‘রায় রিভিউয়ের সুযোগ নেই’

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছে, তা পুনর্বিবেচনার কোনো আবেদন জানানোর সুযোগ নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2013, 04:30 AM
Updated : 17 Sept 2013, 06:27 AM

মঙ্গলবার রায়ের পরপরই সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তার দেয়া এই বক্তব্য অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের চূড়ান্ত রায়ে ফাঁসির আদেশ হওয়ায় এখন জামায়াতে ইসলামীর নেতার ফাঁসির রশিতে ঝোলা প্রায় নিশ্চিত।

মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, আপিলের রায় হওয়ার পর আইন প্রক্রিয়া শেষ। এখন কাদের মোল্লার সামনে শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা ভিক্ষার সুযোগ রয়েছে।

সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কাছে যদি কাদের মোল্লা ক্ষমার আবেদন করেন, তা নাকচ হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। 

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “সংবিধান সংশোধন করে এই আইন করা হয়েছে। এটি একটি বিশেষ আইন। এই আইনে বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনাল বিচার করবে। বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করা যাবে। এর বাইরে আইনে আর কোনো কিছুর সুযোগ দেয়া হয়নি। তাই রিভিউর কোনো সুযোগ নেই।”

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন বিভাগের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত মাহবুবে আলমের এই বক্তব্য নাকচ করে জামায়াত নেতার আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, রায় পর্যালোচনার আবেদন করার সুযোগ সাংবিধানিকভাবেই রয়েছে।

“রিভিউ করা কাদের মোল্লার সাংবিধানিক অধিকার। এই সুপ্রিম কোর্টও সৃষ্টি হয়েছে সংবিধানের দ্বারা। আইসিটি অ্যাক্টে এই সুপ্রিম কোর্ট সৃষ্টি হয়নি।”

ব্যারিস্টার রাজ্জাকের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, “আমার অভিমত আমি দিয়েছি। রাজ্জাক সাহেব তার অভিমত দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে রিভিউ করা যাবে কি-না, সেটি সিদ্ধান্ত নেবে আদালত।”

দণ্ড কার্যকরের বিষয়ে তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় বের হওয়ার পর তা ট্রাইব্যুনালে যাবে। ট্রাইব্যুনাল সমন জারি করবে। এরপর জেল কর্তৃপক্ষ কারা বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেবে।

Abdul Quader Molla (File Photo)

সরকারের বর্তমান মেয়াদেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকরের ব্যাপক জনদাবির মুখে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেন, বর্তমান মেয়াদেই রায় কার্যকরের বিষয়ে তিনি আশাবাদী।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায় দেয় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আপিল গ্রহণ করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় আপিল বিভাগ, নাকচ করে আসামি পক্ষের আপিল।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এই রায়ের মাধ্যমে আমাদের দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, জাতির কলঙ্ক মোচন হয়েছে। একটা স্বাধীন দেশের জন্য একটি বিরাট বিজয়।

“যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিদেশি সেনাদের সঙ্গে যোগসাজস করে নিজ দেশের মানুষকে হত্যা করেছে, তাদের শাস্তি না হলে স্বাধীনতা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।”

কাদের মোল্লার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সানাউল হক বলেন, “এ রায়ে খুশি বা দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ রায় একটি মাইলফলক হিসেবে থাকবে।”

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

প্রসিকিউটর তুরীন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, “এটি একটি আশাপ্রদ রায়। প্রসিকিউশন টিম দোষ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।”

রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারাও সন্তোষের কথা জানিয়েছেন, যারা গত ৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালের রায়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা জহিরুদ্দিন জালাল (বিচ্ছু জালাল) বলেন, “রায়ের বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কলঙ্ক মুক্ত হবে। এটাই জাতির এখন একমাত্র প্রত্যাশা।”

জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, “এ রায়ের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের বিজয় হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে শাহবাগে তারা লাখো মানুষকে আনতে পেরেছিলেন। শাহবাগের আন্দোলনকারীদের অভ্যুত্থানের ফলেই সুপ্রিম কোর্ট এ রায় দিয়েছে।”

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলীর কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে সকালে সাংবাদিকদের কাছে রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন অধ্যাপক আনোয়ার।

ওই সময় এক আইনজীবী এসে আনোযার হোসেনকে সরে যেতে বললে উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে সেখানে থাকা অন্যদের বাধার মুখে ওই আইনজীবী সরে যান।