রোববার এ রায়ের পর দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা এই রায়ের জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। এই রায়ে প্রমাণ হয়েছে, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটি মহল বিশেষের বিভিন্ন অভিযোগ ছিলো ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’’
ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোতাহার হোসেন রোববার দুপুরে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
ঘুষ হিসাবে আদায়ের পর ২০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে দুদকের এই মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেককে বেকসুর খালাস দেয়া হলেও তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে সাত বছর কারাদণ্ড এবং ৪০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, একটি মহল ‘সুপরিকল্পিতভাবে’ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির নানা অভিযোগ তুলেছে। বর্তমান সরকারও তারেক রহমানসহ জিয়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতির নানা অভিযোগ’ করেছে।
“এই রায়ের ফলে এটা প্রমাণিত হয়েছে, ওইসব অভিযোগ ও মামলাগুলে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা বিশ্বাস করি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যতগুলো অভিযোগ ও মামলা করা হয়েছে, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বানোয়াট।”
দলের মুখপাত্র ফখরুল অভিযোগ করেন, শুধু রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই তারেকসহ জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে হেয় প্রতিপন্ন করতে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা করা হয়েছে।
চলমান রাজনৈতিক সংকটের উপর রায়ে প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “এই রায়ের সঙ্গে চলমান সংকটের কোনো সম্পর্ক নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত নির্দলীয় সরকারের বিধান সংবিধানে সংযোজিত না হবে ততোক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’’
আগের দিন শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছিলেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তার দল আন্তরিক। তবে আলোচনা হতে হবে ‘কেবল নির্বাচনকালীন সরকার’ নিয়ে।
লন্ডনে চিকিৎসাধীন তারেক কবে দেশে ফিরবেন তা জানতে চাইলে দলের মুখপাত্র বলেন, “তারেক সাহেব অসুস্থ বলে তিনি লন্ডনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সুস্থ হলে তার চিকিৎসকরা যখনই দেশে ফেরার পরামর্শ দেবেন, তখনই তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন।”
এর আগে নয়া পল্টনে কড়া পুলিশি পাহারার মধ্যে বিএনপি কার্যালয়ে রায়ের খবর পৌঁছানোর পর অবরুদ্ধ কার্যালয়ের অফিসকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়।
সেখানে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও বলেন, তারেকের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলাই ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ তা এই রায়ে প্রমাণিত হয়েছে।
রায়ের পর বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে আনন্দ মিছিল করেন এবং মিষ্টি বিতরণ করেন।
ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তারেকের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা হলেও এই প্রথম কোনো মামলার নিষ্পত্তি হলো।
জরুরি অবস্থা জারির পর ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেককে গ্রেপ্তার করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পরের বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যান।
স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তখন থেকে সেখানেই রয়েছেন তারেক। সম্প্রতি সেখানে দলীয় কয়েকটি অনুষ্ঠানেও তাকে অংশ নিতে দেখা গেছে।