যুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের ত্রাস সাকার ফাঁসির আদেশ

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চট্টগ্রামে হিন্দু ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক নিধন এবং নির‌্যাতন শিবির চালানোর দায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সংক্ষেপে সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

বিশ্বদীপ দাশ ও গাজী নাসিরউদ্দিনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2013, 07:18 AM
Updated : 1 Oct 2013, 07:18 AM

Also Read: ৯ যুদ্ধাপরাধ প্রমাণিত চার ঘটনায় ফাঁসি

Also Read: উদ্ধত হাসি চুপসে দিল ‘ফাঁসি’

Also Read: জগৎমল্ল ও ঊনসত্তর পাড়ায় এখনো সাকার ‘ভূত’

Also Read: আদালত প্রাঙ্গণে সাকা পরিবারের খোশগল্প

Also Read: সাকা কহেন

Also Read: এখন রায় কার্যকর দেখতে চাই: প্রফুল্ল সিংহ

Also Read: নীরবতা ভেঙে রায়ে সমর্থন দিন: খালেদাকে ইনু

Also Read: রায়ের পর গাড়িতে আগুন, চালক দগ্ধ

Also Read: আপিলে যাব: সাকার স্ত্রী 

Also Read: ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্টদের বিচার করার হুমকি

Also Read: চট্টগ্রামে হরতাল ডেকেছে বিএনপি

Also Read: রায় আগে প্রকাশের প্রশ্নই ওঠে না: অ্যাটর্নি জেনারেল

Also Read: রায় কার্যকর দেখতে চান সাক্ষীরা

Also Read: ‘রায় আগে পাওয়ার দাবি ষড়যন্ত্র’

Also Read: রায়ে সন্তোষ আ.লীগ ও শরিক দলের

Also Read: তামশা দ্যাখতে আইছি: সাকাপুত্র হুম্মাম

গণহত্যায় অংশ নেয়া ছাড়াও ১৯৭১ সালে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, বোয়ালখালী ও চট্টগ্রাম নগরীতে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, হিন্দু বাড়ি দখল এবং তাদের দেশান্তরে বাধ্য করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সাকা চৌধুরী।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর মঙ্গলবার দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন।

বিচারপতি কবীর বলেন, “মানবজাতির বিরুদ্ধে এমন জঘন্য অপরাধ করার জন্য তার সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাপ্য বলে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাংসদ সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি বিএনপি বুধবার জেলায় হরতাল ডেকেছে। তবে কেন্দ্রীয় বিএনপি আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।  

মুক্তিযুদ্ধকালে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর সংগঠন হিসাবে পরিচিত মুসলিম লীগ দিয়ে রাজনীতিতে এসে বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে থাকা সাকা চৌধুরীই হলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি সাংসদ থাকা অবস্থায় যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডাদেশ পেলেন।

রায়ে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি অভিযোগের মধ্যে নয়টি ঘটনায় সা কা চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

এর মধ্যে একাত্তরের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজাফফর তার ছেলে শেখ আলমগীরকে অপহরণ করে খুনের দায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে প্রাণদণ্ড দেয়া হয়েছে।

তিনি ও তার পরিবার কীভাবে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীকে নিয়ে হত্যা, লুটপাট চালিয়েছেন, কীভাবে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনকে ধরে এনে নিজের গুড হিলের বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়েছেন- তার বিশদ বিবরণ উঠে এসেছে রায়ে।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের জন্য আদালতের রায়ে ‘অভিযুক্ত’ জামায়াতে ইসলামীর প্রধান মিত্র বিএনপির এই নেতাকে আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকার করার নির্দেশ দেন বিচারক।

রায় ঘোষণার পর ট্রাইব্যুনালের বাইরে অপেক্ষমাণ মুক্তিযোদ্ধা, রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বানে উপস্থিত জনতা এবং আসামির জেলা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে উল্লাস প্রকাশ করে।

অপরাধ সংঘটনের চার দশকেরও বেশি সময় পরে পাওয়া এই বিচারের রায় দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা। 

