দুদক এখনো নখদন্তহীন, মানলেন চেয়ারম্যান

গত চার বছরে দুর্নীতি দমন কমিশন যে শক্তিশালী ও কার্যকর কোনো প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়াতে পারেনি, বিদায় বেলায় তা স্বীকার করে নিলেন দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান।  

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2013, 07:44 AM
Updated : 19 June 2013, 10:10 PM

বুধবার দুদক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “চার বছর আগে আমি যখন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন বলেছিলাম, দুদক একটা টুথলেস টাইগার। এই চার বছরে পরিস্থিতির খুব অগ্রগতি হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।”

‘আইনগত সীমাবদ্ধতা ও বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা’ দুর্নীতি দমনে দুদকের সাফল্যের পথে অনেক বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উপলব্ধি তার।

দুদক কার্যালয়ে চেয়ারম্যন হিসাবে এটাই ছিল সাংবাদিকদের সঙ্গে গোলাম রহমানের বিদায়ী সাক্ষাৎ। চলতি মাসের ২৩ জুন দুদক চেয়ারম্যানের পদ থেকে অবসর নেবেন গোলাম রহমান।

২০০৯ সালের ২৩ জুন তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়িত্ব নেয়ার পর হলমার্কের ২৬ শ’ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি, ডেসটিনির ৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা পাচার এবং রেলের ‘নিয়োগ বাণিজ্যের’ মতো আলোচিত দুর্নীতির ঘটনার তদন্ত শুরু করেন দুদক কর্মকর্তারা। এর একটি ঘটনাতেও এখনো চূড়ান্ত বিচার হয়নি।     

এছাড়া দেশে বিদেশে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলার তদন্তও দুদকের মাধ্যমেই চলছে। এই মামলার প্রক্রিয়া ও তদন্ত যথাযথভাবে চলছে না বলে ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলেছে বিশ্ব ব্যাংক।     

সংস্থার নির্বাহী প্রধান হিসেবে দুদকের সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়নে গোলাম রহমান বলেন, “দায়িত্ব শেষ করার পর যদি দেখতে পেতাম, দুর্নীতিগ্রস্ত অন্তত একশ-দেড়শ গুরুত্বপূর্ণ মানুষ দুর্নীতির দায়ে সাজা খাটছেন, তাহলে বলতে পারতাম আমি সফল।”

তবে এই খেদের পরও তিনি মনে করেন,  দুদক এখন জনগণের মধ্যে ‘আস্থার একটি জায়গা’ তৈরি করতে পেরেছে।

আইনগত সীমাবদ্ধতার বিষয়টি উল্লেখ করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, “হলমার্ক, ডেসটিনি এক একটি বিশাল দুর্নীতির ঘটনা। এ দুটো ক্ষেত্রেই আমি দ্রুত সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলাম। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এছাড়া দুদক আইন অনুযায়ী কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে এফআইআর দাখিল পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। এর ফলে আসামিরা কিছু বাড়তি সময় পেয়ে যায়।”

তবে দায়িত্বপালনকালে ‘কাউকে ছাড় দেয়ার’ কোনো মানসিকতা তার ছিল না বলে দাবি করেন গোলাম রহমান।

এ প্রসঙ্গে পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “আমরা সবসময়ই সর্বোচ্চ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে অনুসন্ধান ও তদন্তের চেষ্টা করেছি। উনারা (বিশ্বব্যাংক) বিভিন্ন সময়ে যে কথা বলেছেন, সেটাই সঠিক, সে অনুযায়ীই কাজ করতে হবে- এটা আমার কাছে গ্রহনযোগ্য নয়।”

পদ্মা সেতুর পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দিতে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দুদক যে তদন্ত চালিয়েছে, তা পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ ছিল না বলে ইতোমধ্যে মত দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংকের পর্যবেক্ষক দল।

লুইস মোরেনো ওকাম্পো নেতৃত্বাধীন ওই পর্যবেক্ষক প্যানেল গত ডিসেম্বরে  ঢাকায় এসে দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং তাদের তদন্ত পর্যবেক্ষণ করেন।

সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদন সরকারের হাতে আসে। মঙ্গলবার ওই প্রতিবেদন নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে বিশ্ব ব্যাংক।

তাতে বলা হয়, “বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে অতিরিক্ত তথ্য পেয়ে দুদক যথার্থভাবেই এই ষড়যন্ত্রমূলক অপরাধের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আট ব্যক্তির মধ্য থেকে সাতজনের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।কিন্তু তদন্তের প্রাথমিক তালিকা থেকে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর (সৈয়দ আবুল হোসেন) নাম বাদ দেয়ার কোনো আইনগত যুক্তি নেই।”

বিশ্ব ব্যাংক কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেই তাকে আসামি করতে হবে- এমন ভাবনা যৌক্তিক নয় মন্তব্য করে গোলাম রহমান বলেন, “দুদক একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। দুদক তার আইন অনুযায়ীই চলবে।”