‘প্রাথমিক সমাপনীর প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত’

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার দুটি বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মিললেও ওইসব পরীক্ষা বাতিল হচ্ছে না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2013, 12:19 PM
Updated : 8 Dec 2013, 12:19 PM

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এস এম আশরাফুল ইসলাম রোববার বিডিনিউজ টোয়েনিন্টফোর ডটকমকে এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “এবারের প্রাথমিক সমাপনীর বাংলার বিষয়ের ৫৩ শতাংশ এবং ইংরেজির ৮০ শতাংশ প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণ মিলেছে। তবে পরীক্ষা বাতিল করা হচ্ছে না। শিশুদের পানিসমেন্ট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।”

ফাইল ছবি

প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ তদন্তে গত ২৩ নভেম্বর আশরাফুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এই কমিটি রোববার মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

আশরাফুল বলেন, “প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কিছু লোক জড়িত রয়েছে। আমরা তাদের সনাক্তের চেষ্টা করেছি। অবশ্যই অ্যাকশন নেব।”

ফাঁস হওয়া ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্ন প্রণেতা এবং প্রুফ রিডার একই ব্যক্তি জানিয়ে তিনি বলেন, “ওই লোক মংমনসিংহ এলাকার একটি কোচিং সেন্টারের সঙ্গেও জড়িত।”

ওই কোচিং সেন্টারের সঙ্গে ন্যাশনাল একাডেমি ফর প্রাইমারি এডুকেশনের (ন্যাপ) সংযোগ আছে বলে তদন্তে ওঠে এসেছে বলে জানান এই অতিরিক্ত সচিব।

“ফাঁস হওয়া প্রশ্নের প্রুফ রিডিং যিনি করেছেন তার নাম অন্য একজন প্রস্তাব করেছেন। আমরা এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখেছি।”

গত ২৫ নভেম্বর সর্বদলীয় সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ওইদিন শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, “প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তা অস্বীকার করছি না। হয়তো বা সমীতি জায়গায় প্রকাশ হয়েছে। সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে খবর নেয়া হয়েছে।”

“তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা বিশ্লেষণ করে বোঝা যাবে কারা ক্ষতিগ্রস্ত বা লাভবান হলো। দুর্ঘটনার জন্য তো মাশুল দিতে হবে। কীভাবে ক্ষতি পোষাণো যাবে সেটাও দেখা হবে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইনে আশরাফুল বলেন, প্রাথমিক সমাপনীর উত্তরপত্র উপজেলাওয়ারি মূল্যায়ন করা হয় এবং উপজেলাওয়ারিই বৃত্তি দেয়া হয়।

আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বৃত্তির জন্য আলাদা পরীক্ষা নেয়া হলেও ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ভিত্তিতেই বৃত্তি দেয়া হচ্ছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়নে ‘আমুল’ পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান আশরাফুল।

তিনি বলেন, বিজি প্রেসে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার অবস্থা ভালো না। সিসি ক্যামেরার সংখ্যাও অনেক কম। বিষয়গুলো দেখতে হবে।

এছাড়া এসব সিসি টিভিতে ধারণকৃত ফুটেজের মানও ভালো না জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, “বিজি প্রেসের সিটি টিভিগুলো মুভিং। মেশিনটি যখন একদিকে ঘুরে যায় তখন অন্যদিনের দৃশ্য রেকর্ড হয় না।”

“ঘটনার দিনের আসল ফুটেজই আমরা পাইনি।”

বিজি প্রেসে প্রবেশের সময় আর্চওয়েগুলো ইলেকট্রনিক ডিভাইস সনাক্ত করে না জানিয়ে আশরাফুল বলেন, ফলে মোবাইল, পেনড্রাইভসহ অন্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ওই মেশিনে ধরা পড়ে না।

বিজি প্রেসে কাগজ সনাক্ত করার মেশিন নেই জানিয়ে আশরাফুল বলেন, “প্রশ্ন কম্পোজ করার ব্যবস্থাও ঠিক নেই। এখানো নতুন কোনো পদ্ধতি (সফটওয়ার) ব্যবহার করা যায় কি না তা দেখতে হবে।”

গত ২০ থেকে ২৮ নভেম্বর পর্ন্ত প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও বিরোধী দলের হরতাল ও অবরোধের কারণে গত ৬ ডিসেম্বর ওই পরীক্ষা শেষ হয়।

দেশের ছয় হাজার ৫৭৪টি কেন্দ্রে ২৯ লাখ ৫০ হাজার ১৯৩ জন শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেয়।

এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়।

প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে।