একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রথম চূড়ান্ত রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বিচারিক আদালতের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশের সাজা বাড়িয়ে জামায়াতে ইসলামী নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে।
Published : 17 Sep 2013, 09:27 AM
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা শাহবাগ আন্দোলনের পর সংশোধিত আপিল আইনের আওতায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে ‘মিরপুরের কসাই’ নামে পরিচিত এই যুদ্ধাপরাধীর।
স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে ২৬ মার্চ মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলী লস্করের স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা এবং এক মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আপিল বিভাগ সেই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছে এই জামায়াত নেতাকে। প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের বেঞ্চে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এই রায় হয়েছে।
সাত মাস আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ে যারা অসন্তোষ জানিয়েছিল, তারা এবার সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছে, এটাই একাত্তরে নৃশংসতার যথার্থ রায়।
অন্যদিকে রায় প্রত্যাখ্যান করে মিছিল থেকে বিভিন্ন স্থানে বোমাবাজি ও গাড়িতে আগুন দিয়েছে জামায়াতকর্মীরা, দলটি সারাদেশে বুধ ও বৃহস্পতিবার হরতালও ডেকেছে। তারা বলেছে, এটি ‘ভুল’ রায়।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, যুদ্ধাপরাধীদের সাজা দেয়ার অঙ্গীকার করে যারা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে এই বিচারের উদ্যোগ নেয়।
গণজাগরণ মঞ্চসহ যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবির আন্দোলনকারীরা এই রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে সংসদে বক্তব্যে যুদ্ধাপরাধের রায় দ্রুত কার্যকরের কথা বলেছেন।
রায় নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তবে জামায়াত নেতার কৌঁসুলিদের সঙ্গে থাকা বিএনপির আইনজীবী নেতারা বলেছেন, এটি ‘ভুল’ রায়।
মঙ্গলবার আপিল বিভাগের এই রায়ের ফলে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে থাকা কাদের মোল্লার সামনে এখন রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগই অবশিষ্ট রয়েছে বলে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ জানিয়েছেন।
আপিল পর্যালোচনার কোনো সুযোগ নেই বলে আইনমন্ত্রী বললেও আসামি পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের দাবি, সংবিধান অনুযায়ী কাদের মোল্লাও সেই সুযোগ পাবেন।
পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল বিভাগে সেই আবেদন করবেন বলেও জানান জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবীরা।
আপিল বিভাগের রায়ের পর কাদের মোল্লাকে কনডেমে সেলে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কাদের মোল্লা ক্ষমার আবেদন না করলে অথবা রাষ্ট্রপতি তার আবেদন নাকচ হলে তার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে।
কাদের মোল্লা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইলেও তা নাকচ হবে বলে আভাস মিলেছে আইনমন্ত্রীর কথায়। তিনি বলেছেন, এই ধরনের অপরাধের মার্জনা কোনো দেশে হয় না।
কাদের মোল্লা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন কি না, তা পরিবারের বিষয় বলে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার রাজ্জাক জানিয়েছেন।
এই জামায়াত নেতার পরিবারের কোনো প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। স্ত্রী সানোয়ার জাহানসহ সন্তানরা সর্বশেষ গত ৭ সেপ্টেম্বর কাশিমপুর কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করেন।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে একাত্তরে হত্যাকাণ্ডের একটি মামলায় ২০১০ সালের ১৩ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত শুরু হয়।
গত বছরের ২৮ মে বিচার শুরু করে গত ৫ মে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে সাজার রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
গণজাগরণ আন্দোলনের সূচনার দিন ৫ ফেব্রুয়ারি বিকাল। এই জমায়েতই পরে লাখো মানুষের সমাবেশে পরিণত হয়।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি রায়ের পর যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে কারাগারে নেয়া হচ্ছে আব্দুল কাদের মোল্লাকে।
দেশ-বিদেশে ‘বাংলা বসন্ত’ নামে পরিচিতি পাওয়া সর্বস্তরের মানুষের অভূতপূর্ব এই অহিংস সমাবেশ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করার দাবি ওঠে।
তার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সংশোধন করে প্রসিকিউশন ও আসামি উভয় পক্ষের আপিলের সমান সুযোগ তৈরি করা হয়। আগের আইনে শুধু আসামির খালাসের ক্ষেত্রেই প্রসিকিউশন আপিল করতে পারত।
