প্রথম মন্ত্রী, যাচ্ছেন ফাঁসিকাষ্ঠে

স্বাধীনতার পর এই পর্যন্ত মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারীদের মধ্যে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদই আপিল বিভাগের রায়ে সর্বোচ্চ সাজা পেলেন।

সুলাইমান নিলয়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2013, 05:40 AM
Updated : 16 June 2015, 12:51 PM

যুদ্ধাপরাধের মামলায় এই জামায়াত নেতার মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল করে মঙ্গলবার আপিল বিভাগ রায় দেয়। একাত্তরের আল বদর নেতাকে এই সাজা দেওয়া হয়েছে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায়ে। 

বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া প্রথম মন্ত্রীর রেকর্ডটিও মুজাহিদের দখলে, ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই যা দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত এই জামায়াত নেতা ২০০১ সালে গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলেছিলেন, যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ছিল বাংলাদেশের মানুষের।

বুদ্ধিজীবীসহ গণহত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধনের অভিযোগে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ওই দণ্ড কার্যকর করার যে রায় ট্রাইব্যুনাল দিয়েছিল, তাই বহাল রয়েছে আপিল বিভাগে।

২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ট্রাইব্যুনালে মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর সেই সময়কার অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমানও বলেছিলেন, বাংলাদেশে এর আগে কোনো মন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড হয়নি।

“অবশ্য আজও কোনো মন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড হয়নি। আজ এক নিকৃষ্ট যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড হয়েছে,” বলেছিলেন তিনি।

“৩০ লাখ শহীদের রক্তে যারা দেশকে ভাসিয়েছে, সেই রক্তে অর্জিত দেশে তার মন্ত্রিত্ব এদেশের মুক্তিকামী মানুষ কোনোদিন মানতে পারেনি, পারবেও না।”

ট্রাইব্যুনালে রায়ের পর কারাগারে নেওয়া হচ্ছে আলী আহসান মুজাহিদকে

 

ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর তৎকালীন কারা উপ-মহাপরিদর্শক গোলাম হায়দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার জানা মতে, এটাই প্রথম সাবেক কোনো মন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড।”

মুজাহিদের আগে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে কয়জন জামায়াত নেতার মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়েছে, তাদের কেউ মন্ত্রী ছিলেন না।

তবে ট্রাইব্যুনালে মুজাহিদের ওই রায়ের পর বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড হয়, যাদের মধ্যে চারজন বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।

তাদের মধ্যে আব্দুল আলীম, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মতিউর রহমান নিজামী মন্ত্রী এবং সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

আলীম মন্ত্রী ছিলেন জিয়াউর রহমানের আমলে, সালাউদ্দিন কাদের এরশাদ আমলে মন্ত্রী ছিলেন এবং পরে খালেদা জিয়ার আমলে মন্ত্রীর মর্যাদায় উপদেষ্টা ছিলেন।

এদের মধ্যে ২০১৩ সালে দেওয়া দুই রায়ে সালাউদ্দিন কাদেরের মৃত্যুদণ্ড এবং আলীমের আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ হয়। পরের বছর নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। একই বছর এরশাদ সরকারের প্রতিমন্ত্রী কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়।

দলের এক সভায় আলী আহসান মুজাহিদ; পাশে থাকা সহকর্মী মো. কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের সাজা ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে

যুদ্ধাপরাধে ফাঁসির রায়ের আগেই ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের মামলায় নিজামীর মৃত্যুদণ্ড হয়। ওই মামলায় তার সঙ্গে বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকেও মৃত্যুদণ্ড দেয় চট্টগ্রামের একটি আদালত।

জামায়াত আমির নিজামী ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে পর্যায়ক্রমে কৃষি ও শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। ওই মন্ত্রিসভায়ই টেকনোক্রেট হিসেবে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ।

একাত্তরে ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রাদেশিক প্রধান হিসেবে আল বদর বাহিনীর নেতৃত্বে চলে আসেন মুজাহিদ। এই দলটি পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিল।

ফরিদপুরে ১৯৪৮ সালের ২ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া মুজাহিদ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর আড়ালে থাকলেও পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

ফরিদপুর থেকে সংসদ সদস্য হতে কয়েকবার প্রার্থী হলেও একবারও ভোটে জিততে পারেননি মুজাহিদ। এরপর ২০০১ সালে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করলে জোটসঙ্গী দল থেকে টেকনোক্রেট মন্ত্রী করেছিলেন তাকে।