সংবাদকর্মীদের বেতন বৃদ্ধি আরো পেছাল

সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থাগুলোর কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে একমত হলেও অষ্টম মজুরি বোর্ডের সুপারিশ অনুমোদন করেনি মন্ত্রিসভা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2013, 08:25 AM
Updated : 5 August 2013, 01:17 PM

ফাইল ছবি

ওই সুপারিশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে তা বাস্তবায়নের জন্য সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ছয় সদস্যর একটি মন্ত্রিসভা কমিটি করে দেয়া হয়েছে।

ওই কমিটি এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে তা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খোন্দকার মো. ইফতেখার হায়দার। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কাযালয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক হয়। পরে অতিরিক্ত সচিব সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান।

তথ্য মন্ত্রণালয় গঠিত অষ্টম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও প্রেস কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি কাজী এবাদুল হক গত ৩০ জুন মন্ত্রণালয়ে তাদের সুপারিশ জমা দেন।

ওই সুপারিশে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্মীদের মূল বেতন আগের তুলনায় গড়ে ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং মূল বেতনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অন্যান্য সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়।

ইফতেখার হায়দার জানান, মজুরি বোর্ডের ওই সুপারিশ মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপনের পর সদস্যরা এরসঙ্গে একমত পোষণ করেন।

“সুপারিশ বাস্তবায়নে সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।” 

তথ্য, স্বরাষ্ট্র, যোগাযোগ, পরিবেশ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদেরও ওই কমিটিতে রাখা হয়েছে। ১৯৯৭ সালের পঞ্চম মজুরি বোর্ডের ‘টিওআর’ অনুযায়ী এই কমিটি সুপারিশ প্রণয়ন করবে বলে অতিরিক্ত সচিব জানান।

অষ্টম বোর্ডে সাংবাদিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও প্রেস শ্রমিকদের জন্য ১৫টি বেতনক্রম নির্ধারণ করা হয়েছে,  যা সপ্তম বোর্ডে নয়টি ক্রমে ছিল।

মজুরি বোর্ডের সুপারিশে রাজধানীর সংবাদপত্রের সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সর্বোচ্চ বেতন ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৮৫০ টাকা থেকে ৫৫ হাজার ৮৫০ টাকা।আর সর্বনিম্ন বেতন ধরা হয়েছে তিন হাজার ৭০০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার ৬১৫ টাকা।

ইফতেখার হায়দার বলেন, “ক ও খ শ্রেণির সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে কেবল বিশেষ গ্রেডভুক্ত সম্পাদক, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। সপ্তম বোর্ডের ২০ হাজার ও ১৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে অস্টম বোর্ডে ৩০ হাজার ও ২৭ হাজার টাকা করতে বলা হয়েছে।”

এছাড়া সব সাংবাদিক, কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মাসিক চিকিৎসা ভাতা এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছে বোর্ড।

এছাড়া কারিগরি ভাতা, নৈশ পরিবহন সুবিধা, আউট ফিট ভাতা, ধোলাই ভাতা, আইট স্টেশন ভাতা, যাতায়াত ভাতা, বদলি ভাতা, কেমিক্যাল পয়জনিং ভাতা, আনুতোষিক (গ্রাচুইটি) ও আপ্যায়ন ভাতাও বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়েছে বলে অতিরিক্ত সচিব জানান।

মফস্বল সাংবাদিকদের বোর্ডে বিশেষ সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, “তাদের মাসিক রিটেইলার ভাতা তিন হাজার ৫শত টাকা, যাতায়াত ভাতা এক হাজার ৫০০ টাকা, বছরে দুটি উৎসব ভাতা, যা রিটেইলার ভাতার সমপরিমাণ এবং মাসিক চিকিৎসা ভাতা এক হাজার টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সপ্তম মজুরি বোর্ডে সংবাদপত্রগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছিল। অষ্টম বোর্ডে তা পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, “যেসব সংবাদ পত্র রোয়েদাদ বাস্তবায়ন করবে না তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবে না। অষ্টম মজুরি বোর্ড বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে ত্রিপক্ষীয় একটি মনিটিরিং টিম ও প্রতিটি জেলায় একই রকম টিম থাকবে, যার মেয়াদ হবে দুই বছর।”

আগের মতো অষ্টম বোর্ডও মালিক পক্ষের মাধ্যমে সংবাদকর্মীদের আয়কর পরিশোধের ব্যবস্থা করতে বলেছে।

সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থাগুলোর কর্মীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে গত বছর ১৮ জুন এই ওয়েজ বোর্ড গঠন করে সরকার। এরপর অক্টোবরে আসে ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্যভাতার ঘোষণা, যা ২০১২ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করতে বলা হয়।