দেশি পাটের জিনবিন্যাসও উন্মোচিত

তোষা পাটের পর এবার দেশি পাটের জিনোম সিকোয়েন্স জানতে পেরেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2013, 11:01 AM
Updated : 18 August 2013, 03:25 PM

রোববার গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সাফল্যের কথা ঘোষণা করেন। 

পাট নিয়ে এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেয়া বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তোষা পাটের সঙ্গে দেশি পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের কাজও আমাদের বিজ্ঞানীরা শেষ করেছেন। পাটের জিনোমের পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখন আমাদেরই হাতে।

“এটা বাংলাদেশের সম্পদ। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাই এটা আবিস্কার করেছেন।”

এই গবেষণায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞানের অধ্যাপক মাকসুদুল আলম বলেন, “এখন বিশ্বে যেখানে পাট নিয়ে যে গবেষণাই হোক, কেউ আর আমাদের ইগনোর করতে পারবে না। পাটের সমস্ত রহস্য এখন আমাদের হাতে।”

বর্তমানে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের ‘বেসিক অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড রিসার্চ অন জুট’ প্রকল্পের ‘প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর’ হিসেবে কাজ করছেন এই গবেষক।

গবেষণার সার্বিক অগ্রগতি জানাতে সোমবার সকাল ১০টায় পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা কেন্দ্রে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানান মাকসুদুল আলম।

এর আগে প্রথমবারের মতো তোষা পাটের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করে বিশ্বে সাড়া ফেলে দেন এই বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও তার সহকর্মীরা।

এরপর তারা উন্মোচন করেন ম্যাক্রোফমিনা ফাসিওলিনা নামের এক ছত্রাকের জিন-নকশা, যা পাটসহ প্রায় ৫০০টি উদ্ভিদের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা দেয়।

২০১০ সালের ১৬ জুন এবং ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের ওই দুটি সাফল্যের খবর প্রধানমন্ত্রী শেথ হাসিনাই প্রথম দেশবাসীকে জানান। 

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) মহাপরিচালক এমবি কামাল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মাকসুদুল আলম এবার দেশি পাটের জাত ‘সিভিএল-১’ এর জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছেন।

কৃষকদের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং  উচ্চ ফলনশীল এজাতটি বিজেআরআই ১৯৭৭ সালে অবমুক্ত করে।

জিনোম হলো প্রাণী বা উদ্ভিদের জিনেটিক বৈশিষ্ট্যের বিন্যাস বা নকশা। এই নকশার ওপরই নির্ভর করবে ওই প্রাণী বা উদ্ভিদের বৈশিষ্ট। গবেষণাগারে এই জিনবিন্যাস অদল বদল করে উন্নত জাতের পাট উদ্ভাবন সম্ভব। এ কারণে সহজ ভাষায় পাটের জিনোম সিকোয়েন্সকে পাটের জীবন রহস্য বলা হচ্ছে।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক আবু আকবর মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাটের জিনোম সিকোয়েন্স জানার ফলে এখন পাটের ভাল ও খারাপ বৈশিষ্টের জন্য দায়ী জিনগুলোকে আলাদা করা যাবে। নতুন জাত তৈরি করে ফলন বৃদ্ধি করা যাবে।”

একইভাবে রোগ ও কীট প্রতিরোধী নতুন পাট জাত তৈরি করা সম্ভব হবে বলেও আকবর মিয়া জানান।

কৃষকরা এতে কীভাবে উপকৃত হবে- এমন প্রশ্নে আবু আকবর মিয়া বলেন, “উচ্চ ফলনশীল নতুন জাত উদ্ভাবন করা গেলে কৃষকরা তা ব্যবহার করে বেশি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। কীটনাশক ও সার ব্যবহারের খরচও কমে আসবে।”

দেশি পাটের ‘জীবনরহস্য’ উন্মোচনের এই খবর গণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রচারের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আপানাদের কাছে মনে হতে পারে এটা কিছুই না। কিন্তু আগামী প্রজন্মের জন্য এটা অমূল্য সম্পদ।”

বিগত চার দলীয় জোট সরকারের সময় আদমজীসহ কয়েকটি পাটকল বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার এসে বেশ কয়েকটি পাটকল নতুন করে চালু করেছে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, বিমানমন্ত্রী ফারুক খান, পরিবেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বিজ্ঞানী মাকসুদুল হক গবেষণায় সরকারি সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন।

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, চারদলীয় জোট সরকার আমলে এই গবেষকরা সহযোগিতা চাইলেও তা দেয়া হয়নি।

তবে বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সাংবাদিকদের বলেন, এই কাজের জন্য একক কৃতিত্ব দাবি করে সরকার মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে।

দেশীয় পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনে বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়ে সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী মির্জা ফখরুল বলেন, “১৯৭২ থেকে এ পর্যন্ত ধানের ৪২টি নতুন জাত উদ্ভাবন হয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানীরা এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন।আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা এসব নানা উদ্ভাবনী কাজ করে যাচ্ছেন।”