‘ফোর্স জড়ো করার ফাঁকে ফসকেছেন ইজাহার’

চট্টগ্রামে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের পরপরই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মিছিল হলেও হেফাজত নেতা মুফতি ইজাহারুল ইসলাম ও তার ছেলে হারুন বিন ইজহার গ্রেপ্তার না হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী , চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2013, 10:07 AM
Updated : 8 Oct 2013, 07:03 PM

অবশ্য পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মাদ্রাসায় বিস্ফোরকের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তল্লাশির জন্য ফোর্স জড়ো করার ফাঁকে তারা পালিয়ে যান।

লালখান বাজার মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের ঘটনায় করা দুই মামলায় ওই মাদ্রাসার পরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মুফতি ইজাহার ও তার ছেলে হারুনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

সোমবার সকালে ঘটনার পর মাদ্রাসায়ই ছিলেন ইজাহার। তিনি ও তার ছেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাও বলেন। তারা দাবি করেন, মাদ্রাসার ছাত্রবাসে ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের আইপিএস বিস্ফোরিত হয়েছে।

তবে ওই সময়ই সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে ওই বিস্ফোরণ ঘটে বলে অভিযোগ করে প্রতিবাদী মিছিল করে এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, মুফতি ইজাহার পরিচালিত ওই মাদ্রাসায় বিস্ফোরক থাকার বিয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর অভিযান চালানোর জন্য ‘ফোর্স রেডি’ করার ফাঁকে দুজন পালিয়ে যান।

সোমবার সকালে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের পর বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, মাদ্রাসায় বিস্ফোরক দ্রব্যের বড় ধরনের মজুদ ছিল বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। 

বিকাল চারটা ৫০ মিনিটে পুলিশ কমিশনার ওই কথা বললেও সেখানে অভিযান শুরু হয় সন্ধ্যা ছয়টা ৪০ মিনিটে। অথচ বিস্ফোরণের আধ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।  

জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা নামে পরিচিত ওই  মাদ্রাসায় প্রবেশ পথের মাত্র ৫০ গজের মধ্যেই চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন।

এ বিষয়ে শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিস্ফোরকের বিষয়ে নিশ্চিত হতে আমাদের সময় লেগেছে। এরপর পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত ফোর্স জড়ো করে তল্লাশি শুরু হয়।”

সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত মাদ্রাসায় সাড়ে তিন ঘণ্টার তল্লাশিতে মুফতি ইজাহার ও তার ছেলে হারুন বিন ইজাহারের কোনো খোঁজ মেলেনি।

পুলিশ কমিশনার বলেন, মুফতি ইজাহার ও তার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এর আগে ২০১০ সালের ১৩ ডিসেম্বর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ইজাহারকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন।

এছাড়া একই বছরে জঙ্গি সংগঠন হুজির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন হারুণ বিন ইজাহার। 

মাদ্রাসাতেই ছিলেন ইজাহার

সোমবার বেলা ১১টার দিকে ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে বিস্ফোরণের সময় মাদ্রাসা প্রাঙ্গণেই ছিলেন মুফতি ইজাহারুল ইসলাম।

মাদ্রাসার একটি চারতলা ছাত্রাবাসের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে বিস্ফোরণে অন্তত পাঁচ জন আহত হন। বিস্ফোরণে ওই কক্ষের সব কিছু পুড়ে যায়। খসে পড়ে পলেস্তারা, বাঁকা হয়ে যায় লোহার জানালা।

ওই কক্ষের পাশের কক্ষেই থাকতেন ইজাহারের ছেলে হারুন। তবে বিস্ফোরণের সময় মাদ্রাসায় ছিলেন না বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দাবি করেন তিনি।

বিস্ফোরণের পর মুফতি ইজাহার মাদ্রাসায় প্রবেশপথের লাগোয়া ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতি’ কক্ষে বসে ছিলেন।

সেখান থেকে দুপুর দেড়টার দিকে মুফতি ইজাহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শব্দ শুনে ছাত্রদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেছে- ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের আইপিএস বিস্ফোরণ হয়েছে, তবে আমি দেখিনি।”

বিকালে বিস্ফোরণের কক্ষ থেকে তিনটি গ্রেনেড ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশের বোমা নিস্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা। 

বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মাদ্রাসা পরিদর্শনে যান পুলিশ কমিশনার। এরপর সন্ধ্যায় তল্লাশি শুরু হয়। রাত ৮টায় তল্লাশি শুরু হয় মুফতি ইজাহারের কার্যালয় ও বাসভবনে।

সেখান থেকে ১৮ বোতল পিকরিক এসিড জব্দ করে পুলিশ। এসময় তিন শিক্ষকসহ পাঁচজনকে আটক করলেও মুফতি ইজাহার ও মুফতি হারুন ইজাহারের খোঁজ মেলেনি।

মঙ্গলবার সকালে ওই মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে আরেকটি গ্রেনেড পায় পুলিশ।