আইন সংশোধনের পর প্রসিকিউশন সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আপিল করে। সাজা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আপিল করেন কাদের মোল্লা।
গত ১ এপ্রিল আপিলের শুনানি শুরু হয়। তখন আসামি পক্ষ প্রশ্ন তোলে, কাদের মোল্লার রায়ের পর আইন সংশোধন হওয়ায় তার ক্ষেত্রে সংশোধিত আইনের প্রয়োগ করা যাবে কি না।
এই বিষয়টির সুরাহায় অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সাত আইনজীবীর বক্তব্য শুনে আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত নেয়, কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে সংশোধিত আইন কার্যকর হবে।
সাড়ে পাঁচ মাস শুনানির পর মঙ্গলবার আসামি পক্ষের আপিল আবেদন খারিজ করে দিয়ে প্রসিকিউশনের আপিল আবেদন গ্রহণ করে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
সংখ্যাগরিষ্ঠতার রায়
প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে।
চারজন বিচারক মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে রায় দিলেও তাতে একজনের দ্বিমত ছিল বলে প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত রায়ে দেখা যায়।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মোট ছয়টি অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে পাঁচটি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
যে একটি অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল বিচারিক আদালত, আপিলের রায়ে তাতে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে। অন্য যে চারটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের শাস্তিই বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।
সংক্ষিপ্ত রায়ে দেখা যায়, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সরকারের করা আপিল চলতে পারে বলে একমত হয়েছেন বেঞ্চের পাঁচ বিচারক। আপিল মঞ্জুর হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে।
রায়ে বলা হয়, ষষ্ঠ অভিযোগে ৪:১ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হল। মৃত্যু পর্যন্ত তাকে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৬ মার্চ কাদের মোল্লা তার সহযোগীদের নিয়ে মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলী লস্করের বাসায় যান। সেখানে কাদের মোল্লার নির্দেশে লস্করের স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা করা হয়। এক মেয়ে হন ধর্ষণের শিকার।
চতুর্থ অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেয়া খালাসের রায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বাতিল করে আপিল বিভাগ। ওই অপরাধে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর কাদের মোল্লা রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কেরানীগঞ্জের ভাওয়াল খানবাড়ি এবং ঘাটারচরে শতাধিক গ্রামবাসীকে হত্যা করেন।
প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও পঞ্চম অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দণ্ড বহালের পক্ষেও ৪:১ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আপিল বিভাগের রায় হয়।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল তার নির্দেশে মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ অনুযায়ী, ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা সহযোগীদের নিয়ে কবি মেহেরুননিসা, তার মা এবং দুই ভাইকে তাদের মিরপুরের বাসায় গিয়ে হত্যা করেন।
কাদের মোল্লা তার সহযোগীদের নিয়ে একাত্তরের ২৯ মার্চ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে আরামবাগ থেকে তুলে নিয়ে জল্লাদখানা পাম্পহাউসে নিয়ে জবাই করে হত্যা করেন বলে তৃতীয় অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, তিনি একাত্তরের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে নিয়ে মিরপুরের আলোকদী গ্রামে যান এবং রাজাকার সদস্যদের নিয়ে গণহত্যা চালান। ওই ঘটনায় নিহত হন ৩৪৪ জনের বেশি।
প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিযোগে কাদের মোল্লার ১৫ বছর করে কারাদণ্ডের রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল। পঞ্চমটিতে হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়। এই দুটি দণ্ডই আপিল বিভাগ বহাল রেখেছে।
আপিল বিভাগের এই রায়কে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ছিল কড়া নিরাপত্তা। র্যাব ও পুলিশের তল্লাশি চৌকি পেরিয়ে সবাইকে আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকতে হয়।
রিভিউ জটিলতা
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের এই রায় পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে কি না- তা নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্যই এসেছে।
সুযোগ নেই বলে অ্যাটর্নি জেনারেল দাবি করলেও কাদের মোল্লার আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আপিল বিভাগের মৃত্যুদণ্ডের রায় পর্যালোচনায় আবেদন করবেন তারা।
রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, এই রায় নিয়ে ‘রিভিউ’ আবেদন করার কোনো সুযোগ নেই। তবে কাদের মোল্লা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন।
