‘শহীদের আত্মা আজ শান্তি পাবে’

আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের পর শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে উল্লাসে ফেটে পড়েন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ।

নিজস্ব প্রতিবেদকও চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2013, 05:15 PM
Updated : 13 Dec 2013, 00:53 AM

বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে মিরপুরের কসাইখ্যাত এই আল বদর নেতার ফাঁসি কার্যকরের পরেই শাহবাগে আনন্দ-উল্লাস শুরু করেন তারা।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এই শাহবাগে আন্দোলন শুরু হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে আপিলের সুযোগ তৈরি হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাণ্ডের আদেশ হলেও পরে আপিলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

ফাঁসি কার্যকরের খবর পাওয়ার পরেই গণজাগরণ মঞ্চ থেকে একটি মিছিল বের হয়।

ওই মিছিল থেকে হাজারো মানুষ ‘জয় হলোরে জয় হলো, শাহবাগের জয় হলো’; ‘জয় হলোরে জয় হলো, মুক্তিযুদ্ধের জয় হলো’; ‘আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা শাহবাগে আয়, কাদের মোল্লার ফাঁসি হলো সোনার বাংলায়’- এই স্লোগান দিতে থাকে।

ফাঁসি কার্যকরের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শাহবাগে জড়ো হয়।

কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্করের পর গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এই রায় কার্যকরের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হল।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাঙালিরা বিশ্বের দরবারে প্রমাণ করল তারা যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয় দেয় না, বিচার করে।”

এই মামলার রায় কার্যকরের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে উল্লেখ করে ইমরান বলেন, “এখন বাকি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আমরা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলকে আহ্বান জানাচ্ছি।”

শুক্রবার বিকাল ৩টায় শাহবাগে সমাবেশ হবে বলেও জানান ইমরান।

রায় কারর্যকরের পরপর শাহবাগের সারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উচ্ছ্বাসের প্রকাশের খবর পাওয়া গেছে।

যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে শান্তির যাত্রা শুরু হলো বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে অবস্থান করা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন।

১৬ বছর বয়সে চট্রগ্রামে মেজর রফিকুল ইসলামের অধীনে যুদ্ধ করেন এ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা। তার পায়ে এখনো গুলির চিহ্ন রয়েছে।

রায় কার্যকর হওয়ার পরপরই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। তাদের আত্মা দীর্ঘদিন ধরে অতৃপ্ত ছিল, আজ তারা শান্তি পাবেন।”

“আজ একটি শান্তির যাত্রা শুরু হলো। জামায়াত-শিবির বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর যে চেষ্টা করছে, তা থমকে গেছে।”

কাদের মোল্লার মতো অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদেরও রায় কার্যকর দেখার প্রত্যাশা জানিয়ে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “তাদের রায় কার্যকর হলে জামাত-শিবির এদেশ থেকে ভ্যানিশ হয়ে যাবে।”

শহীদ ড. আলীম চৌধুরীর মেয়ে নুজহাত চৌধুরী আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ডিসেম্বর মাসে আমরা বিজয় অর্জন করেছিলাম, এটি আরেকটি বিজয়।”

“অদ্ভুত রকমের একটি ভালো লাগা কাজ করছে, এ ভালো লাগা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়,” বলেন তিনি।

আরেক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন মোহাম্মদ জালাল (বিচ্ছু জালাল) বলেন, “স্বাধীনতার পরেও দীর্ঘদিন মিরপুরের এ কসাইকে হত্যার জন্য খুঁজেছি। ব্যর্থ হয়েছি। আজ সরকারকে অভিনন্দন।”

কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে ‘নতুন বিজয়’র দিন সূচিত হয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের অপূর্ণতা ‘পূর্ণতা’ পেয়েছে বলে মনে করেন শহীদজায়া মুশতারী শফী।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “আজ নতুন বিজয়ের দিন। ৪২ বছর পর নতুন বিজয় পেলাম। আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বামী, ভাই, ভগ্নিপতিকে হারিয়েছি। সারাদেশে আরও ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের আত্মা শান্তি পেল এ ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে।’’

শহীদ জননী জাহানারা ইমামকেও স্মরণ করেন তার আন্দোলনের সহকর্মী মুশতারী শফী।

মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক রইসুল হক বাহার বলেন, “অনেক বাধা-বিপত্তি, আইনি জটিলতা, আইনি অপব্যাখ্যা ও প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত যে রায় কার্যকর হল সেটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য।’’

গণজাগরণ মঞ্চ, চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী শরীফ চৌহান বলেন, “৪২ বছর পর বাঙালি জাতি কলঙ্ক মোচনের প্রথম সোপান পার করল আজ। যেদিন সব যুদ্ধাপরাধীর শাস্তি কার্যকর হবে সেদিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পূর্ণতা পাবে।