‘কোটাবিরোধী আন্দোলন জামায়াত-শিবিরের ইন্ধনে’

শাহবাগে কোটাবিরোধী আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর দোসররা জড়িত বলে অভিযোগ করেছে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ নামে একটি সংগঠন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2013, 08:07 AM
Updated : 11 July 2013, 10:07 AM

আর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় ইন্ধন দিয়েছে জামায়াত-শিবির।

শনিবার মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ওই সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়, “যারা মুক্তিযোদ্ধা ও নারী কোটার বাতিল চায় তারা সাধারণ ছাত্রের নামধারী জামায়াতের দোসর।”

“সাধারণ ছাত্রের লেবাসে শিবিরের নেতাকর্মী এবং পশ্চাৎপদশীল কিছু লোক এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে।”

সোমাবার ৩৪ তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর তা নিয়ে চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। পরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে বুধবার ওই ফলাফল পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি।

ফল পুনর্বিবেচনার ঘোষণা দিলেও সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে।

বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, ৩৪ তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিতেই কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে ফল প্রকাশ করায় ভালো পরীক্ষা দেয়ার পরও কেউ কেউ বাদ পড়ে গেছেন।

আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গোলাম আযম ও মুজাহিদের রায় যখন অপেক্ষমান তখন আন্দোলনের নামে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের জায়গায় অবস্থান নেয়ার পিছনে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে।

এই আন্দোলনকে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা চলমান আন্দোলনকে ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র বলেও অভিযোগ তাদের।

অন্যদিকে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ দাবির সঙ্গে তাদের বিরোধ নেই, তারাও কোটা পদ্ধতির সংস্কার চান।

ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, “সম্পূর্ণ কোটা পদ্ধতি বিলোপ নয়, সংস্কার করতে হবে। তবে এই দাবি আদায়ে তাণ্ডব চলতে পারে না।”

কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এর সঙ্গে জামায়াত শিবির জড়িত।”

এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তিও দাবি করেন সোহাগ।

আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে কোনো হামলা হয়নি। তবে কেউ ব্যক্তিগতভাবে হামলা চালালে তার দায়িত্ব আমরা নিব না।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জয়দেব নন্দী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামসুল কবির রাহাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক ওমর শরিফ, ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু, সাধারণ সম্পাদক তানভীর রুসমত, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি সামসুল ইসলাম প্রমুখ।

এদিকে এর পরই একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করে কোটা পদ্ধতির সংস্কার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হামলাকারী পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবি জানায় প্রগতিশীল ছাত্রজোট।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এস এম শুভ বলেন, কোটা নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ নতুন কোন বিষয় নয়। সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ নিয়োগ হয় কোটার মাধ্যমে আর ৪৪ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে। এই অনুপাত আমরা বৈষম্যমূলক মনে করি।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের উপর টিয়ারশেল ও গুলি নিক্ষেপ এবং এ বিষয়ে প্রশাসনের নীরব ভূমিকা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকন, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি সৈকত মল্লিক, ঢাবি শাখার সভাপতি সামিয়া রহমান, ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি শাখার সভাপতি পিনাকী রায় পিন্টু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।