয়েছে বলেও দাবি করেন আবু হাফিজ।

তিনি বলেন, নির্দলীয় এ নির্বাচনে জয় পেতে বড় দলগুলোর ‘তৎপরতায়’ কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের প্ররোচনা কাজ করেছে।স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক প্রভাবে অনেক গোলযোগ হয়েছে।

আবু হাফিজ জানান, দলগুলো প্রার্থীদের সমর্থন দিলেও নির্দলীয় এ নির্বাচনকে দলীয় প্রতীকে করতে আইন সংশোধনের কোনো উদ্যোগের কথা ভাবছে না ইসি।

এটা করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ চালু হওয়ার পর ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে একদিনেই ভোট হয় মেয়াদোত্তীর্ণ সব উপজেলায়।

এবার প্রথম ধাপে ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯৮ উপজেলায়, দ্বিতীয় পর্বে ২৭ ফেব্রুয়ারি ১১৬ উপজেলায়, তৃতীয় ধাপে ১৫ মার্চ ৮১ উপজেলায়, চতুর্থ পর্বে ২৩ মার্চ ৯১ উপজেলায় এবং পঞ্চম ধাপে ৩১ মার্চ ৭৪ উপজেলায় ভোট হয়।

ষষ্ঠ ও শেষ পর্বে অন্তত ২০ উপজেলার ভোট বাকি রয়েছে, যা জুলাই-অগাস্টের দিকে হবে বলে নির্বাচন কমিশন আভাস দিয়েছে।

চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম পর্ব প্রায় গোলযোগহীন হলেও তার পরের তিনটি পর্বে সহিংসতা ধারাবাহিকভাবে বাড়ে, সব মিলিয়ে নিহত হন সাতজন। পঞ্চম পর্বে গোলযোগ-সহিংসতা না থাকলেও অনিয়মের অভিযোগ ছিল বেশ।

এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরাই বেশিরভাগ উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলেও বিএনপি সমর্থিতরা প্রথম তিনপর্বে এগিয়ে ছিলেন। ভোটের পরিবেশ নিয়েও বড় দুই দল বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে।