গোপালীরাও কপালী হয়: প্রধানমন্ত্রী

গোপালগঞ্জের নাম বদলে ফেলার খালেদা জিয়ার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, বাংলাদেশে জন্ম না হওয়ায় তিনি এমনটি বলেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2014, 12:39 PM
Updated : 2 Jan 2014, 04:52 PM

বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ঢাকাস্থ গোপালগঞ্জ জেলা সমিতির অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উনি (খালেদা জিয়া) বলতেই পারেন। কারণ উনার জন্ম বাংলাদেশের মাটিতে না। উনার জন্ম ভারতের শিলিগুঁড়িতে।

“যার জন্ম এদেশে না, তার এদেশের মাটির প্রতি টান থাকবে না। জন্ম নিয়েছেন ভারতে আর অন্তরাত্মা রয়ে গেছে পাকিস্তানে।”

বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার ভালো না লাগলে ‘পেয়ারা’ পাকিস্তানে চলে যেতে পারেন পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উনি মনে মনে বলেন ইয়ে মেরা জান পেয়ারা পাকিস্তান।”

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, মানুষ ভালো থাকবে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন উনি গ্রহণ করতে পারেন না। পরাজিত শক্তির দোসররা বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তা সহ্য করতে পারে না।”

গত রোববার নয়া পল্টনে পূর্বঘোষিত সমাবেশে যেতে না পেরে ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসায় নিরাপত্তাকর্মীদের তিরস্কার করেন।

সে সময় তিনি এক নারী নিরাপত্তাকর্মীকে উদ্দেশ করে বলেন, “দেশ কোথায়, গোপালী? গোপালগঞ্জ জেলার নামই বদলিয়ে যাবে বুঝছেন, গোপালগঞ্জ আর থাকবে না।”

তার ওই মন্তব্যের পর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। কোথাও কোথাও খালেদা জিয়ার কুশপুতুল পোড়ানো হয়।

শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জে জন্ম নিয়ে নিজের গর্ব প্রকাশ করে বলেন, “আমার বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায়। উনি যতই গোপালী বলুক, গোপালীরাও তো কপালী হয়। শুধু গোপালগঞ্জ নয়, সব এলকায় সুষমভাবে উন্নয়নে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে।”

তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের নাম শুনলেই উনার গায়ে জ্বালা ধরে। যে বিশ্রী ভাষায় উনি কথা বলেছেন সেটা কোনো ভদ্র মানুষ বলতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করেছি।…তিনি জনগণের স্বার্থে নিঃস্বার্থভাবে ত্যাগ-কষ্ট করে গেছেন। সব মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্ধুব্ধ করেছেন, তার বাড়ি গোপালগঞ্জ। পঁচাত্তরে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে।

“আজকে যিনি গোপালগঞ্জবাসীদের নিয়ে তিক্ত কথা বলেন তার স্মামী একজন মেজর ছিলেন। বঙ্গবন্ধুই তাকে প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল করেছেন। তিনিই হত্যা, ক্যু করে ক্ষমতা দখল করেন।”

“মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতাবিরোধীদের জেল থেকে মুক্তি দিয়ে তার স্মামী মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। তার মুখ থেকে এ ধরনের উক্তি আসবে এটাই স্বাভাবিক।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিএফআই, এনএসআই, পিএসও তিন জনই নোয়াখালীর। আমি গোপালগঞ্জের লোক বাছতে চাইনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও অন্য জেলার লোক আছে। কেউ নরসিংদীর, কেউ সিলেট, কেউ ঢাকা, কেউ বা ফরিদপুরের। অর্থাৎ আমি বাংলাদেশকে বাংলাদেশ হিসাবেই দেখি।

দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যা যা করার তা বর্তমান সরকার করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নীতি ও আদর্শ নিয়ে কাজ করেছি। মুষ্টিমেয় ধনী সমাজ সৃষ্টি করিনি। সার্বিক উন্নয়ন করে যাচ্ছি।

অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “দেশের জনগণের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। পিতা-মাতা, ভাই-বোন সবাইকে হারিয়ে এদেশের মানুষের কাছে আশ্রয় পেয়েছি। তাদের জন্য কিছু করে যাওয়াই আমার লক্ষ্য।”

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট চান।

ক্ষমা না চাইলে লংমার্চ

গোপালগঞ্জ নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের জন্য খালেদা জিয়াকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান ঢাকাস্থ গোপালগঞ্জ সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন।

তিনি বলেন, “আমরা চাই উনি ক্ষমা চাইবেন, নইলে আমরা উনার বাড়ির দিকে লংমার্চ করব।”

খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে অর্থনীতিবীদ আবুল বারাকাত তার পক্ষ থেকে গোপালগঞ্জবাসীর কাছে ক্ষমা চান।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া গোপালগঞ্জবাসীদের গোপালী অ্যাখ্যায়িত করেছেন। এটি তার মানসিক বৈকল্য, সাংস্কৃতিক দৈন্য, রাজনৈতিক বিকলঙ্গতার বড় পরিচয়।

“আমি গোপালগঞ্জবাসী নই। তবে কাছাকাছি কুষ্টিয়ায় বাড়ি। গোপালগঞ্জবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমি জানি তিনি তা চাইবেন না। যেহেতু আমি গোপালগঞ্জের নাগরিক নই, সমাজের একজন ব্যক্তি এজন্য আমি তার হয়ে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইলাম।”

তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত গোপালগঞ্জ এলাকার লোকজন, ‘মানি না, মানি না…চলবে না, চলবে না’ বলে চিৎকার করে খালেদা জিয়াকেই ক্ষমা চাইতে হবে বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

এর পরে আবুল বরাকাত বলেন, “খালেদা জিয়ার হাতে জাতীয় পতাকা, বুকে, মনে, মননে, মানসিকতায় পাকসার জমিন সাদবাদ।

দেশ পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘সফল’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডও তুলে ধরেন এই অর্থনীতিবীদ।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার লক্ষমাত্রার চেয়ে ‘বেশি’ অর্জন করেছে দাবি করে আবুল বারাকাত বলেন, “আমি মনে করি বাংলাদেশে সব থেকে বড় অর্থনীতিবীদ প্রধানমন্ত্রী।”

গত দুই মাসে এক লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমি শুনেছি ১২৫টি সংগঠন এক সাথে হয়ে ১৯৭১ নামে আরেকটি অপারেশন চালানোর চেষ্টা করছে।”

এফবিসিসিআই’র সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, গোপালগঞ্জ নিয়ে খালেদা জিয়ার এত হিংসা, জ্বালা হতো না যদি বঙ্গবন্ধুর মতো মানুষ ওখানে জন্ম না নিতেন। তবে তার ওই হিংসা আমাদের জন্য অহংকার।

“আল্লাহ ছাড়া গোপালগঞ্জকে কেউ বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না। চিন্তা-ভাবনা করে গোপালগঞ্জের নাম বলতে হবে,” বলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম।

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পাঁচ বছর উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন শেখ কবির।