দেখা করে এলেন কাদের মোল্লার স্ত্রী

কারাগারে স্বামীর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার স্ত্রী সানোয়ারা জাহান।

রিয়াজুল বাশারকামাল তালুকদার ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2013, 02:07 PM
Updated : 10 Dec 2013, 06:48 PM

মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টার দিকে তিনিসহ এই জামায়াত নেতার আত্মীয়-স্বজনদের কারাগারে ঢোকার আধা ঘণ্টা আগেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু জানান, রাতের মধ্যেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।

তবে শেষ পর্যন্ত কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড মঙ্গলবার রাতে কার্যকর হয়নি।  আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদেশে তা বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।

ঢাকার জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ফরমান আলী সাংবাদিকদের জানান, কাদের মোল্লার পরিবারের ২৩ সদস্য দেখা করতে ঢোকেন। এর মধ্যে ছেলে, চার মেয়ে, তাদের জামাতা, কাদের মোল্লার ভগ্নিপতিও ছিলেন।

রাত পৌনে ৯টার দিকে তারা সবাই কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। একাত্তরে খুন-ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কাদের মোল্লার চার মেয়েকে এই সময় কাঁদতে দেখা যায়।

বিমর্ষ অবস্থায় বেরিয়ে আসার সময় কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল সাংবাদিকদের বলেন, “এটা একটি পলিটিক্যাল কিলিং।

“জেল কোড এখানে মানা হয়নি। উনি এখনো রায়ের পূর্ণাঙ্গ কোনো কপি পাননি। উনার প্রতি অবিচার করা হয়েছে।”

কাদের মোল্লা কিছু বলেছেন কি না- জানতে চাইলে ছেলে বলেন, “তিনি শান্ত থাকতে বলেছেন, উনার জন্য দোয়া করতে বলেছেন।”

কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা জারির পর সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনেও কাদের মোল্লার স্ত্রী বলেছিলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তার স্বামীকে ফাঁসিতে ঝোলানো হচ্ছে।

মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নিয়ে আলোচনার মধ্যে সন্ধ্যায় কারা কর্তৃপক্ষ চিঠি পাঠায় কাদের মোল্লার স্ত্রীর কাছে।

ওই চিঠিতে রাত ৮টার মধ্যে কারাগারে গিয়ে জামায়াত নেতার সঙ্গে দেখা করতে তার পরিবারকে বলা হয়।

হাসান জামিল চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “পরিবারের নিকট আত্মীয়দের খবর দেয়া হয়েছে। আমরা দেখা করতে যাচ্ছি।”

চিঠিতে সানোয়ারা জাহানকে বলা হয়- “আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আপনার স্বামী জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা, পিতা সানাউল্লাহ মোল্লা, মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া বন্দি হিসেবে অত্র কারাগারে অন্তরীণ। আপনি ও আপনারার নিকট আত্মীয়-স্বজনকে জরুরি ভিত্তিতে অদ্য ৮ ঘটিকার মধ্যে আপনার স্বামীর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।” 

এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে একটি মাইক্রোবাস এবং একটি জিপে করে কারাফটকে উপস্থিত হন কাদের মোল্লার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা।

কারাগারের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। প্রায় তিন শতাধিক র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল দেখা যাচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার আবিদা সুলতানা বলেন, “নিরাপত্তার বন্দোবস্ত যথেষ্ট রয়েছে।”

কারাগারের সামনে নাজিমউদ্দিন সড়কে সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সাজার রায় দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় শাহবাগে গড়ে ওঠা আন্দোলন থেকে এই ‍যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবি ওঠে।

এরপর আপিলের রায়ে সর্বোচ্চ আদালত এই জামায়াত নেতাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়। গত বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রোববার ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে।

এরপর শুরু হয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি। কাদের মোল্লা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে রাজি হননি বলে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন।