আলুর কেজি ১ টাকা, বিপাকে চাষীরা

আলু বিক্রির টাকা দিয়ে ইরি-বোরোর চাষ করে আসলেও এবার আলুর দাম পড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাটের কৃষকরা।

মোমেন মুনি জয়পুরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2014, 01:25 PM
Updated : 6 Feb 2014, 05:47 PM

আলুর টাকায় শুধু সারের দাম না উঠায় ঋণের জন্য ব্যাংকে ধরনা দিতে হচ্ছে কৃষকদের। আর ঋণ না মিললে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বর্তমানে প্রতি মন আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। সে হিসেবে প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ছে মাত্র ১ থেকে দেড় টাকা। আর বাজারে খুচরা হিসেবে ৫ কেজি ইউরিয়া সারের দাম ৮৫ টাকা। তাই ৮৫ কেজি আলুর বিনিময়ে মাত্র ৫ কেজি ইউরিয়া সার কিনতে হচ্ছে কৃষককে।

একাধিক কৃষক জানান, জমিতে যতো আলু হয়েছে তার পুরোটা বিক্রি করলেও শুধু সারের দামই জুটছে না। এর উপর সেচ, মজুরি ও কীটনাশকের খরচ তো রয়েছে।

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজহার আলী মণ্ডল বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জেলার কৃষকরা প্রতি বছর আলু বিক্রি করে সেই টাকায় ইরি-বোরো চাষ করে। কিন্তু এ বছর আলুর দাম খুব কম হওয়ায় রোপা চাষে বিপাকে পড়েছেন তারা।

এ বছর জেলায় ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলার কালাই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আলুর চাষ হয়।

এ উপজেলার কাদিরপুর গ্রামের সাকাম হোসেন, আনোয়ার পাশা, ইটাইল গ্রামের ইদ্রিস আলী, বাখড়া গ্রামের আব্দুস সবুর, চান মিয়াসহ এলাকার অনেক কৃষক জানান, লাভের আশায় আলু চাষ করলেও এই আলুই এখন তাদের ‘গলার কাঁটা’ হয়ে উঠেছে।

আলুর দাম না পাওয়ায় বোরো চাষের জন্য কৃষকদের ব্যাংকঋণ নিতে হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণ না পেয়ে অনেকে গরু-ছাগল বিক্রি করছেন।

পুরো জেলার কৃষকদেরই একই অবস্থা বলে জানান তারা।

জয়পুরহাট জেলা শহরের নতুনহাট পাইকারী আলু বাজারে গিয়ে দেখা যায় কৃষকদের হতাশা।

 

সদর উপজেলার শাহপুর গ্রামের কৃষক আফছের আলী, পালী গ্রামের মকলেছারসহ অনেকের মতে, গত ২৪ বছরে আলুর এতোটা পড়েনি।

গত বছরের এ সময় পাইকারি বাজারে মন প্রতি গ্রানোলা আলু ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় এবং দেশি জাতের আলু ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়। সেখানে এবার গ্রানোলা মাত্র ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং দেশি জাতের আলু  ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এভাবে চলতে থাকলে আগামী বছর থেকে শুধু নিজেদের খাওয়ার আলুই চাষ করবেন বলে জানান একাধিক কৃষক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আজহার আলী মনে করেন, জেরার তিলকপুরে অবস্থিত আলুর স্টার্চ পাউডার কারখানা চালু করা না গেলে কোনোভাবেই আলুর বাজারে ধস ঠেকানো যাবে না।