আরো ৬০ বিদেশি বন্ধুকে সম্মাননা

মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী গুলজারিলাল নন্দাসহ ভারত, পাকিস্তান, জাপান, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, মিশর, শ্রীলঙ্কা ও তুরস্কের ৬০ জনকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2013, 05:02 PM
Updated : 1 Oct 2013, 05:03 PM

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা পেয়েছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ। তার পক্ষে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের হাত থেকে এই সম্মাননা নেন ছেলে পারভেজ আহমেদ।

এছাড়া বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা পদক পেয়েছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত গুলজারিলাল নন্দী। তার ছেলে তেজুস নাকেয় এই পদক নেন।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ উন্নত বাংলাদেশ গড়তে বাংলাদেশের বন্ধুদের সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, “১৯৭১ সালের গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত পাকিন্তানি দখলদার বাহিনীর দোসর এদেশের রাজাকার, আলবদর, আলশামস- যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে সংগঠন করে যুদ্ধ অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে, তাদের বিচারের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠন করেছে এবং বিচার কার্য চলছে।”

“এভাবেই আমরা আলোকিত গন্তব্যের দিকে উন্নয়নের মাধ্যমে এগিয়ে চলছি।”

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সদস্য, রাজনীতিবিদ, তিন বাহিনীর প্রধানসহ উর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা এবং স্কুলের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগ গৌরবের ইতিহাস। এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত। তারা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানবে।”

আওয়ামী লীগ এই মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননা দেয়ার উদ্যোগ নেয়। কয়েক পর্বে এই সম্মাননা দেয়া হচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা নিজেরাই নিজেদের সম্মান দিচ্ছি। আমরা আমাদের অকৃত্রিম বন্ধুদের সম্মান জানাচ্ছি।”

ভবিষ্যতে কেউ বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “২০২১ সালে আমরা বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তুলতে পারবো- সে বিশ্বাস আমার আছে।

“আমাদের অর্জনগুলো আমাদের ধরে রাখতে হবে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা সরকারে এসেছি বলেই এই সম্মাননা দিতে পারছি। এই ধারা যেন অব্যাহত রাখতে পারি।”

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দেশের শাসন ক্ষমতা স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে চলে যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে এই সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথমেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়।

এরপর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসেন ভূইয়া সম্মাননাপ্রাপ্তদের পরিচিতি তুলে ধরেন।

ভারতের রাজনীতিবিদ জয়নুল আবেদিন, জাপানের সমাজকর্মী কেন আরিমিটসু, ভারতে সমাজকর্মী স্বপন কুমার ভট্টাচার্য, ভারতের সমাজকর্মী মৃন্ময়ী বসু, ভারতে অভিনেতা বিশ্বজিৎ আর চ্যাটার্জি, ভারতের সমাজকর্মী শ্যামল চৌধুরী, যুক্তরাজ্যের সমাজকর্মী এলেন কনেট ও পল কনেট, ভারতের সংস্কৃতিকর্মী গৌরী ঘোষ ও পার্থ ঘোষ, ভারতের সাবেক সামরিক কর্মকর্তা স্বরূপ কৃষ্ণ কাউল, ভারতের সমাজকর্মী মুজাম্মিল আলী লস্কর, ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তা লাছমন সিং লেহেল, ভারতের চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ মন্ডল, পাকিস্তানের অধ্যাপক তারিক রহমান, ভারতের সমাজকর্মী প্রণবরঞ্জন রায়, ভারতীয় অভিনেত্রী ওয়াহিদা রেহমান, মিশরের রাজনীতিবিদ রিফাত মোহাম্মদ আল সাঈদ এবং শ্রীলংকার রাজনীতিবিদ ই এ বিদ্যাসেকেরা ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ গ্রহণ করেন।

ভারতের সাংবাদিক সুখরঞ্জন সেনগুপ্ত, চিত্রগ্রাহক বিনয় রায়, অধ্যাপক সৌরীন্দ্রনাথ ভট্টচারর্যত, সমাজকর্মী সলিল ঘোষ, অধ্যাপক ড. অনিরূদ্ধ রায়, কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়, অধ্যাপক গৌতম চক্রবর্তী. আইনজীবী রবীন্দ্রনাথ চৌধুরী, চিকিৎসক নলিনাক্ষ চৌধুরী, সাংবাদিক পান্নালাল দাশগুপ্ত, সেনা কর্মকর্তা মনমোহন সাগর দুগ্গাল, সমাজকর্মী আজগর আলী ইঞ্জিনিয়ার, সমাজকর্মী স্নেহাংশু কান্ত আচারর্যর, অভিনেত্রী সোমনাথ হোর, রাজনীতিবিদ মাওলানা সাইদ আসাদ মাদানী, রাজনীতিবিদ ভি কে কৃষ্ণা মেনন, সংগীত শিল্পী সুচিত্রা মিত্র, সমাজকর্মী এন বি মুখার্জী, সমাজকর্মী রবীন্দ্রমোহন চৌধুরী, সমাজকর্মী আবুল ফজল গোলাম ওসমানী, সেনা কর্মকর্তা কুলবন্ত সিং পান্নু, সাংবাদিক কিশোর পারেখ, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা অশোক রায়, সমাজকর্মী সুভাষ মুখোপাধ্যায়, অর্থনীতিবিদ সমর রঞ্জন সেন, কূটনীতিবিদ সমর সেন,সেনাবাহিনীর সুবেদার মালকিয়াৎ সিং ও সুখদেব সিং সান্ধু ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল তপেশ্বর নারায়ণ রায়না, আমেরিকার চিকিৎসক রিচার্ড এ ক্যাশ,  ড্যানিয়েল সি ডানহাম, সমাজকর্মী মেরি ফ্রান্সিস ডানহাম ও অধ্যাপক আলফ্রেড সামার, পকিস্তানের রাজনীতিবিদ মাস্টার খান গুল, খান আব্দুল ওয়ালী খান ও খান আব্দুল গাফ্ফার খান, জাপানের সমাজকর্মী ইওয়াইচি ফুজিয়ারা, তুরস্কের সমাজকর্মী সেটিন উজবেরাক এবং মিশরের অ্যাফ্রো-এশিয়ান পিপলস্ সলিডারিটি অরগানাইজেশন পক্ষে তাদের প্রতিনিধির ও পরিবারের সদস্যরা ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ গ্রহণ করেন।

আগের ছয় পর্বে বিদেশি বন্ধুদের দেয়া সম্মাননার ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্রও অনুষ্ঠানে দেখানো হয়।