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বলেছে, সালাউদ্দিন কাদের হিন্দু সম্প্রদায় ও সাধারণ মানুষের ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তাতে ট্রাইব্যুনালের রায়ে ‘সঠিক’ রায় এসেছে।

অন্যদিকে এই রায় আগেই ‘ফাঁস’ হয়ে গিয়েছিল অভিযোগ করে অসন্তোষ জানিয়েছে সাকা চৌধুরীর পরিবার।

রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

 

১৭২ পৃষ্ঠার রায়, চার অভিযোগে ফাঁসি

সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসার পর সকাল ১০টা ৪৩ মিনিটে বিচারপতি ফজলে কবীরের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রায়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। 

ট্রাইব্যুনালের অপর দুই বিচারক বিচারপতি আনোয়ারুল হক ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন রায়ের ১৭২ পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপ পড়ে শোনান। সবশেষে ১টা ১০ মিনিটে সাজা ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান।

রায়ে বলা হয়, সাংসদ সালাউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে এ মামলায় প্রসিকিউশন যে ২৩টি অভিযোগ এনেছে, তার মধ্যে নয়টি (২ থেকে ৮, ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগ) সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

এর মধ্যে ৩, ৫ , ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে হত্যা, গণহত্যা ও অপহরণের পর খুনের দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

এছাড়া হত্যা, গণহত্যার পরিকল্পনা সহযোগিতা এবং লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও দেশান্তরে বাধ্য করার মতো তিনটি অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যকে ২০ বছর কারাদণ্ড এবং অপহরণ ও নির্যাতনের দুটি ঘটনায় দেয়া হয়েছে পাঁচ বছর করে জেল দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

বিচারক বলেন, আটটি অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি। আর কোনো সাক্ষী হাজির করতে না পারায় ছয়টি অভিযোগের বিষয়ে রায়ে কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি। 

 

‘উদ্ধত’ সাকা

বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত ও অশালীন মন্তব্যের জন্য সংবাদ শিরোনামে আসা সালাউদ্দিন কাদেরকে রায়ের পুরোটা সময় কাঠগড়ায় বসে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে দেখা যায়। এ সময় তার পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা, চোখে ছিল চশমা।

স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, দুই ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরী ও হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং মেয়ে ফারজিন কাদের চৌধুরীও আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

এই বিচারের শুনানিতে বেশ কয়েকবার আদালতের প্রতি উদ্ধত আচরণ করে বিএনপির এই সাংসদ। রায়ের দিনও এর ব্যতিক্রম ছিল না।

রায়ের এক পর্যায়ে বিচারপতি আনোয়ারুল হক বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাঁচবার  এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

এ সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যান সালাউদ্দিন। চিৎকার করে বলে ওঠেন- “ফাইভ টাইমস?”

এরপর তিনি বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন,  “সিক্স টাইমস”

১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে গঠিত স্বল্পকালীন সাংসদে নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি এভাবেই মনে করিয়ে দেন ফটিকছড়ির এই সাংসদ।

বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে সালাউদ্দিন কাদের চিৎকার করে বলে ওঠেন, “এগুলো পড়ার দরকার নাই, এগুলো তো গত দুই দিন ধরে অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।”

এ সময় কয়েক মুহূর্তের জন্য বিচারক রায় পড়া বন্ধ রাখেন।মিনিট খানেক পর আবার রায় পড়া শুরু করেন তিনি।

এর আগে হাসতে হাসতে নিচু কণ্ঠে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, “যেটা পড়া হয়নি সেটা পড়েন, পড়ে চলেন বাড়ি যাই।”

এক পর্যায়ে বিচারককে উদ্দেশ্য করে অশালীন উক্তি করতে থাকেন সাকা।

ট্রাইব্যুনাল প্রধান রায়ে বলেন, সালাউদ্দিন কাদের ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু বিচার চলাকালে আদালতের প্রতি তার আচরণ ছিল অসম্মানজনক।

