‘রাজনীতি সংবাদ মাধ্যমের কাজ নয়’

দেশের রাজনীতিতে সংবাদ মাধ্যমের সরাসরি সম্পৃক্ততার বিরোধিতা করে রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে রক্ষার দায়িত্বের বিষয়টি রাজনীতিবিদদের মনে করিয়ে দিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2013, 04:47 PM
Updated : 23 Oct 2013, 07:52 PM

তিনি বলেছেন, মুক্ত ও কার্যকর গণমাধ্যম সঠিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতিতে টেকসই হতে পারে না।

বুধবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাত বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে এ প্রতিষ্ঠানের শুরুর দিনগুলোয় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন ঘিরে এখনকার রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কথা তুলে ধরেন তিনি। পাশাপাশি উল্লেখ করেন গণমাধ্যমের দায়িত্বের বিষয়গুলোও।

ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নীতি-নির্ধারকরা এই অনুষ্ঠানে ছিলেন। বিচারপতি-আইনজীবী, ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা, কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী-সংগঠক, ক্রীড়াবিদ-সংগঠক, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারাও শামিল হয়েছিলেন উদযাপনে।

প্রধান সম্পাদক বলেন, “রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া গণমাধ্যমের কাজ নয়। রাষ্ট্রক্ষমতা বদলের কোনো প্রক্রিয়ায় কোনো সংবাদমাধ্যমের জড়িয়ে পড়াটা আমরা সমর্থন করি না।

“রাজনীতির সংবাদ আমরা পরিবেশন করি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষণ বা মন্তব্যও তুলে আনি, কিন্তু সরাসরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া আমাদের কাজ নয়।”

২০০৬ সালের ২৩ অক্টোবরের প্রথম প্রহরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম যখন সব পাঠকের জন্য উন্মুক্ত করা হয়, সে সময় একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে বাংলাদেশ।

সেই প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “তখন সংবাদের অভাব ছিল না। জাতি তখন সংকটে। ২০০৬ সালের কথা মনে আছে? বিশেষ করে এর দ্বিতীয় ভাগ? প্রতিদিন রাজনৈতিক সহিংসতাই যেন নিয়মে দাঁড়িয়েছিল। একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলেও তা ছিল অকার্যকর।

“উপদেষ্টামণ্ডলীর অর্ধেকই পদত্যাগ করলেন এবং তাদের জায়গায় খুব একটা নির্ভরযোগ্য কেউ এলেন না। অরাজকতা চলতেই থাকল। নির্বাচনের একটি তারিখ ঘোষণা করা হলো। ভোটের সব আয়োজন চূড়ান্ত হয়ে গেলেও প্রধান একটি দল ও তাদের মিত্ররা নির্বাচন বর্জন করল।”

এরপর ২০০৭ সালের শুরুতে সেই রাজনৈতিক পালাবদল, যা এখন ‘১/১১ নামে কুখ্যাত’, এবং তার পরের দিনগুলোতে রাজনীতি, ব্যবসা- বাণিজ্যসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়া হতাশা ও ক্ষোভের ছবিও বক্তৃতায় ফিরিয়ে আনেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

তিনি বলেন, “গত কয়েক দিনে বিরোধী দলের নেতাসহ আমাদের কয়েকজন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে সাক্ষাত করার সুযোগ আমার হয়েছিল। কিছুটা আশা নিয়েই আমি আপনাদের বলতে পারি, গণতন্ত্র থেকে এক মুহূর্তের বিচ্যুতিও কতোটা বিপদ ডেকে আনতে পারে, সে সম্পর্কে তারা সবাই সচেতন।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদকীয় নীতি ও মানদণ্ডের কথা তুলে ধরে প্রধান সম্পাদক বলেন, “কেউ যখন একটি ‘তৃতীয় শক্তির’ কথা বলে- আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, তারা তৃতীয় একটি রাজনৈতিক শক্তি নিয়েই কথা বলছেন। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে তৃতীয় কোনো শক্তিকে আমরা কখনো সমর্থন করিনি।”

এক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের দায়িত্বের বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেন তৌফিক খালিদী।

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সুরক্ষার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের। আর গণমাধ্যমেরও তা সমর্থন করার মতো অবস্থানে থাকতে হবে। কারণ এতে আমাদেরও স্বার্থ জড়িত। সঠিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ছাড়া মুক্ত ও কার্যকর গণমাধ্যম টিকে থাকতে পারে না।”

জাতীয় সঙ্গীতে শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানে আধা ঘণ্টার বক্তৃতায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক ‘অনেক নতুন ধারণার’ সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া এই সংবাদ পোর্টালের সাত বছরের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংক্ষেপে। আগামী দিনগুলোতে সংবাদ মানের ‘কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে’ পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারও তিনি পৌঁছে দেন পাঠকের কাছে।    

এরপর কেক কেটে ‘ইতিহাস গ্রন্থনায়’ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাত বছর পূর্তি উদযাপন করে নৈশভোজে অংশ নেন অতিথিরা।

তাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এবং ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিএনপি নেতা আব্দুল মঈন খান ও ওসমান ফারুক, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, জাতীয় পার্টির ( জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারকও যোগ দেন এ অনুষ্ঠানে। 

বিগত ‘সেনা সমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী, ওই সময়ে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন এবং কারাবন্দি দুই নেত্রীর আইনজীবী হিসাবে দায়িত্ব পালন করা ব্যারিস্টার রফিক-উল হকও সমবেত হয়েছিলেন র‌্যাডিসনের বলরুমে।  

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তার বক্তব্যের শুরুতেই উপস্থিত অতিথিদের ধন্যবাদ জানান, দেশের প্রথম এই ইন্টারনেট সংবাদপত্রের সঙ্গে থাকার জন্য, অসাবধানতার ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে গণমাধ্যম হিসাবে দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য, কাঙ্ক্ষিত উৎকর্ষ অর্জনে প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য।

আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উদ্বেগ-আশঙ্কা আর প্রতিশ্রুতি-সম্ভাবনার দোলাচলের মধ্যে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো যাতে তাদের দায়িত্ব আর নৈতিকতার সীমারেখা বিস্মৃত না হয় সে কথাটিও বক্তৃতার শেষ অংশে উল্লেখ করেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

তিনি বলেন, “আগামী দু'টো দিন, অথবা আগামী কয়েকটি সপ্তাহ অনেক বড় বড় শিরোনামের আভাস দিচ্ছে। আমাদের মতো সংবাদকর্মীদের জন্য শিরোনাম লেখা সবসময়ই উপভোগ্য। কিন্তু সে আনন্দের জন্য দেশের ১৬ কোটি মানুষকে যেন দাম দিতে না হয়। কারণ, এ দেশের মালিক তারাই।”