লালদীঘির গণহত্যা: মামলা ঝুলে আছে ২৬ বছর

চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার বিচার শেষ হয়নি ২৬ বছরেও।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2014, 03:09 PM
Updated : 24 Jan 2014, 03:09 PM

নানা জটিলতায় গত এক বছরে এ মামলায় একজন সাক্ষীরও সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলছেন, বিএনপি-জামায়াতের আমলে ‘সৃষ্ট জটিলতার জাল’ থেকে মুক্তি পেতে সময় লাগছে।

অবশ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রপক্ষের গাফিলতির কারণেই থমকে আছে বিচার কাজ।

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি নগরীর লালদীঘি ময়দানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। এতে কমপক্ষে ২৪ জন নিহত হন।

ওই ঘটনায় করা মামলায় অভিযোগ গঠনের পর গত ১৩ বছরে ৩৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।

এরইমধ্যে মারা গেছেন এক আসামি পুলিশ কনস্টেবল বশির উদ্দিন, মামলার বাদি আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা এবং সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি আব্দুল কাদের।

মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।

এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অশোক কুমার দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মামলার রাষ্ট্রপক্ষে ১৬৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৫ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ১১ মার্চ শুনানির পরবর্তী দিন রাখা হয়েছে।

গত এক বছরে একজনেরও সাক্ষ্যগ্রহণ না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে অশোক কুমার বলেন, “বিএনপি-জামায়াতের আমলে মামলায় অনেক জটিলতা ও ত্রুটি সৃষ্টি করা হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগছে।”

তিনি জানান, তদন্ত কর্মকর্তা মারা যাওয়ায় অভিযোগপত্রে তার সই শনাক্ত করার বিষয়ে আদালতের নির্দেশে একটি তদন্ত শেষ করতে এ বছর বেশ সময় লেগেছে।

অশোক কুমার বলেন, “আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে আর দুয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষীর জবানবন্দি নিয়ে মামলা রায় পর্যায়ে পৌঁছাবে।”

এই গণহত্যা নিয়ে ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা, প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন সাংবাদিক নিরূপম দাশগুপ্ত।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের ‘গাফিলতি ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার’ অভাবেই এ মামলার বিচার কাজ শেষ হচ্ছে না।

“স্বাধীন দেশে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালো- অথচ আজও কোনো বিচার হলো না। এতে নিহতের স্বজনরা আস্থা হারাচ্ছেন।”

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি বিকালে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের দিকে যাবার পথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহর যখন বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন অতিক্রম করছিল, ঠিক সেই সয় গুলি চালায় পুলিশ। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারান ২৪ জন নেতাকর্মী।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনের অবসানের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলাটি পুনরুজ্জীবীত হয়। আদালতের আদেশে সিআইডি মামলাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি প্রথম এবং অধিকতর তদন্ত শেষে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় অভিযোগপত্র দেয়া যাতে আসামি করা হয় আট পুলিশ সদস্যকে।

মামলার আসামিরা হলেন- চট্টগ্রামের তখনকার পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা, কোতোয়ালী অঞ্চলের পেট্রোল ইন্সপেক্টর জে সি মণ্ডল, কনস্টেবল আব্দুস সালাম, মুশফিকুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, বশির উদ্দিন, মো. আবদুল্লাহ ও মমতাজ উদ্দিন।

২০০০ সালের ৯ মে আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ইন্সপেক্টর জে সি মণ্ডল ঘটনার পর থেকেই পলাতক।

ওইদিনের ঘটনায় নিহতরা হলেন- মো. হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবার্ট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া, মো. কাসেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ ও শাহাদাত।

এ ঘটনায় শহীদদের স্মরণে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রবেশ পথে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। শুক্রবার ওই স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় কয়েকটি সংগঠন।