ট্রেনে পাথর ছোড়ে কারা?

রেলপথে প্রায়ই চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে যাত্রীদের আহত করার ঘটনা ঘটলেও এর সুনির্দিষ্ট কোনো ‘কারণ’ জানা নেই রেল কর্তৃপক্ষ বা রেল পুলিশের।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম অফিসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2013, 07:42 PM
Updated : 12 August 2013, 07:58 PM

রাতের বেলা রেল লাইনের আশেপাশে থাকা নেশাগ্রস্ত এবং দিনের বেলা শিশু-কিশোররা এই কাণ্ড করে বলে রেল কর্মকর্তাদের ‘ধারণা’।

অবশ্য কখনো কখনো স্টেশন ছাড়া ট্রেন থামাতেও ট্রেনের দিকে পাথর ছোড়া হয় বলে মনে করছেন কেউ কেউ।  

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নথি বলছে, চলতি বছর দৌলতগঞ্জ, ফাতেমানগর, গেণ্ডারিয়া, মানিকখালি, কসবা, ফৌজদারহাট, সোনাইমুড়ি, লালমাই ও ভাটিয়ারি এলাকায় পাথর ছোড়ার নয়টি ঘটনা ঘটে। এর বাইরেও হর হামেশা এ ধরনের ঘটনা ঘটে বলে রেল যাত্রী ও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এর মধ্যে তিনবার ট্রেনের যাত্রা ২৫ থেকে ৪০ মিনিট পর্যন্ত বিলম্বিত হয়। একাধিক ট্রেনের জানালার কাঁচ ভাঙ্গে। একাধিক ঘটনায় ট্রেনের চালক বা তার সহকারীও আহত হয়েছেন। 

সর্বশেষ গত শনিবার রাতে তূর্ণা নিশীথার জানালা দিয়ে ছোড়া ঢিল মাথায় লেগে নিহত হয়েছেন প্রীতি দাশ নামে ২৪ বছর বয়সী একজন প্রকৌশলী। ব্যাংক কর্মকর্তা স্বামী মিন্টু দাশের সঙ্গে তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন।

একই ট্রেনে থাকা মিন্টুর বন্ধু বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) আবদুল্লাহ আল মামুন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একসঙ্গে কয়েকজন ট্রেনের জানালা লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে। তা না হলে একই সময়ে একাধিক বগিতে পাথর ঢোকা সম্ভব নয়।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তারা বলছেন, শনিবারের ঘটনায় পাথরের আঘাতে আরো তিন যাত্রী আহত হয়েছেন।

রেলওয়ে আইন  অনুযায়ী যাত্রীদের ক্ষতি করতে ট্রেনে পাথর ছুড়লে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। এছাড়া রয়েছে ১০ বছরের জেল থেকে বিভিন্ন মাত্রার অর্থদণ্ডের বিধি। তবে এ আইনে কারো শাস্তি হওয়ার কথা জানাতে পারলেন না রেল কর্মকর্তারা।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের  মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. তাফাজ্জল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাতের বেলায় কারা, কেন ঢিল ছুড়ে মারে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা নেই। কারণ ঢিল মেরে ডাকাতি বা ছিনতাই কিছুই হচ্ছে না।

“হতে পারে কেউ ‘মজা’ করার জন্য পাথর ছুড়ে মারে।”

তাফাজ্জল বলেন, কেউ পাথর ছুড়লে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেন থামাতে ব্রেক কষলেও প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ট্রেন থামবে। তাই দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করা কষ্টসাধ্য।

তিনি বলেন, যেসব এলাকায় এসব ঘটনা বেশি ঘটছে, সেসব স্থানে জনপ্রতিনিধি ও মসজিদের ইমামদের সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করবে রেলওয়ে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা জাকির হোসেন নিজেও চলন্ত ট্রেনে এ ধরনের হামলার মুখোমুখি হয়েছেন। গত ৭ অগাস্ট চট্টলা এক্সপ্রেসে করে চট্টগ্রামে আসার পথে তার ট্রেনে ঢিল পড়ে।

“ব্রাক্ষণবাড়িয়া স্টেশনের একটু পরই কয়েকজন কিশোর গুলতি দিয়ে ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকে। তবে কেন তারা এমন করছে তা বলা কঠিন।”

বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের সুপার (এসপি) নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঢিল ছোড়ার কারণ জানতে তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঠেকানো কঠিন বলেই তার মনে হয়েছে।