মঞ্জুর হত্যা মামলা পুনঃতদন্তের নির্দেশ

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলায় পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। 

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2014, 12:24 PM
Updated : 15 Jan 2021, 10:24 AM

ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ খন্দকার হাসান মাহমুদ ফিরোজ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন।

তিন দশক আগের ওই হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে আগামী ২২ এপ্রিল প্রতিবেদন দিতে বলেছেন বিচারক।

এ মামলার প্রধান আসামি সাবেক সেনাশাসক ও বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।

এই আদেশের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা এই আলোচিত হত্যা মামলার রায় আরো পিছিয়ে গেল।

সব বিচারিক কার্যক্রম শেষে গত ১০ ফেব্রুয়ারি এই মামলার রায়ের দিন রাখা হলেও বিচারক বদল হওয়ায় তা আটকে যায়। ওইদিন নতুন বিচারক জানান, রায় দেয়ার আগে তিনি মামলার যুক্তিতর্ক নতুন করে শুনবেন।

আর বৃহস্পতিবার যুক্তিতর্কের নির্ধারিত দিনে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আসাদুজ্জামান খান রচি কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পুনঃতদন্তের আবেদন করেন।

এ সময় এরশাদের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম এর বিরোধিতা করে বলেন, এটি মামলাকে বিলম্বিত করার কূটকৌশলমাত্র।

দুপুরে শুনানি করে বিকালে পুনঃতদন্তের আদেশ দেন বিচারক হাসান মাহমুদ ফিরোজ।

এ মামলার পাঁচ আসামিই উচ্চ আদালতের জামিনে রয়েছেন। বাকিরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুল লতিফ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর কাজী এমদাদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামসুর রহমান শামস ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তফা কামাল উদ্দিন।

এদের মধ্যে আবদুল লতিফ ও শামসের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রমে হাই কোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে।

১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামে একদল সৈন্যের গুলিতে নিহত হন জিয়াউর রহমান। ওই ঘটনার পর পুলিশের হাতে আটক হন জেনারেল মঞ্জুর। পুলিশ হেফাজত থেকে ১ জুন চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নেয়ার পর তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এর ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন মঞ্জুরের ভাই। ওই বছরই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তখনকার সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ অভিযোগপত্র দেন এবং বিচার শুরু করে আদালত।

তবে সরকার বদল এবং দফায় দফায় রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনে মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে আসতে লেগে যায় আরো ১৮ বছর।

মামলার শুনানির সময় আত্মপক্ষ সমর্থনে এরশাদ বলেন, জেনারেল মঞ্জুরকে জীবিত অথবা মৃত ধরিয়ে দেয়ার জন্য তৎকালীন সরকার রেডিও টিভিতে ৫ লাখ টাকা ঘোষণা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তবে ওই ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।

“ধরা পড়ার পর মেজর মঞ্জুরকে  চট্টগ্রাম সেনানিবাসে আনার পথে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং পরে নিরাপত্তা প্রহরীর সঙ্গে গুলি বিনিময় হয়। একপর্যায়ে আবুল মঞ্জুর গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান।”

তখনকার স্বরাষ্ট্র সচিব মাহবুবুজ্জামান এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দিতে বলেন, তখনকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের  নির্দেশে পুলিশ আবুল মঞ্জুরকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে।

২০১২ সালের ২ অক্টোবর  নাজিমউদ্দিন রোডের বিশেষ এজলাসে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখিত বক্তব্য দাখিল করেন এরশাদ। মামলার অপর আসামি অবসরপ্রাপ্ত মেজর কাজী এমদাদুল হকও আদালতে লিখিত বক্তব্য দেন।

তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দসহ রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৮ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয় এ মামলায়। সাবেক সেনাপ্রধান আবু সালেহ মো. নাসিম এবং তৎকালীন মহানগর হাকিম আবুল হাসেমও ছিলেন সাক্ষীদের মধ্যে।