শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শঙ্কাচাপা আনন্দ

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিকে সামনে রেখে আগের বছরগুলোতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করা হলেও আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর আনন্দের মাঝেও শঙ্কায় পালিত হচ্ছে এবারের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2013, 06:09 PM
Updated : 13 Dec 2013, 07:14 PM

১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের মেধাবী সন্তানদের এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

বদর নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার অপরাধযজ্ঞের দীর্ঘ ৪২ বছর পর স্বাধীনতাযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার জন্য প্রথম কারো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হল। তবে এই রায় কার্যকরের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে একাত্তরে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন। যা সাধারণ মানুষের মনে জন্ম দিয়েছে শঙ্কা আর আতঙ্ক।

অনেক মানবতাবিরোধী অপরাধীর মধ্যে একজন ছিলেন কাদের মোল্লা। কবি মেহেরুন্নেসাসহ ঢাকার মিরপুর এবং কেরাণীগঞ্জে গণহত্যার সংগঠিত হয়েছিল জামায়াতে ইসলামীর এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের নির্দেশে।

বলা হয়, পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী এ নিধনের কাজটি করে, যার উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর যেন বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে আর দাঁড়াতে না পারে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দুদিন আগে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়, যাতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সদস্যরা।

পরে শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শ্রদ্ধায় জাতির এই সন্তানদের স্মরণ করেছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, “জাতির বিবেক হিসেবে খ্যাত আমাদের বুদ্ধিজীবীরা মহান মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য, বিজয়ের প্রাক্কালে হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এদেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বহু গুণিজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতিকে মেধাহীন করাই ছিলো তাদের হীন উদ্দেশ্য।”

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন হিসাবে আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশুন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে নামে।”

মানবতাবিরোধীদের বিচারের রায় বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, “এই কুখ্যাত মানবতাবিরোধীদের যারা রক্ষার চেষ্টা করছে তাদেরও একদিন বিচার হবে। এসব রায় বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পাবে। দেশ কলঙ্কমুক্ত হবে।”

প্রধানমন্ত্রী দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিককে একাত্তরের ঘাতক, মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতচক্রের সকল ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

দিবসটি উপলক্ষে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, “শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে শাহাদৎ বরণকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।”

বিরোধীদলীয় নেতা ১৪ ডিসেম্বরকে একটি বেদনাময় দিন হিসাবে উল্লেখ করে তার বাণীতে বলেন, “বাংলাদেশকে মেধা মননে পঙ্গু করার হীন উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার ঊষালগ্নে এ দিনে হানাদার বাহিনীর দোসররা দেশের প্রথিতযশা শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক বিজ্ঞানীসহ বিশিষ্ট বুদ্ধজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করোছিলো। ওরা ভেবেছিলো জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করলেই এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব দুর্বল হয়ে পড়বে এবং উন্নয়ন অগ্রগতি রুদ্ধ করে দেয়া যাবে। কিন্তু তাদের সে লক্ষ্য ব্যর্থ হয়েছে।”

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শনিবার সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতি এবং পরে সকাল ৭টা পাঁচ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দেবেন।

এরপর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হবে।

দিবসটি উদযাপনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

সূর্যোদয় ক্ষণে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হবে। এরপর, সকাল ৭টার পর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য, সাড়ে ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য এবং সকাল ৮টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে।

বিকালে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন আলোচনা সভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ।