রাজধানীর হাতির ঝিলে এই আলোক উৎসব ক্ষণিকের জন্য মোহাবিষ্ট করে রেখেছিল তাদের, যারা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জড়ো হয়েছিলেন রাজধানীর এই বিনোদন কেন্দ্রে।
“এত সুন্দর! পুরো আকাশে যেন আগুন লেগে গেলো। ভালো লাগার এ অনুভূতি কোনো ভাষাতেই প্রকাশ করা সম্ভব নয়,” বলে উঠলেন ব্যাংক কর্মকর্তা ফার্জিয়া মার্জান।
গুলশানের আড়ং প্রান্ত দিয়ে হাতিরঝিলে ঢোকার মুখের একটু সামনে দাঁড়িয়ে আলোর উৎসব দেখার সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন তিনি।
১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ৩৮ শতাংশ মানুষ এখনো বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে থাকলেও ১০ হাজার মেগাওয়াটের উৎপাদন ক্ষমতা অর্জনকে বড় অর্জন বলেই মনে করছে সরকার।
আর তাই এই অর্জন উদযাপন ঘটা করে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মূল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “উন্নয়নের মাইলফলক হল বিদ্যুৎ। অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। তারপরও আমরা ধৈর্য ধরে কাজ করেছি।”
সেখানে বসে শেখ হাসিনা জাতীয় বিদ্যুৎ সপ্তাহ এবং আলোর উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আলোয় ঝলমল করে ওঠে হাতিরঝিল এলাকা। লাল, সবুজ, সোনালি, রুপালি আতশবাজির সঙ্গে লেজার শো আকাশকে করে তোলে রঙিন।
এক সময় হাতিরঝিলের সব বাতি নিভে যায়, সেই অন্ধকার জানান দেয় আলোর উৎসবের আর বেশি বাকি নেই।
প্রতীক্ষার প্রহর গোনা মানুষগুলো সন্ধ্যা ৭টা ২৭ মিনিটে ফেটে পড়ে উল্লাসে, যখন শুরু হয় আতশবাজি, এরপর লেজার শো। সব মিলিয়ে ১৩ মিনিট সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে এই প্রদর্শনী।
পুরো সময়টাজুড়ে জ্বলে ছিল ‘১০০০০’ লেখা একটি প্রতিকৃতি। সময়ের সাথে সাথে রং বদলাচ্ছিল তা।
বড়দের পাশাপাশি অনেকেই নিজের শিশু সন্তানদের নিয়ে যোগ দেন এই উৎসবে। বাবা আরিফুর রহমানের হাত ধরে থাকা তিন বছরের মৌমিতা বলল, “ভালো লেগেছ।”
আলোয় রাঙা আকাশ ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত সানজিদা পারভিন বলেন, “এত সুন্দর অনুষ্ঠান তো আর সব সময় হয় না।
“আমি মনে করি সরকার অনেক সুন্দর একটি উদ্যোগ দিয়েছে। এর মাধ্যমে আমরাও আমাদের অগ্রগতি সম্বন্ধে জানতে পারলাম।”
রাজনৈতিক সঙ্কটের আশঙ্কার মধ্যে যখন দেশ, তখন সানজিদার আশা, ভবিষ্যতে যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, অগ্রগতির ধারা যেন বজায় থাকে।
গুলশানে অফিস শেষ করে সহকর্মীদের সঙ্গে উৎসবে যোগ দিতে আসা সফিকুল বারীর কণ্ঠেও একই সুর, “আশা করি ভবিষ্যতেও এ ধারা চলতে থাকবে।”
সরকারের পৌনে ৫ বছরের মধ্যে তা ১০ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে বলে দাবি করছেন তারা। এসময়ে বিদ্যুতের উৎপাদন তার আগের ৫০ বছরের সমান বলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে, ২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দেশে স্থাপিত ৮৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ৯৭১৩ মেগাওয়াট। এর সঙ্গে ভারত থেকে আমদানি করা ৫০০ মেগাওয়াট যুক্ত করে দাঁড়িয়েছে ১০,২১৩ মেগাওয়াট।
তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর পদ্ধতি হিসেবে দ্রুত ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর জোর দেয়ার নেতিবাচক দিক নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।
সেই সমালোচনার কথা আলোক উৎসবে উদ্বোধনের সময়ও মনে করিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে থাকা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বললেন, “কুইক রেন্টাল না থাকলে উন্নয়ন এ জায়গায় পৌছাতে পারত না।”