যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক মিল্কি হত্যাকারী হিসেবে ‘চিহ্নিত’ এইচ এম জাহিদ সিদ্দিক তারেক ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়েছেন।
Published : 31 Jul 2013, 10:28 PM
বুধবার রাতে রাজধানীর খিলক্ষেতের কাছে ‘ক্রসফায়ারের’ এই ঘটনা ঘটে বলে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক জিয়াউল আহসান জানিয়েছেন।
তারেক ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে গুলশানে গুলিতে নিহত মিল্কি ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক।
মিল্কি যেখানে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, সেই বিপণি বিতানের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধারণ করা ছবি দেখে র্যাব বলেছিল, তারেকই মিল্কির খুনি।
তারেককে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হলেও তিনি রাজধানীর উত্তরার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সেখান থেকে রাত ১০টার দিকে তাকে গুলশান থানায় আনার পথে তার সহযোগীরা র্যাবের ওপর ‘হামলা’ চালায় বলে জিয়াউল আহসান জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারেককে ছিনিয়ে নিতে দুর্বৃত্তরা র্যাবের ওপর হামলা চালায়। তখন দুই পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। এতে তারেকসহ দুজন মারা যায়।”
নিহত অন্যজনের নাম শাহ আলম। তিনি ‘হামলাকারী’ দলের একজন বলে র্যাব জানিয়েছে।
‘বন্দুকযুদ্ধে’ র্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন বলে জিয়াউল আহসান জানিয়েছেন।
বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিউল ইসলাম মোল্লা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কাওলা ওভার ব্রিজের কাছে বিমানবন্দর সড়ক লাগোয়া একটি বাগানে লাশ দুটি পাওয়া যায়।
বিমানবন্দর থানার ওসি শামসুদ্দিন ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, “দুটি মোটর সাইকেল ও একটি গাড়িতে করে এসে র্যাবের গাড়িতে হামলা চালায় সন্ত্রাসী দল।”
র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, “হামলাকারীরা প্রথমে তাদের গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় এবং এরপর ভেতর থেকে গুলি ছোড়া শুরু হয়।”
ঘটনাস্থলে গিয়ে সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকার দেখা যায়, যার সামনের অংশের কাচ ছিল ভাঙা। একটি মোটর সাইকেলও ছিল সেখানে। আরেকটি ধূসর রঙের মাইক্রোবাস দেখা যায়, যাতে করে র্যাব তারেককে নিয়ে যাচ্ছিল।
১০ সিটের মাইক্রোবাসটির চালকের পেছনের সিটে তারেকের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ছাই রঙের টিশার্ট ও সাদা পাজামা পরা তারেকের পেটে গুলির দাগ দেখা যায়, চোখ ছিল ফোলা।
মাইক্রোবাসটিতে নয়টি গুলির দাগ দেখা যায়, তবে তার সবগুলোই কাচে। এর মধ্যে আটটি ডান পাশে এবং একটি সামনের দিকের কাচে।
নিহত আরেক জনের নাম জানা গেল কিভাবে- জানতে চাইলে র্যাবের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, “অন্য সন্ত্রাসীরা পালানোর সময় তার নাম ধরে ডাকছিল।”
র্যাব কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “সন্ত্রাসীদের হামলায় ডিএডি আবুল কালাম আজাদ ও নায়েক আসাদুজ্জামান আহত হয়েছেন। তারা সিএমএইচে চিকিৎসা নিচ্ছেন।”
মিল্কি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার ভাই মেজর রাশিদুল হক খান গুলশান থানায় যে মামলা করেছেন, তাতে আসামির তালিকায় তারেকের নামও ছিল।
মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে মিল্কিকে হত্যার পর ভোরেই উত্তরার একটি হাসপাতাল থেকে তারেককে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
কয়েক মাস আগে নতুন কমিটি গঠনের পর থেকে সংগঠনে কর্তৃত্ব নিয়ে সরকার সমর্থক যুব সংগঠনটির এই শাখার নেতাদের মধ্যে বিভেদ দেখা দেয়।
যুবলীগের কয়েকজন নেতা জানান, এর এক পক্ষের নেতৃত্বে সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের সঙ্গে ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক মিল্কি। অন্যপক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল ইসলাম আরিফের সঙ্গে ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারেক।
তারা জানান, সম্রাট সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়লে মিল্কির একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে বলে প্রতিপক্ষ মনে করছিল।
তারেককে মঙ্গলবার ভোরে গ্রেপ্তার করা হলেও তিনি উত্তরায় হাসপাতালেই ছিলেন। বুধবার রাতে তাকে বের করে গুলশান থানায় নেয়ার পথে ঘটে ‘ক্রসফায়ার’।
সংগঠনের এক নেতার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর তারেককে বুধবারই বহিষ্কার করে যুবলীগ। তারেকের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তরের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চলকেও সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
মিল্কি হত্যাকাণ্ডের সময় শপার্স ওয়ার্ল্ডের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা চিত্রে দেখা যায়, রাত ১টার দিকে বিপণি বিতানটিতে ঢোকার মুখে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মিল্কিকে গুলি করে মোটর সাইকেলে করে পালিয়ে যায় সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরা এক যুবক।
তারেক ছাড়াও আরো ছয়জনকে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের বুধবার আদালতের অনুমতি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে গুলশান থানা পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গুলশান থানায় করা মামলাটি পুলিশ তদন্ত করলেও তার দায়িত্বভার নিতে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে র্যাব।
জিয়াউল আহসান বুধবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলাটি থানা পুলিশের পরিবর্তে র্যাবকে দিয়ে তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই অনুমতি পাওয়া যাবে।”
এদিকে ওই হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তারেকের ব্যবহৃত অস্ত্রটি বুধবার পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি। অস্ত্রটি হাতবদল হয়েছে বলে র্যাব জানতে পেরেছে।
নিহত মিল্কির জানাজা বুধবার বিকালে মতিঝিল এজিবি কলোনিতে হয়। এরপর তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।