শোভাযাত্রার সরঞ্জামে ‘কোটাবিরোধীদের’ আগুন

বিসিএসসহ সব পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলন চলাকালে চারুকলার শিক্ষার্থীদের তৈরি করা মঙ্গল শোভাযাত্রার শোলার পাখি ও টেপাপুতুলে আগুন দেয়া হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2013, 10:10 AM
Updated : 11 July 2013, 10:10 AM

এই আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের ইন্ধন রয়েছে বলেও অভিযোগ করে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ ও ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ নামের দুটি সংগঠন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহবাগ অবরোধের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পুলিশের ধাওয়ায় চারুকলা অনুষদের দিকে পিছিয়ে আসে আন্দোলনকারীরা। এ সময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে।

এক পর‌্যায়ে আন্দোলনকারীরা পিছিয়ে এসে নাটমণ্ডলের সামনে থাকা গত পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ রাস্তায় এনে অবরোধ করে। পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়তে থাকলে আন্দোলকারীরা শোলার পাখিসহ কয়েকটি মোটিফে আগুন দেয়।

সোমাবার ৩৪ তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর তা নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। পরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে বুধবার ওই ফলাফল পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি।

কিন্তু সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবারও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ ছাড়াও বিক্ষোভকারীরা উপাচার্যের বাসভবন, প্রক্টর কার্যালয়ে ভাংচুর করে।

তবে মঙ্গল শোভাযাত্রার উপকরণে আগুন দেয়ার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়ে এই আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতেও ‘আন্দোলন ত্যাগের’ ঘোষণা দেন অনেকে।

প্রথম দিন এ আন্দোলনে সমর্থন দিলেও বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়ি ও প্রক্টরের কার্যালয়ে হামলার পর ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, “এই আন্দোলন দাবি আদায়ের জন্য নয়, বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির জন্য।”

তিনি বলেন, “গতকাল যে দাবি ছিল তাতে আমি সমর্থন দিয়েছি এবং পিএসসি তা সংশোধনও করেছে। এখন আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে জামায়াত-শিবির হামলা চালাচ্ছে। উপাচার্যের বাসভবন ভাংচুর, প্রক্টর অফিস ভাংচুর তারই প্রমাণ দেয়।”

‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ এর এক বিবৃতিতে বলা হয়, “যারা মুক্তিযোদ্ধা ও নারী কোটা বাতিল চায় তারা সাধারণ ছাত্রের নামধারী জামায়াতের দোসর।”

সাধারণ ছাত্রের লেবাসে ‘শিবিরের নেতাকর্মী এবং পশ্চাৎপদশীল কিছু লোক’ এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন, জাসদ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীসহ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের জোট ছাত্র সংগ্রাম পরিষদও বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় ইন্ধন দিয়েছে জামায়াত-শিবির।

ফেইসবুকে শরীফ মোহাম্মদ জারিফ নামে একজন তার পাবলিক স্টাটাসে বলেন, “কিছুক্ষণ আগে দেখলাম চারুকলার পাখি পোড়ানো হয়েছে । চারুকলার জিনিসপত্রে হাত লাগানোর সাহস আপনাদের কে দিল? মুক্তিযোদ্ধাদের গালে গালে জুতা মারার স্লোগানও নিয়মিত বিরতিতে শোনা গেছে। এইসব কীসের আলামত তা আমরা জানি।”

শিবলী সরকার নামে আরেকজন ফেইসবুক লিখেছেন, “দুঃখিত... শাহবাগে যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছেন তাদের প্রতি সহমত ছিলাম, কিন্তু কিছুক্ষণ আগে যা শুনলাম তাতে বিবেকের তাড়নায় আর সমর্থন করতে পারছি না। এবং এটাও স্পষ্ট হয়ে গেছে যে এই আন্দোলনে শিবির ঢুকে গেছে।”