৩ কোটি টাকা দিয়েছি: ইসলামী ব্যাংক

সংস্কৃতিমন্ত্রী অস্বীকার করলেও ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ‘লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত’ গাওয়ার আয়োজনে তারা ৩ কোটি টাকা দিয়েছে।

অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2014, 11:44 AM
Updated : 18 March 2014, 01:20 PM

গণজাগরণ মঞ্চ কর্তৃক চিহ্নিত ‘যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠান’ ইসলামী ব্যাংক থেকে নেয়া টাকা ফেরত দেয়া হবে বলে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু মঙ্গলবার জানানোর পরক্ষণেই অর্থ নেয়ার কথা অস্বীকার করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সরকারি ওই আয়োজনে তাদের পক্ষ থেকে ৩ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।

ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আতাউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত আয়োজনের জন্য ১৪ মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তিন কোটি টাকা অনুদানের চেক তুলে দেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মুস্তাফা আনোয়ার।”

ওই সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন বলেও জানান আতাউর।

গত ১৫ মার্চ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও পাঠানো হয়েছিল বলেও জানান তিনি।

‘লাখে কণ্ঠে সোনার বাংলা’ আয়োজনটির প্রধান উদ্যোক্তা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে সশস্ত্র বাহিনী।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানব পতাকা গড়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা নেয়ার পর লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমেও রেকর্ড গড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়।

এই আয়োজন নিয়ে গত ২ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “সত্যিকারের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানোই এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। জাতীয় চেতনার নব জাগরণে এক বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।”

ওই সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি ইনুও ছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু বেলাল মোহম্মদ শফিউল হকও।

এই আয়োজনে ইসলামী ব্যাংকের অর্থ নেয়ার বিষয়টি আলোচনায় এলে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন ওয়েসবসাইটে তা নিয়ে সমালোচনা ওঠে।

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ ইসলামী ব্যাংককে যুদ্ধাপরাধী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করে তা নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে।

এই নিয়ে আলোচনার মধ্যে ইনু মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, জামায়াতে ইসলামী ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠানের টাকায় জাতীয় সংগীত গাওয়ার কর্মসূচি হতে পারে না।

ইসলামী ব্যাংক থেকে নেয়া অর্থ ফেরত দেয়ার পক্ষেও অবস্থান জানান জাসদ সভাপতি।

তার কিছুক্ষণের মধ্যে সচিবালয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রী নূর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় সংগীত গাওয়ার কর্মসূচির জন্য ইসলামী ব্যাংক থেকে কোনো টাকা বা অনুদান নেয়া হয়নি।

না নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “গত বিশ্বকাপে ইসলামী ব্যাংক থেকে অনুদান নেয়ার কারণে বিতর্ক হয়েছিল। তাই বিতর্কে যেতে চাইনি বলে ইসলামী ব্যাংক থেকে কোনো অর্থ নেয়া হয়নি।”

তবে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইসলামী ব্যাংক জড়িত আছে জানিয়ে ওই অর্থ নেয়ার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে গণজাগরণ আন্দোলনে সংহতি জানানো আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “তারা তো (ইসলামী ব্যাংক) আর বেআইনি ব্যাংক নয়।”

অনুদানের চেক হস্তান্তরের ছবি (ইসলামী ব্যাংকের পাঠানো)

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার আয়োজনের জন্য গত ১৪ মার্চ গণভবনে বিভিন্ন টেলিকম প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি ব্যাংক এবং বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তার চেক গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) নেতারাও ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর হাতে সহায়তার চেক দেন, যাদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তাও ছিলেন।

আসাদুজ্জামান নূর জানান, স্বাধীনতা দিবসে প্রায় তিন লাখ লোক একসঙ্গে জাতীয় সংগীত গাইবে, যে আয়োজনে ৫০ কোটি টাকা খরচ হবে।

তবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পোশাক কারখানা নিজেদের অর্থে এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় মন্ত্রণালয়ের ২০/২৫ কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলে জানান তিনি।