সোমবার পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিজেআরআই) আয়োজিত এক সাংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক কামাল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাটকে তুলার বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করতে যে বাধা আছে তা আমাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। এ বাধা দূর করাই এখন আমাদের কাজ।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তোষা পাটের পর এবার দেশি পাটের ‘জীবনরহস্য’ উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞানের অধ্যাপক মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে এর আগে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা তোষা পাট এবং ম্যাক্রোফমিনা ফাসিওলিনা নামে ফসলের ক্ষতিকারক এক ধরনের ছত্রাকের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করে বিশ্বে সাড়া ফেলে দেন।
দেশি পাট নিয়ে তাদের গবেষণার সাফল্যের বিস্তারিত জানাতেই সোমবার বিজেআরআইয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনের পর কামাল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সুতা তৈরির জন্য প্রতিবছর মোট চাহিদার ৯৭ ভাগ তুলা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানির এই পরিমাণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়।
সুতা উৎপাদনের উপযোগী পাটের আঁশ উদ্ভাবন করা গেলে তুলা আমদানির পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন কামাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, এখন ৫০ শতাংশ তুলার সঙ্গে ৫০ শতাংশ পাটের আঁশ মিশিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি হচ্ছে। পাটের জিনোম সিকোয়েন্স হাতে পাওয়ায় এ গবেষণায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
বিজেআরআইর গবেষক মাকসুদুল আলম দেশি পাটের জাত ‘সিভিএল-১’ এর জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছেন। কৃষকদের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং উচ্চ ফলনশীল এ জাতটি ১৯৭৭ সালে অবমুক্ত করে বিজেআরআই।
সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ সুতায় বোনা শাড়ি ও থান কাপড় সাংবাদিকদের দেখানো হয়, যাতে অর্ধেক তুলা ও অর্ধেক পাটের আঁশ ব্যবহার করা হয়েছে।
মাকসুদুল আলমের পাশাপাশি গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক মনিরুল ইসলাম, বিজেআরআই পরিচালক আসাদুজ্জামান এবং গবেষক সামিউল হাসান এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
মাকসুদুল আলম বলেন, “দুই বছর আগে আমরা তোষা পাটের জীবননকশা উন্মোচন করেছিলাম। এবছর আমরা দেশি পাটের জীবননকশা উন্মোচন করতে পেরেছি।”
মাকসুদুল আলম জানান, ‘বেসিক অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড রিসার্চ অন জুট’ প্রকল্পের আওতায় তিনজন আইনজীবী পেটেন্টের জন্য বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করছেন।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই প্রকল্পের অধীনেই ‘প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর’ হিসেবে কাজ করছেন মাকসুদুল।
তিনি জানান, পাট নিয়ে গবেষণার মেধাস্বত্বের বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদারক করছে।
এই গবেষণার ফল কৃষকের হাতে পৌঁছাতে কতোদিন লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আশা করছি আমরা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই গবেষণা শেষ করতে পারব।”
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে গবেষক সামিউল হাসান বলেন, সাধারণ পদ্ধতিতে আগে দেশি পাটের সঙ্গে তোষা পাটের সংকরায়ণ (ক্রস) সম্ভব ছিল না। জিন সিকোয়েন্স জানার ফলে এখন তা সম্ভব হবে।