কাদের মোল্লার ‘শেষ’ কথা

মানবতাবিরোধী অপরাধে আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে চার দশকেরও বেশি সময় পর বিচার পেয়েছে একাত্তরে স্বজনহারা পরিবার।

কামাল হোসেন তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2013, 12:51 PM
Updated : 13 Dec 2013, 04:41 PM

মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে গিয়ে নিজ দেশের মানুষকে হত্যা, নির্যাতনের পর স্বাধীন দেশে পাঁচ বছরের মতো রাজনীতির মাঠে দেখা না গেলেও সেনাশাসকদের ছত্রচ্ছায়ায় আবারো রাজনীতিতে আসেন এই কাদের। এক সময় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে ওঠেন তিনি।

যুদ্ধাপরাধে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে সেই কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে কৌতুহলও একটু বেশিই দেখা যায়।

একাত্তরে নৃশংসতার জন্য  মিরপুরের কসাই নামে কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর এই সদস্যকে বৃহস্পতিবার রাতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় সেখানে দায়িত্বরত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আইজি (প্রিজন) মাইন উদ্দিন খন্দকার।

শুক্রবার এক আলাপচারিতায় এই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের শেষ মুহূর্তের কিছু বর্ণনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে তুলে ধরেন তিনি।

এই কর্মকর্তা বলেন, কাদের মোল্লার কনডেম সেল থেকে ফাঁসি মঞ্চের দূরত্ব পাঁচশ’ মিটারের মতো। তার দুই হাত পিছনে নিয়ে হাতকড়া পরানোর পর দুই জন জল্লাদ দুদিকে ধরে এবং প্রধান জল্লাদ শাহজাহান পিছন পিছন হেঁটে তাকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে আসেন।

“মঞ্চে আনতে পাঁচ থেকে ছয় মিনিট সময় লাগে। ঠিক ঘড়ির কাঁটায় যখন ১০টা বাজে কাদের মোল্লাকে ফাঁসির মঞ্চে উঠানো হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে যম টুপি পরানো হয়।

“ফাঁসির মঞ্চে উঠার পর তিনি বলেন, জেল সুপার আমার একটা বক্তব্য আছে। কিন্তু ততোক্ষণেই সময় হয়ে যায়, ‘২২০১’ অর্থাৎ নির্ধারিত সময় রাত ১০টা ১ মিনিট।”

মাইন উদ্দিন জানান, কনডেম সেল থেকে ফাঁসির মঞ্চে আসা পর্যন্ত পুরো পথ হেঁটে আসতে কোন ধরনের পিছু টান দেননি কাদের মোল্লা।

তাকে রাত ১০টা ১৬ মিনিটে ফাঁসির দড়ি থেকে নামানো হয়। পরে সিভিল সার্জন আব্দুল মালেক মৃধা তার ময়নাতদন্ত করেন।

আধা-ঘণ্টা পর অর্থাৎ রাত পৌনে ১১টার দিকে কাদের মোল্লার মৃতদেহ কালো রঙের একটি অ্যাম্বুলেন্সে বের করা হয়।

এভাবেই দীর্ঘ ৪২ বছর অপেক্ষা শেষে বিচারের পর সাজা কার্যকরের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার জন্য প্রথম কারো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।

দুই দিন আগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘোষণা দিয়েও আদালতের এক আদেশে তা আটকে যাওয়ার পর জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন কাদের মোল্লাকে না ঝোলানোর আহ্বান জানিয়ে আসছিল।

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রিভিউ আবেদন খারিজের পর আগাম কোনো ঘোষণা সরকারের পক্ষ থেকে না এলেও কারাগারের বাইরে প্রস্তুতি দেখে ইঙ্গিত মেলে, ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।  

সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা ৬৫ বছর বয়সী এই জামায়াত নেতার সঙ্গে দেখা করে আসার পর কারাগারে মৌলভী, সিভিল সার্জন, ঢাকার জেলারের প্রবেশ এবং বাইরে নিরাপত্তা বেষ্টনী গত মঙ্গলবারের আবহ তৈরি করে, যেদিন সব সব প্রস্তুতি নিয়েও দণ্ড কার্যকর শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে যায়।