বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা নিয়ে বই লেখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

দেশের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেসব পরিকল্পনা করেছিলেন সেসব তথ্য কারো কাছে থাকলে গ্রন্থ আকারে তা প্রকাশ করার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2013, 08:33 AM
Updated : 22 Sept 2021, 02:49 PM

সোমবার এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা বলেন, “আপনাদের অনেকেই আছেন- যারা এ ধরনের তথ্য জানেন। যদি এ ধরনের তথ্যবহুল বই রচনা করে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরেন, তাহলে দেশের মানুষ প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে।”

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিব হোসেন তৌফিক ইমামের ‘বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১-৭৫’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা এই বইয়ে উঠে আসায় লেখককে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এখন থেকে শত বছর পরেও কেউ ইতিহাস জানতে চাইবে। তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা এই বই মেটাবে। এখানে অনেক তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে।”

বাংলাদেশের শুরুর দিনগুলোর কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা কল্পনাও করতে পারেবন না। কতো অল্প সময়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) কতো কাজ করেছেন। একদিকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির মোকাবেলা করা। একদিকে আল্ট্রা লেফটিস্টদের বিপ্লব মোকাবেলা করা। অপরদিকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।”

পরবর্তী সময়ে ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা একটা জেনারেশনকে হারিয়ে ফেলেছি হয়তো। তারা হয়তো বিকৃত ইতিহাস জেনে বিকৃত পথে চলে গেছে। কিন্তু এখন আমাদের তরুণ সমাজ শেকড়ের সন্ধান করে।”

‘বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১-৭৫’ এইচটি ইমামের লেখা দ্বিতীয় বই। ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম বই ‘বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১’।

নতুন বইটি সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, “ওই সময় উনি কেবিনেট সেক্রেটারি ছিলেন। আমি বারবার উনাকে তাগাদা দিয়েছি। ওই সময়ের তথ্যগুলো জানা দরকার। এতো অল্প সময়ের মধ্যে বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে গড়ে তোলা এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে জাতির পিতা যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলেন- তা জনসম্মুখে তুলে ধরা একান্ত দরকার।”

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, স্বল্প পরিসরে সব তথ্য তুলে আনা সম্ভব নয়। তারপরও এইচটিইমাম ‘কষ্ট করে’ তা তুলে এনেছেন।

“বঙ্গবন্ধু যে কর্মযজ্ঞ চালিয়েছিলেন- তা অনেকেই জানেন না। উনি কেবিনেট সেক্রেটারি ছিলেন। উনি তো সব কিছু জানতেন। আগামী দিনের সাফল্যের বীজ কীভাবে বপণ হয়েছিল।”

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরেই আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, নির্যাতিত নারীদের পূনর্বাসন এবং তিন কোটি গৃহহারা মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছিলেন বলেও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

বাকশাল গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক- তাদের বিরুদ্ধ মনোভাবের প্রভাব দেশের ওপর পড়ে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে জাতির পিতা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। সেখানে দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে এক করে আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য তিনি পদক্ষেপ নেন।”

বিজয় অর্জনের তিন মাসের মধ্যে মিত্রবাহিনীও ফিরে যাওয়া এবং অল্প সময়ের মধ্যে জাতিসংঘ, জোট নিরপেক্ষ এবং ওআইসির সদস্যপদ অর্জনের কথাও  অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “জাতির পিতা স্থলসীমা চুক্তি করে যান। তা রেটিফাইও করা হয়। ভারত তা করতে পারেনি।”

শেখ হাসিনা বলেন, তার পিতা চাইতেন দেশপ্রেমিকরাই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাক। দেশপ্রেমিক মানুষ যাতে নির্বাচিত হতে পারে সে ব্যবস্থাও বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন।

“সরকারই নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দেবে। এতো পোস্টার না, একটি পোস্টার হবে। সেখানে সকলের নাম থাকবে। এভাবে কয়েকটা নির্বাচন হয়েছিল। কিশোরগঞ্জের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি নজরুল ইসলাম সাহেবের ভাই আর একজন স্কুল মাস্টার। ওই স্কুল মাস্টারই জয়ী হয়ে এসেছিলেন।”

‘বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১-৭৫’ এর প্রকাশক ও হাক্কানী পাবলিশার্সের স্বত্ত্বাধিকারী গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এইচটি ইমাম ছাড়াও জাতীয় অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমেদ বক্তব্য দেন।

সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানে সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন। ‘বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১-৭৫’ বইটির কিছু অংশ পড়ে শোনান তারানা হালিম। সংগীত পরিবেশন করেন দিলবাহার খান।

মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, রাজনীতিবিদ, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং লেখকের পরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।