এ মামলার বিচার চলাকালেও নানা নাটকীয়তার জন্ম দেয়া সাকা চৌধুরী বলেন,  শুনানিতে বলেছিলেন, চট্টগ্রামের একটি মুসলিম পরিবারে তার জন্ম, বাঙালি পরিবারে নয়; তার মাতৃভাষা বাংলা নয়, চাঁটগাইয়া।

গত ১৭ জুন ট্রাইব্যুনালে নিজের সাফাই সাক্ষ্য দেয়ার সময় তিনি বলেন, “আমার না হলে, ফাঁসি কারো হবে না।”

এর আগে ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “কলকাতার জেলে পাঠাবেন না।”

 

প্রতিক্রিয়া

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সালাউদ্দিন কাদেরের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা বলেন, তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। 

সালাউদ্দিন কাদেরের স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী বলেন, “আমরা জানি ন্যায় বিচার পাব না। তারপরও বিচারের পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে যাব। আমরা আপিলে যাব এবং দেখতে চাই আপিলে কারা আছেন।”

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “সাকা চৌধুরী হিন্দু সম্প্রদায় ও সাধারণের ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তা ছিল অভাবনীয়। এটি সঠিক বিচার হয়েছে।”

এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, “রায় বিচার-বিশ্লেষণ করে আমরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো। হত্যা, নির্যাতনের যে অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয়নি সেগুলো নিয়ে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”

বিএনপি তাদের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্যের ফাঁসির রায়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে রায়ের আধ ঘণ্টার মাথায় সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে রায় প্রত্যাখ্যান করেন বিএনপির আইনজীবী নেতারা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহাবুব হোসেন বলেন,  জাতীয়তাবাদী শক্তি আবার ক্ষমতায় এলে ‘এই প্রহসনের বিচারে’ সম্পৃক্তদের বিচার হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, রায়ে তারা ‘মর্মাহত’।

আপিলের পর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সর্বোচ্চ আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

গ্রেপ্তার হওয়ার আগে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করায় সরকারি উদ্যোগ প্রতিহত করার উপায় নিয়ে প্রকাশ্যে মওদুদের সমালোচনা করেছিলেন সাকা।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, এই বিচারে জাতির ‘প্রত্যাশা পূরণ’ হয়েছে।

“আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এই রায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অন্যান্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধেও জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী রায় হবে বলে আশা করছি।”

দীর্ঘদিন ধরে জনগণ এই রায় প্রত্যাশা করছিল বলে মন্তব্য করেছেন সরকারের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, জাতি এই রায়ের জন্য বহুদিন অপেক্ষা করেছে। ঘোষিত রায় দ্রুত কার্যকর করতে হবে।

তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসনুল হক ইনু রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বেলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেয়া কারো উচিত নয়। তাদেরকে রক্ষার জন্য এবং এই বিচার বানচালের জন্য পদক্ষেপ নেয়াও উচিত নয়।”

 

‘কলঙ্কমুক্তি’

রায় ঘোষণার পর সাকা চৌধুরীর জন্মস্থান  রাউজান সদরে মিছিল বের করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। মিষ্টি বিতরণ করা হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে।

রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বেবি বলেন, “রায়ের অপেক্ষায় ছিলাম। সঠিক বিচার হয়েছে। সূর্যসেনের জন্মস্থান হিসেবে রাউজান যেমন গর্বিত, তেমনি সালাউদ্দিন কাদেরের জন্মস্থান হিসেবে এতদিন ছিল কলঙ্কিত।এই রায়ে রাউজানবাসী কলঙ্কমুক্ত হলো।”

একাত্তরে সাকার হাতে নিহত কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মলিক নূতন চন্দ্র সিংহের ছেলে প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “৪২ বছর পরে বাবার হত্যাকারী সাজা পেয়েছে এটাই স্বস্তির। এখন রায় কার্যকর হোক এটাই চাই আমরা।”

এ মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী চট্টগ্রামের গুডস হিলে সাকা চৌধুরী ও তাদের পারিবারিক টর্চার সেলে নির্যাতনের শিকার ছলিম উল্লাহ বলেন, “সে (সাকা) একাত্তরে রাউজান ও শহরে গণহত্যা ও ধর্ষণ চালিয়েছে। তার মৃত্যুদণ্ডই সর্বোচ্চ সাজা প্রাপ্য ছিল।”

অবিলম্বে তার সাজা কার্যকরের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এতে করে একাত্তরে রাউজানে তার সহাতায় পাকবাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত ও নিহত সকলের আত্মা শান্তি পাবে।

একাত্তরের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জহিরউদ্দিন জালাল রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায়ের মাধ্যমে বিএনপিতে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের অস্তিত্বের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।

আরেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল হক বলেন, “আজ ৪২ বছর পর সাকা চৌধুরীর দম্ভ-অহংকার চুরমার হয়েছে। জাতি এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছে। এইসব হেভিওয়েটদের বিচারের জন্য একটি ফাঁসিই যথেষ্ট।”

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, “প্রসিকিউশন গণহত্যার রায় চেয়েছে, আমরাও তাই চেযেছি, তা পেয়েছি।”

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করে রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।

একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, “বেগম সুফিয়া কামালের তদন্ত কমিশনই গণহত্যাগুলোর প্রমাণ পেয়েছিল। সেটাতে আমারা যারা তখনকার মানুষ, যারা গবেষণায় জড়িত ছিলাম, তারা সবাই জানি এগুলো সত্যি।”

 

আগেই রায় ফাঁসের অভিযোগ

ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণা করলেও গত দুদিন ধরেই তা ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সালাউদ্দিন কাদের নিজে এবং তার পরিবারের সদস্যরা। 

রায়ের আগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, জাস্টিস কনসার্ন ডট অর্গ নামের একটি ওয়েবসাইটে রায় তিনি আগেই জেনেছেন, আদালতে এসেছেন ‘তামাশা’ দেখতে।

রায়ের সময় সাকা চৌধুরীও একই ধরনের কথা বলে বিচারকদের রায় পড়া থামাতে বলেন।

রায়ের পর সালাউদ্দিন কাদেরের স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আদালতের রায়ের কপি একদিন আগেই কয়েকটি ওয়েব সাইটে পেয়েছি। আমরা জানতে পেরেছি এই কপি আইন মন্ত্রণালয় তৈরি করেছে। আমরা হতবাক হয়েছি আইন মন্ত্রণালয়ের রায়ের কপি কীভাবে বিচারকরা পড়তে পারেন।”

এ অভিযোগ নাকচ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, “রায় আগে প্রকাশের প্রশ্নই উঠে না। এটা ঠিক নয়। এটা অনুমান নির্ভর।”

আর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, “রায় আগেই পাওয়ার যে দাবি করা হয়েছে তা বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটি নতুন নাটক সাজানো হয়েছে। এটা নতুন ষড়যন্ত্র।”

এ বিষয়ে দ্রুত অনুসন্ধান চালানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আইনপ্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেছেন, “রায় ইন্টারনেটে আগে পাওয়ার যে দাবি করা হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত করছি। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-বিটিআরসিকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।”

বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রে যারা জড়িত তাদেরও বিচার করা হবে বলে জানান তিনি।

আইন মন্ত্রণালয় এ রায় লিখে দিয়েছে বলে যে অভিযোগ সালাউদ্দিন কাদেরের পরিবার ও আইনজীবীরা তুলেছেন, তাতে বিভ্রান্ত না হতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ওই ব্লগে তথ্যসচিব আট তলায় বসেন এবং আলম নামের একজন কম্পিউটার অপারেটরের কথা বলা হয়েছে। অথচ তথ্যসচিব ৬ষ্ঠ তলায় বসেন এবং আলম নামে আইন মন্ত্রণালয়ে কেউ নেই।”

এই ‘অপপ্রচারের’ সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে মন্ত্রী জানান।

 