তিনি বলেন, “সংবিধান সংশোধন করে এই আইন করা হয়েছে। এটি একটি বিশেষ আইন। এই আইনে বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনাল বিচার করবে। বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করা যাবে। এর বাইরে আইনে আর কোনো কিছুর সুযোগ দেয়া হয়নি। তাই রিভিউর কোনো সুযোগ নেই।”
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন বিভাগের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত মাহবুবে আলমের এই বক্তব্য নাকচ করে জামায়াত নেতার আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রায় পর্যালোচনার আবেদন করার সুযোগ সাংবিধানিকভাবেই রয়েছে।
“রিভিউ করা কাদের মোল্লার সাংবিধানিক অধিকার। এই সুপ্রিম কোর্টও সৃষ্টি হয়েছে সংবিধানের দ্বারা। আইসিটি অ্যাক্টে এই সুপ্রিম কোর্ট সৃষ্টি হয়নি।”
পরে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “কাদের মোল্লার আপিল করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে।
“যেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিধান অনুযায়ী আপিল শুনেছেন (আপিল বিভাগ), তাই এই রায় রিভিউ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
শফিক আহমেদ বলেন, অন্য দেশে এ ধরনের অপরাধে আপিলেরও সুযোগ থাকে না।
আপিল বিভাগে বিশেষ আইন চলে না বলে যে যুক্তি আসামি পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, “বিচার বিভাগ বিশেষ আইনে না চললেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আপিল হয়েছিল।”
‘ঔদ্ধত্যের জবাব’
আপিল বিভাগে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীরা।
মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “ট্রাইব্যুনালের রায়ের দিন কাদের মোল্লা যে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে, ফাঁসির রায় তারই জবাব হয়েছে।”
কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতেই গত ৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ আন্দোলনের সূচনা হয়। আন্দোলনকারীরা এই রায় তাদের আন্দোলনের বিজয় হিসেবে দেখছেন।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “এ রায়ের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের বিজয় হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে শাহবাগে তারা লাখো মানুষকে আনতে পেরেছিলেন। শাহবাগের আন্দোলনকারীদের অভ্যুত্থানের ফলেই সুপ্রিম কোর্ট এ রায় দিয়েছে।”
প্রসিকিউটর তুরীন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, “এটি একটি আশাপ্রদ রায়। প্রসিকিউশন টিম দোষ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।”
রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারাও সন্তোষের কথা জানিয়েছেন, যারা গত ৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালের রায়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছিলেন।
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সহসভাপতি কে এম সফিউল্লাহ বলেন, “এবার যথার্থ রায় হয়েছে।”
রায়ের সন্তোষ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “কাদের মোল্লা একজন কুখ্যাত রাজাকার ছিল, অনেক স্বাধীনতাকামী মানুষকে সে হত্যা করেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী এই রায় হয়েছে বলে আমরা মনে করি।”
সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ বামপন্থী দলগুলো দ্রুত এই রায় কার্যকরের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
কাদের মোল্লার জেলা ফরিদপুরের মানুষও রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত তা কার্যকরের দাবি তুলেছেন।
মামলার ইতিবৃত্ত
মুক্তিযুদ্ধকালে মোস্তফা নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কাদের মোল্লাসহ কয়েকজন জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়।
এছাড়া ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় আরো একটি মামলা হয় কাদেরের বিরুদ্ধে। এ মামলাতেই ২০১০ সালের ১৩ জুলাই জামায়াতের এই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০১১ সালের ১ নভেম্বর কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যা, খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর ২৮ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।
গতবছর ২৮ মে ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি ঘটনায় তার বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক।
দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে। এর পক্ষকাল পর কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল।
কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আপিলের ক্ষেত্রে যে অ্যামিকাস কিউরিদের বক্তব্য শোনে আদালত, তারা হলেন- রফিক-উল হক, এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম, টি এইচ খান, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আজমালুল হোসেন কিউসি ও এ এফ হাসান আরিফ।