সাকার ‘সহযোগীর’ আশ্রয়ে লুকিয়ে ছিলেন মুফতি হারুন

যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর এক ‘সহযোগীর’ আশ্রয়ে ছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতা হারুন বিন ইজাহার।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম অফিসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2013, 12:44 PM
Updated : 9 Oct 2013, 01:52 PM

হাটহাজারীর ইছাপুর গ্রাম থেকে বুধবার ভোররাতে গ্রেপ্তার করা হয় হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি ইজাহারুল ইসলামের ছেলেকে।

ওই গ্রামের জানালী চৌধুরী বাড়ির আবদুর রহমানের আশ্রয় থেকে মুফতি হারুনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। তিনি হারুনের জ্যাঠাশ্বশুর।

অভিযানে অংশ নেয়া কোতোয়ালি থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হারুনের আশ্রয়দাতা আবদুর রহমান হলেন সালাউদ্দিন কাদেরের অনুসারী এবং বিভিন্ন কাজের সহযোগী।”

গত সোমবার চট্টগ্রাম নগরীতে মুফতি ইজাহারের লালখান বাজার মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের পর পালিয়ে যান বাবা-ছেলে। ওই মাদ্রাসায় তল্লাশি চালিয়ে হ্যান্ড গ্রেনেড ও বিস্ফোরক পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারের পর হারুনকে ওই দুই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের জন্য হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।

ইছাপুর গ্রামের জানালী চৌধুরী বাড়ি হারুনের শ্বশুরবাড়ি। যে ঘর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা তার শ্বশুর মুফতি হাবিবুর রহমানের।

মুফতি হাবিব হেফাজতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং চট্টগ্রামের নাজিরহাট মাদ্রাসার শিক্ষক।

ওসি মহিউদ্দিন বলেন, “মুফতি হাবিব বাড়িতে ছিলেন না। আসলে জ্যাঠাশ্বশুর আবদুর রহমানের আশ্রয়েই ছিলেন হারুন।”

জানালী চৌধুরী বাড়ির সঙ্গে সালাউদ্দিন কাদেরের পারিবারিক যোগসূত্রও রয়েছে।

ওসি মহিউদ্দিন বলেন, জানালী চৌধুরী বাড়ি সালাউদ্দিন কাদেরের বাবা মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর নানার বাড়ি। এখানেই চৌধুরী বাড়ির গোড়াপত্তন। পরে রাউজানে স্থায়ী হয় সালাউদ্দিন কাদেররা।

সোমবার সকালে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের পর সন্ধ্যায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। তল্লাশির জন্য ফোর্স জড়ো করার ফাঁকে মুফতি ইজাহার ও মুফতি হারুন পালিয়ে যান বলে জানান নগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম।

ওই বিস্ফোরণে আহত হাবিব ও জোবায়ের হোসেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

অন্য দুই আহতের মধ্যে নুরুন্নবীর ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

শ্বশুর বাড়িতে আত্মগোপনে

বিস্ফোরণের পর সোমবার দুপুরে মুফতি হারুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার সময় আমি মাদ্রাসায় ছিলাম না। ছাত্রদের কাছে শুনেছি, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের আইপিএস বিস্ফোরণ হয়েছে।”

সোমবার রাতে পালিয়ে যাওয়ার পর মঙ্গলবার নগরীর চন্দপুরায় দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু সেখানেও পিতা-পুত্রের দেখা মেলেনি।

এরপর মঙ্গলবার রাত ১টায় শুরু হয় পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান।

গোপন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত ওই অভিযানে অংশ নেয় নগর, গোয়েন্দা ও দাঙ্গা পুলিশের ৬০ জনের একটি দল।

নগর পুলিশের পাঁচলাইশ অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) আবদুর রউফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রাত সাড়ে ৩টার দিকে জানালী চৌধুরী বাড়ির একতলা একটি পাকা ঘর থেকে সহযোগীসহ হারুনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন সেলিম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, জানালী চৌধুরী বাড়ি এলাকায় একটি সীমানা প্রাচীরের ভেতর একতলা চারটি পাকা বাড়ি আছে। এর মধ্যে হারুনের শ্বশুর মুফতি হাবিবুর রহমান ও জ্যাঠা শ্বশুর আবদুর রহমানের দুটি বাড়ি।

“হাবিবুর রহমান ওই বাড়িতে না থাকায় সেটি প্রায় পরিত্যক্ত। ওই বাড়িতেই ছিলেন মুফতি হারুন ইজাহার।”

বাড়িটি বাইরে থেকে বন্ধ থাকলেও ভেতরেই ছিলেন হারুন ও তার সহযোগী জুনায়েদ। ওই ঘরের প্রবেশপথ বন্ধ থাকলেও আশেপাশে পাহারায় ছিল হারুনের লোকজন।

৪৫ মিনিটের অপেক্ষা

ওসি মহিউদ্দিন বলেন, “ওই বাড়িতে যাওয়ার তিনটি পথের মধ্যে অপ্রচলিত পথটিই বেছে নিই আমরা। রাতের অন্ধকারে প্রায় আড়াই কিলোমিটার ঘুরে গিয়ে পুলিশের একটি দল বাড়ির পেছনের অংশ ঘিরে ফেলে।”

এসময় ঘরের ভেতরেই ছিলেন হারুন ইজাহার ও তার সহযোগী জুনায়েদ। ভেতরে থাকলেও বাইরে থেকে বন্ধ ছিল লোহার দরজা-জানালা।

ওসি মহিউদ্দিন বলেন, “ঘরের ভেতর ফ্যান চলছিল। অবস্থান নিশ্চিত হওয়ায় আমরা প্রায় ৪৫ মিনিট বাইরে অপেক্ষা করি। তারপর একসময় মুফতি হারুন নিজেই দরজা খুলে দেন।”

দরজা খোলার পর জিজ্ঞাসা করলে মুফতি হারুন নিরুত্তাপভাবেই নিজের পরিচয় দেন বলে পুলিশ জানায়।

এসি আবদুর রউফ জানান, সাঁড়াশি এ অভিযানে সব বিষয় মাথায় রেখেই সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছিল পুলিশ।