গাড়িতে আগুন, তবু জীবনযাত্রা স্বাভাবিক

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এটি সপ্তম রায়। আগের ছয়টি রায়ে জামায়াতের সাবেক ও বর্তমান ছয় নেতাকে দণ্ডাদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।

আগের রায়গুলোর দিন বিচার প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে হরতাল ডাকা হলেও এবার বিএনপি নেতারা ছিলেন কর্যত নিশ্চুপ। ট্রাইব্যুনাল ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও আগের রায়ের দিনগুলোর মতো কড়াকড়ি চোখে পড়েনি এদিন। রায়ের সময় জাতীয় প্রেসক্লাব মোড়, বঙ্গবাজার ও সচিবালয় সংলগ্ন সড়কগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই যান চলাচল করছে।

সাকা চৌধুরীকে আগের দিনই কামিশপুর কারাগার থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার সকালে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে নেয়া হয় একটি প্রিজন ভ্যানে করে। রায়ের পর আবার কারাগারে পাঠানো হয় তাকে।

আগের রায়ের দিনগুলোর মতো এদিনও সকাল থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে মিছিল নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের ট্রাইব্যুনালের বাইরে জড়ো হতে দেখা যায়। তারা বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর করারও দাবি জানান।

অন্যদিকে রায় ঘোষণার পরপরই চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় সালাউদ্দিন কাদেরের অনুসারী ছাত্রদল ও যুবদলকর্মীরা চারটি মোটর সাইকেল ও একটি সিএনজি অটোরিকশা পোড়ায়। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের ঘাটচেক এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধেরও চেষ্টা করা হয়।

চট্টগ্রাম নগরীর স্টেশন রোডে মুখে কাপড় বাঁধা কয়েকজন যুবক একটি হিউম্যান হলারে আগুন দেয়।

আর রাজধানীর বঙ্গবাজার ও ফকিরাপুলে পোড়ানো হয় একটি কভার্ড ভ্যান ও একটি ট্রাক। বঙ্গবাজারের ঘটনায় ভ্যান চালক নুরুল ইসলামকে (২৫) দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার হাত ও পা ঝলসে গেছে।

 

বিতর্কের সঙ্গে বসবাস

বিএনপির বর্তমান স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৯ সালের ১৩ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার গহিরা গ্রামে। তার বাবা মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী এক সময় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকারও হয়েছিলেন।

সালাউদ্দিন কাদেরের রাজনীতির শুরুও মুসলিম লীগ থেকেই। পরে জাতীয় পার্টি ও এনডিপি হয়ে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি।

একাত্তরের অপরাধের জন্য বিতর্কিত এই রাজনীতিবিদ ১৯৭৯ সালে মুসলিম লীগ থেকে রাউজানের সাংসদ নির্বাচিত হন। সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়ে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং কার্যত এর মধ্যে দিয়েই মূল ধারার রাজনীতিতে তার পুনর্বাসন ঘটে।

১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির টিকেটে নির্বাচন করে নিজের এলাকা রাউজান থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন সাকা। কিন্তু পরে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে তিনি নির্বাচন করেন নিজের গঠন করা দল এনডিপি থেকে। আবারো তিনি রাউজানের এমপি হন। 

এর কিছুদিন পর এনডিপি বিএনপির সঙ্গে একীভূত হয়ে যায় এবং ১৯৯৬ সালে বিএনপির টিকেটে সাংসদ নির্বাচিত হন সালাউদ্দিন। পরের নির্বাচনে ২০০১ সালে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে।

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বও তিনি পালন করেন।

এছাড়া সামরিক শাসক এরশাদ ও বিএনপির শাসনামলে ত্রাণ ও পুনর্বাসন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন সা কা চৌধুরী।

সর্বশেষ ২০০৮ সালের র্নিবাচনে রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি থেকে অংশ নেন সাকা।রাঙ্গুনিয়াতে হেরে গেলেও ফটিকছড়ি, অর্থাৎ চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে বিএনপির সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি।

ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীর চার ছেলের মধ্যে সাকা চৌধুরীই সবার বড়। তার সেজ ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি। অপর দুই ভাই সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামাল উদ্দিন কাদের চৌধুরী রাজনীতিতে সারসরি যুক্ত নন।

গত দুই দশকে সাকা চৌধুরী বার বার সংবাদপত্রের শিরোনামে এসেছেন তার চটকদার, ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ এবং কখনো কখনো ‘অশালীন’ মন্তব্যের কারণে। 

আত্মীয়তা ও পারিবারিক রাজনৈতিক ইতিহাসের সূত্রে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার ফলে নানা নাটকীয় ঘটনার জন্ম দেয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘অশালীন’ মন্তব্য করে আলোচনা ও নিন্দা কুড়ান তিনি।

বিএনপিতে থেকেও দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচিত হন দলের ভেতেরেই।

নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় সা কা চৌধুরী শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘নেই’ উল্লেখ করলে ‘অসত্য তথ্য’ দেওয়ার কারণে পরে তার সদস্য পদ খারিজের উদ্যোগ নেয় নির্বাচন কমিশন। তবে ‘আইনি সীমাবদ্ধতার’ কারণে বিষয়টি আর এগোয়নি।

 

মামলার ইতিবৃত্ত

হরতালে গাড়ি পোড়ানোর একটি মামলায় ২০১০ সালে বিজয় দিবসের সকালে সালাউদ্দিন কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় ১৯ ডিসেম্বর।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিলে ১৮ নভেম্বর তা আমলে নেন বিচারক। এরপর ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই সাংসদের বিচার শুরু হয়।

প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে ওই বছর ৩ মে শুরু হয় এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ। 

সালাউদ্দিন কাদেরের পক্ষে এ মামলায় সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি নিজেসহ মোট চারজন। অন্য তিনজন হলেন তার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু নিজাম আহমেদ, এশিয়া-প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কাইয়ুম রেজা চৌধুরী এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোমেন চৌধুরী।

সালাউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলামসহ প্রসিকিউশনের মোট ৪১ জন। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া আরো চার জনের জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে ট্রাইব্যুনাল।

২৮ জুলাই থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।

ট্রাইব্যুনালের সপ্তম রায়

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরু হয়। প্রথম রায়ে গত ২১ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ আসে।

৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়, যা প্রত্যাখ্যান করে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেয় হাজার হাজার মানুষ।

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সেই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে জনতার দাবির মুখে সরকার ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধন আনে। এর মধ্যে দিয়ে রায়ের বিরুদ্ধে দুই পক্ষেরই আপিলের সমান সুযোগ তৈরি হয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ এ মামলার চূড়ান্ত রায়ে কাদের মোল্লাকে প্রাণদণ্ড দেয়। 

ট্রাইব্যুনালের তৃতীয় রায়ে গত ২৮ ফেব্র“য়ারি জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসি হলে দলটির ঘাঁটি বলে পরিচিত এলাকাগুলোতে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি হিসেবেই পুলিশসহ নিহত হয় ৭০ জনেরও বেশি মানুষ।

এরপর গত ৯ মে চতুর্থ রায়ে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকেও মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও উস্কানির দায়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমীর ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান দোসর গোলাম আযমকে গত ১৫ জুন ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। এটি ছিল ট্রাইব্যুনালের পঞ্চম রায়।

ষষ্ঠ রায়ে গত ১৭ জুলাই জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকেও মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

 

[আদালতকক্ষ থেকে খবর দিয়েছেন তানিম আহমেদ, কাজী শাহরিন হক ও সুলাইমান নিলয়, বাড়তি তথ্য দিয়েছেন লিটন হায়দার, সুমন মাহবুব, মঈনুল হক চৌধুরী, গোলাম মুজতবা ধ্রুব, সাজিদুল হক, ফয়জুল সিদ্দিকী, ফারহান ফেরদৌস এবং চট্টগ্রাম অফিস থেকে মিন্টু চৌধুরী, মিঠুন চৌধুরী, রাউজান থেকে উত্তম সেনগুপ্ত।]