বন্দি জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর কড়াকড়ি কারাগারে

নজিরবিহীন এক ঘটনায় প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে কনস্টেবলকে খুন করে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার পর বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, যেখানে আড়াই হাজারের বেশি জেএমবি সদস্য রয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2014, 05:36 PM
Updated : 24 Feb 2014, 03:42 PM

রোববার সকালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জেএমবির তিন নেতাকে ছিনিয়ে নেয়ার পর সন্ধ্যায় কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) গোলাম হায়দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই মুহূর্তে কারাগারগুলো সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বলয়ে রয়েছে।”

দেশের মোট ৬৮টি কারাগারে আড়াই হাজারের বেশি জেএমবি সদস্য রয়েছে বলে ঊর্ধ্বতন এক কারা কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এসব আসামিদের অধিকাংশই বিস্ফোরক মামলার আসামি। কারো বিচার চলছে, কেউ দণ্ডিত হয়ে সাজা ভোগ করছেন।

ত্রিশালে যে তিনজনকে ছিনিয়ে নেয়া হয়, তাদের দুজন সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি এবং রাকিবুল হাসান মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত। অন্যজন জাহিদুল ইসলাম (বোমারু মিজান) যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। ত্রিশালে পালিয়ে যাওয়ার পর রাকিব টাঙ্গাইলে ইতোমধ্যে ধরা পড়েছেন।

তারা তিনজনই ছিলেন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। একটি মামলায় হাজিরার জন্য তাদের প্রিজন ভ্যানে করে ময়মনসিংহ নেয়া হচ্ছিল, পথে তাদের ছিনিয়ে নেয়া হয়। 

কারা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কাশিমপুর কারাগারে প্রায় এক হাজার জেএমবি সদস্য রয়েছে।

ত্রিশালের ঘটনার পর চট্টগ্রাম কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান সেখানকার জ্যেষ্ঠ কারাধ্যক্ষ ছগির মিয়া। তিনি বলেন, “ডেপুটি জেলার জাহেদুল আলমের নেতৃত্বে নিরাপত্তা রক্ষীদের পর্যবেক্ষণের জন্য সাত সদস্যদের একটি পর্যবেক্ষণ দল করা হয়েছে।”

চট্টগ্রাম কারাগারে জেএমবির ১৫ এবং হিযবুত তাহরীরের ছয় সদস্য বন্দি রয়েছে। এই কারাগারে বন্দি জেএমবি সদস্য জাবেদ ইকবাল ওরফে আবু ইয়াইয়ার বিরুদ্ধে ২২টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে ১৫টির বিচার কাজ শেষ হয়েছে। এসব মামলায় তার শতাধিক বছর জেল হয়েছে।

কারা কর্মকর্তারা জানান, গুরুত্বপূর্ণ বন্দিদের ক্ষেত্রে তারা বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করে থাকেন। কারা অভ্যন্তরে তাদের আলাদা রাখা হয় এবং তাদের চলাফেরা সার্বক্ষণিক পর‌্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এসব বন্দিদের যারা দেখা করতে আসেন তাদের আবেদনপত্রের সঙ্গে আবেদনকারী ছবিও নেয়া হয়। এরপর আবেদন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যকে দেয়া হয়। পরে তাদের উপস্থিতিতে জেএমবি সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎপ্রার্থী দেখা করতে পারেন।

চট্টগ্রামের কারাধ্যক্ষ ছগির বলেন, “জঙ্গিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের ক্ষেত্রে এমনিতেই কড়াকড়ি থাকে। ময়মনসিংহের ঘটনার পর তা আরো বাড়ানো হয়েছে।”

ত্রিশালের ঘটনার পর রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রেড এলার্ট জারি করা হয় বলে জানান সেখানকার কারাধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেন। সাজাপ্রাপ্ত শতাধিক জেএমবি সদস্য রয়েছেন ওই কারাগারে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, তাদের সতর্ক থাকতে ওপর থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আদালতে নেয়ার জন্য আসামিকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষের আর দায়িত্ব না থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে থাকে বলে জানান কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) গোলাম হায়দার।

তিনি বলেন, “আসামি পুলিশের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার পর এই ঘটনা ঘটেছে। এরপরও এই ঘটনার সঙ্গে কারাগারের কারো যোগসূত্র আছে কি না, তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি দেখবে।”

আসামি ছিনতাইয়ের এই ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি এবং পুলিশ আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই ধরনের বন্দিকে কারগারে থেকে আদালতে আনা-নেয়ার সময় আগামীতে বিশেষ নিরাপত্তা থাকবে বলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন।