মঞ্জুর হত্যা: ২৭ ফেব্রুয়ারি ফের যুক্তিতর্ক

বিচারক বদল হওয়ায় মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক ফের শুনবে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2014, 06:10 AM
Updated : 10 Feb 2014, 07:11 AM

আলোচিত এই মামলার রায় সোমবার হওয়ার কথা থাকলেও যুক্তিতর্কের নতুন তারিখ ফেলা হয়েছে ২৭ ফেব্রুয়ারি।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আসাদুজ্জামান খান রচি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নতুন বিচারক খন্দকার হাসান মোহাম্মদ ফিরোজ দায়িত্ব পাওয়ায় তিনি মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শুনতে চেয়েছেন।

যুক্তিতর্কের শুনানি অন্তত চার দিন অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।

রচি বলেন, “এর মধ্যে তিন আসামির জন্য তিন দিন এবং রাষ্ট্রপক্ষ একদিন যুক্তিতর্কের শুনানি করতে পারেন।”

এ মামলার প্রধান আসামি সাবেক সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, যিনি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত।

মামলার পাঁচ আসামিই উচ্চ আদালতের জামিনে রয়েছেন। বাকি দুই আসামি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুল লতিফ ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট কর্নেল শামসুর রহমান শামসের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রমে হাই কোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে।

সোমবার এরশাদসহ তিনজনই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। 

এর আগে যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে গত ২২ জানুয়ারি প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হোসনে আরা আক্তার রায়ের দিন ঠিক করেছিলেন।

রায়ের তারিখ ঠিক করার এক সপ্তাহ পর গত ২৯ জানুয়ারি প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক হোসনে আরার বদলির আদেশ আসে। তার জায়গায় নতুন বিচারক হিসাবে যোগ দিয়েছেন খন্দকার হাসান মাহমুদ ফিরোজ।

বিচারক পরিবর্তনের পর বিএনপি অভিযোগ করে আসছে আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বিভাগে দলীয়করণের উদ্দেশ্যে এমনটি করেছে।

অবশ্য ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আকবর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি রায় পেছানোর কোনো কৌশল নয়। মোট সাতজন বিচারককে একসঙ্গে বদলি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে হোসনে আরা আক্তারও রয়েছেন। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই।”

১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামে একদল সৈন্যের গুলিতে নিহত হন জিয়াউর রহমান। ওই ঘটনার পর পুলিশের হাতে আটক হন জেনারেল মঞ্জুর, যিনি সে সময় সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ছিলেন। পুলিশ হেফাজত থেকে ১ জুন চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নেয়ার পর তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এর ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন মঞ্জুরের ভাই। ওই বছরই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তখনকার সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ অভিযোগপত্র দেন এবং বিচার শুরু করে আদালত।

তবে সরকার বদল এবং দফায় দফায় রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনে মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে আসতে লেগে যায় আরো ১৮ বছর।

মামলার শুনানির সময় আত্মপক্ষ সমর্থনে এরশাদ বলেন, জেনারেল মঞ্জুরকে জীবিত অথবা মৃত ধরিয়ে দেয়ার জন্য তৎকালীন সরকার রেডিও টিভিতে ৫ লাখ টাকা ঘোষণা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তবে ওই ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।

“ধরা পড়ার পর মেজর মঞ্জুরকে  চট্টগ্রাম সেনানিবাসে আনার পথে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং পরে নিরাপত্তা প্রহরীর সঙ্গে গুলি বিনিময় হয়। একপর্যায়ে আবুল মঞ্জুর গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান।”

তখনকার স্বরাষ্ট্র সচিব মাহবুবুজ্জামান এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দিতে বলেন, তখনকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের  নির্দেশে পুলিশ আবুল মঞ্জুরকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে।

২০১২ সালের ২ অক্টোবর  নাজিমউদ্দিন রোডের বিশেষ এজলাসে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখিত বক্তব্য দাখিল করেন এরশাদ। মামলার অপর আসামি অবসরপ্রাপ্ত মেজর কাজী এমদাদুল হকও আদালতে লিখিত বক্তব্য দেন।

তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দসহ রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৮ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয় এ মামলায়। সাবেক সেনাপ্রধান আবু সালেহ মো. নাসিম এবং তৎকালীন মহানগর হাকিম আবুল হাসেমও ছিলেন সাক্ষীদের মধ্যে।