রামপাল নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে: প্রেসনোট

সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথ উদ্যোগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন ‘অপপ্রচার’ চালাচ্ছে বলে সরকারের এক প্রেসনোটে বলা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2013, 11:13 AM
Updated : 27 Sept 2013, 11:20 AM

রামপাল প্রকল্পের বিরোধিতায় লংমার্চের প্রেক্ষাপটে তথ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সরকারের ব্যাখ্যা দেয়া হলো।

প্রেসনোটে বলা হয়, “কতিপয় ব্যক্তি/সংগঠন সরকারের এ উদ্যোগের বিরুদ্ধে নানারকম অপপ্রচার চালিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। এটি দেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যা জনস্বার্থে সরকার বাস্তবায়ন করছে।”

প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, আগামী ২২ অক্টোবর ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিস্থাপন হবে।

কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে সুন্দরবন হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছে পরিবেশবিদসহ রামপালের বাসিন্দারা।

মঙ্গলবার ঢাকা থেকে লংমার্চ শুরু করে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রবিরোধীরা বলছেন, সুন্দরবন লাগোয়া এলাকায় কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ সুন্দরবনের প্রতিবেশ ধ্বংস করে দেবে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রেসনোটে বলা হয়েছে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার এবং ইউনেস্কোর স্বীকৃত ন্যাশনাল হেরিটেজ সাইট থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে, যাকে ‘নিরাপদ দূরত্বে’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।  

“এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ও উন্নতমানের আমদানিনির্ভর কয়লা ব্যবহারের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।  এতে সাফলার, ফ্লাই অ্যাশ ও অন্যান্য বায়ুদূষণের পরিমাণ ন্যূনতম পর্যায়ে থাকবে, যা পরিবেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।”

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরামর্শ মেনেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে প্রেসনোটে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ সঙ্কটে থাকা বাংলাদেশ সরকার রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ২০১১ সালে সমঝোতা স্মারকের পর ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে। এ কেন্দ্রের নাম দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, যার সমান অংশীদার থাকছে দুদেশই।

প্রেসনোটে বলা হয়, সরকারের রূপকল্প-২০২১ এবং বিদ্যুৎখাতের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০২১ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজন হবে। এই লক্ষ্য সামনে রেখে সরকার তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় গত ৫ বছরে ৫৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে ৯ হাজার ৭১৩ মেগাওয়াটে নিয়ে গেছে, যা এক ‘অনন্যসাধারণ ও অভূতপূর্ব’ সাফল্য।

“বর্তমানে গ্যাসের স্বল্পতা এবং গ্যাসের মজুদ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিকল্প জ্বালানির বিষয়টি বিবেচনা করতে হচ্ছে। সারাবিশ্বে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে স্বল্পখরচে উৎপাদনে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কয়লাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ বিনিয়োগ ১৩২০ মেগাওয়াট এর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করে।”

সরকারের দাবি, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হলে ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থার ‘আমূল উন্নতি’ হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠির জীবনযাত্রার মান ‘আশাতীতভাবে’ বৃদ্ধি পাবে। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপরে ‘দরিদ্র জনগোষ্ঠির নির্ভরশীলতা’ কমে আসবে এবং সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।

আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এ বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রেসনোটে ‘সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিকদের’ সহযোগিতাও চেয়েছে সরকার।