প্রসিকিউশনের কাজে অসন্তোষ ট্রাইব্যুনালের

যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় দিতে তিন মাস দেরির জন্য প্রসিকিউশনের জমা দেয়া নথিপত্রের অপর্যাপ্ততাকে দায়ী করেছে ট্রাইব্যুনাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2013, 11:48 AM
Updated : 15 July 2013, 11:48 AM

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আগের রায়গুলো একমাসের মধ্যে দেয়া হলেও জামায়াতে ইসলামীর এই সাবেক আমিরের বিরুদ্ধে মামলার রায় গত ১৭ এপ্রিল থেকে অপেক্ষমান ছিল।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উস্কানি, সহযোগিতা এবং হত্যা-নির্যাতনে বাধা না দেয়ার পাঁচ ধরনের অপরাধের দায়ে সোমবার গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

গুরুত্বপূর্ণ এই বিচারের রায় দিতে দেরিকে কেন্দ্র করে জল্পনা-কল্পনা ও উদ্বেগের কথা স্বীকার করে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর বলেন, “গণমাধ্যমে এবিষয়ে সমালোচনা হয়েছে।”

অন্যগুলোর চেয়ে দুটি কারণে গোলাম আযমের মামলাটি আলাদা ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, তিনি (গোলাম আযম) অপরাধ সংঘটনের স্থলে শারীরিকভাবে উপস্থিত ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ উপস্থাপন হয়নি। দ্বিতীয়ত, এমন কোনো অভিযোগও ছিল না যে তিনি যুদ্ধাপরাধ সংঘটনে সক্রিয়ভাবে নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

বিচারক বলেন, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে জমা দেয়া দলিলের বেশির ভাগই নথিভিত্তিক, প্রধানত সংবাদ প্রতিবেদন।

“বই, গবেষণা বা সাময়িকীর নিবন্ধের মতো আরো অ্যাকাডেমিক জিনিসপত্র প্রসিকিউশন জমা দিলে আরো ভাল হত।”

বিচারপতি কবীর বলেন, শুধুমাত্র সংবাদ প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করা সম্ভবত অজ্ঞোচিত হবে। কারণ, ওগুলো ঘটনার পর পর লেখা হয়েছে, যাতে প্রতিবেদক গভীরভাবে চিন্তা করার সুযোগ পায়নি।

তিনি বলেন, “বই ও সাময়িকী হলে, আলাদা কথা ছিল। লেখকরা ঘটনা বিশ্লেষণে অনেক সময় নেন এবং তা নিয়ে গবেষণা করেন, যাতে তাদের কাজ আরো নির্ভরযোগ্য হয়।

“ডকুমেন্ট বলতে আসলে সেরকম কিছুই দেয়নি প্রসিকিউশন। প্রসিকিউশনের নথিপত্র একেবারেই যথেষ্ট ছিল না।”

দুই ট্রাইব্যুনালের একমাত্র গ্রহণযোগ্য নথিপত্র বলতে ‘মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রে’র একটি ভলিউমই ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ফজলে কবীর বলেন, “রায়টাকে আরো সমৃদ্ধ করতে আমরা নিজেরাই নথি জোগাড় করেছি। আমাদের নিজেদের সন্তুষ্ট হওয়ার দরকার ছিল। একটি উন্নততর রায়ের জন্যও এটা প্রয়োজনীয় ছিল।”

তিনি বলেন, “এতে আমাদের অনেক সময় যায়। একারণেই রায় দিতে আমাদের তিন মাস লাগে। তারপরও আমরা যে পুরো সন্তুষ্ট সে কথাও অবশ্য বলা যায় না।”

তবে নথিপত্রের অপর্যাপ্ততার কথা স্বীকার না করলেও এর দায়িত্ব তদন্ত সংস্থার ঘাড়ে দিয়েছেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনাল বলেছে আরো নথিপত্র দিলে ভাল হতো। তদন্ত সংস্থা যে সমস্ত দালিলিক প্রমাণ তাদের কাছে দিয়েছেন, তাই তারা ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছেন।