নির্বাচনকালীন সময়-- অর্থাৎ যে সময়টিতে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োজ্য হবে-- তার নতুন সংজ্ঞা আনছে নির্বাচন কমিশন।
Published : 28 Oct 2013, 07:52 PM
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সংবিধান নির্ধারিত ৯০ দিনের গণনা শুরু হয়েছে গত রোববার থেকে। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, এই ৯০ দিনের মধ্যেই ইসিকে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে বলে এ সময়কে বিবেচনা করতে হবে ‘নির্বাচনকালীন সময়’ হিসেবে।
ইসি নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধন করে ‘তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশ’ পর্যন্ত সময়কে ‘নির্বাচনকালীন’ সময় হিসাবে সংজ্ঞায়িত করতে চাইছে।
বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ‘নির্বাচনকালীন সময়ে’ মন্ত্রী-সাংসদরা কে কতোটা সরকারি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন- তাও নির্ধারণ করা হচ্ছে নতুন করে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য এই ‘আচরণবিধি’ সংশোধনের কাজ তারা দুয়েকদিনের মধ্যেই শেষ করবেন।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, খসড়া আচরণবিধিতে ‘নির্বাচনকালীন সময়’-এর সংজ্ঞা তারা নতুন করে নির্ধারণ করছেন ওই সময়ে ‘ইসির নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার স্বার্থেই’।
শাহনেওয়াজ বলেন, “ক্ষণ গণনা শুরু হলেও এখন সংসদ বহাল রয়েছে। মূল নির্বাচনকালীন সময় বলতে আচরণবিধির সংজ্ঞায় তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ পর্যন্ত সময়কে নির্দিষ্ট করা হবে।”
এ বিষয়ে ইসির পরিকল্পনা শিগগিরই কমিশন সভায় আলোচনা করে খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে মো. শাহনেওয়াজ জানান।
“সুবিধাজনক সময়ে আমরা তফসিল ঘোষণা করব। এ সময় সবার জন্যে সমান সুযোগ তৈরির ব্যবস্থাও বিধিতে থাকবে।”
বাংলাদেশে গত কয়েকটি সংসদ নির্বাচন হয়েছে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সে অনুযায়ী বিদ্যমান আচরণবিধিতে [ধারা ২] সাধারণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংসদ ভেঙে যাওয়ার বা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ পর্যন্ত সময়কে ‘নির্বাচনকালীন’ সময় ধরা হয়েছে।
কিন্তু সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর ‘নির্বাচনকালীন’ সময়ের এই বাধ্যবাধকতার বিষয়টি চলে এসেছে সংসদের মেয়াদপূর্তির আগের ৯০ দিনে। আর ওই সময়ে সংসদ ও সরকার বহাল থাকবে বলেই ‘নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি’ এবং নির্বাচনকালীন সময়ে বর্তমান মন্ত্রী-সাংসদদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা নতুন করে নির্ধারণের বিষয়টি আলোচনায় আসছে।
সুবিধা ছাড়তে হবে যাদের
প্রস্তাবিত আচরণবিধিতে সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, উপদেষ্টা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী ও তাদের সমমর্যদাসমপন্ন ব্যক্তি এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে ‘সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তি’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের বিষয়েও ‘স্পষ্ট’ বিধান যুক্ত হচ্ছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান।
তফসিল ঘোষণার আগ পর্যত তারা সব সরকারি সুযোগ সুবিধা পাবেন। তবে তার পরে কে কতোটা সুযোগ পাবেন- তা নির্ধারিত হবে আচরণবিধি অনুযায়ী।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রিসভার সদস্যরা সাধারণ প্রটোকল হিসেবে জেলা প্রশাসনের ‘গান স্যলুট’ পান। মন্ত্রণালয় থেকেও নির্বাচনী এলাকায় সুবিধা দেয়ার নির্দেশনা দিতে পারেন তিনি।
আর সংসদ সদস্যরা থাকেন সংশ্লিষ্ট এলাকার [উপজেলা] উপদেষ্টা, আইন শৃঙ্খলা কমিটির অন্যতম নির্ধারক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্বে। স্থানীয় ডাক বাংলো ব্যবহার, একান্ত সচিবদের বিশেষ সুবিধা, সরকারি পরিবহন ও প্রচারযন্ত্র ব্যবহারেরও সুযোগ তাদের থাকে।
কমিশনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সাংবিধানিকভাবে স্পিকার পদে থেকে নির্বাচনের সুযোগ বরাবরই রয়েছে। তা নিয়ে কখনো প্রশ্ন ওঠেনি। স্পিকার প্রার্থী হলে এসব সুবিধা নেন না। দলীয় সরকারের অধীনে সবাই তা অনুসরণ করলে কোনো সমস্যা থাকে না।”