জাতীয় সংসদে প্রতিটি ‘অশালীন’ শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যকে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করার দাবি উঠেছে।
Published : 24 Jun 2013, 06:51 AM
সোমবার সংসদে কার্যপ্রণালী বিধির ২৭৪ ধারা অনুযায়ী ব্যক্তিগত কৈফিয়ত দিতে গিয়ে এ দাবি জানান ক্ষমতাসীন দলের তরুণ সাংসদ জুনাইদ আহমেদ পলক।
সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাংসদরা টেবিল চাপড়ে তার বক্তব্য সমর্থন করেন।
জুনাইদ বলেন, “দুতিন জন সংসদ সদস্যের অশ্লীল, অশালীন ও অসংসদীয় বক্তব্যের কারণে ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মানহানি হচ্ছে। সংসদের অমর্যাদা হচ্ছে।
বিরোধী দলের রেহেনা আক্তার রানু, সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়া, শাম্মী আখতার এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নাজমা আক্তার, অপু উকিল, ফজিলাতুন নেছা বাপ্পীর পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে সংসদে উত্তাপ ছড়ায়।
অধিবেশন চলাকালে এ ধরনের ‘অশালীন’ ভাষা বন্ধে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে রুলিংও দিতে হয়। তাতে কাজ না হওয়ায় রোববার রানুর মাইক ছয়বার বন্ধ করে দেন স্পিকার।
বিরোধী দলের উদ্দেশে জুনাইদ বলেন, “তাদের অশ্লীল শব্দের উত্তর দিতে গিয়ে বাজেট আলোচনার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তারা অপকৌশল নিয়েছে- যেন আমরা সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরতে না পারি। আমরা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের মানহানি আর দেখতে চাই না। তাদের কটাক্ষের কারণে রাজনীতি আজ কলুষিত।”
এই সাংসদ বলেন, সংসদে প্রতি মিনিট বক্তব্য দিতে গিয়ে ‘জনগণের ঘামে ঝরা’ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। এ সংসদে শিশু গ্যালারি রয়েছে।
“এরপরও কয়েকজনের বক্তব্যের কারণে পুরো সংসদের ‘মর্যাদাহানি’ হচ্ছে। তারা রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি ডিফিকাল্ট করছেন।”
“অশালীন ভাষা ব্যবহারকারী এই সাংসদদের কারণে ফেইসবুকে ৩৭ লাখ তরুণ বলছে ‘উই হেইট পলিটিক্স অ্যান্ড পলিটিশিয়ান’। দুই তিনজন সাংসদ ৩৫০ জন সদস্যের মানহানি করেছে। জনগণ তা আর দেখতে চায় না।”
অসংসদীয় বক্তব্য বন্ধে স্পিকারকে কঠোর হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জুনাইদ বলেন, “এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। তাদের বক্তব্যে আমরা যেন অপমানিত না হই। অসংসদীয় বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করুন। শুধু এক্সপাঞ্জ করেই শেষ করা যাবে না; কারণ এর আগেই সরাসরি সম্প্রচারে তা পৌঁছে যাচ্ছে। প্রতিটি শব্দের জন্য ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করুন।”
অশালীন বক্তব্য দিলে অন্তত একদিনের জন্য হলেও সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যকে অধিবেশন থেকে বহিষ্কারের অনুরোধ জানান জুনাইদ।
সংসদ অধিবেশনে সরকারি দল ও বিরোধী দলের একসঙ্গে উপস্থিত থাকার এই ছবি গত জুন মাসের।
কটূক্তিকারী সংসদ সদস্যদের গণমাধ্যমে নিরুৎসাহিত করার আহ্বান জানিয়ে জুনাইদ বলেন, “তাদের বক্তব্য প্রথম বা শেষ পৃষ্ঠায় প্রকাশ করে উৎসাহিত করবেন না।”
ব্যক্তিগত কৈফিয়ত দিতে গিয়ে এ সাংসদ বলেন, “রোববার খুলনার সাংসদ নজরুল ইসলাম মঞ্জু অভিযোগ করেছেন আমি অসংসদীয় বক্তব্য দিয়েছি। অথচ কোনো জাতীয় নেতার নামে কোনো কটূক্তি করিনি।”
ব্যক্তিগত কৈফিয়ত দিতে গিয়ে বিরোধীদলীয় সাংসদ বিজেপির সদস্য আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, তার বিরুদ্ধে যে ব্যক্তিগত আক্রমণ হচ্ছে তাতে তার সামাজিক অবস্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পারিবারিক ঐতিহ্য কোনো কিছুই ‘পারমিট’ করে না’।
“আমি বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্য দিয়ে কথা বলেছি। এতে কয়েকজন সদস্যের নাম চলে আসতে পারে। আমার জন্মের ওপরে তো আমার হাত নেই। আমার মৃত বাবার সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে, তাতে মনে হয় তার সন্তান হয়ে আমি অপরাধ করেছি। বাবা-মা- কে কী পড়েছে তা নিয়ে কথা বলা দুঃখজনক।”
ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী গত ১৭ জুন পার্থকে তার বাবার আয়ের উৎস সম্পর্কে জেনে আসতে বলেন। অন্যদিকে পার্থ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরতে গিয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ও দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে জড়িয়ে কথা বলেন।
অসংদীয় বক্তব্য রোধে একটি কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে পার্থ বলেন, “সংসদে শিশু গ্যালারি রয়েছে। জনগণ দেখছে। অশালীন বক্তব্য শিখছে তারা।”
প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতার পরিবারের প্রতি ‘আক্রমণাত্মক’ বক্তব্য এলে সংসদ সদস্যরা ‘রীতিনীতি’ ভুলে যান বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদে দিনের কার্যসূচি শুরু হয়।