কালীগঞ্জে ইভিএম নয়, ভবিষ্যতেও অনিশ্চিত

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিকল হওয়ায় কালীগঞ্জ পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2013, 05:56 AM
Updated : 13 August 2014, 03:06 AM

সেই সঙ্গে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ ভবিষ্যতে চলবে কি না, তিন বছরের মাথায় তা-ও পড়েছে অনিশ্চয়তায়।

বৃহস্পতিবার গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। তাতে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে না বলে সোমবার কমিশন বৈঠকের পর জানিয়েছেন ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা) ফরহাদ হোসেন।

ওই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালটে ভোট নেয়ার ব্যবস্থা নিতে ইসি চিঠিও পাঠিয়েছে।

ওই নির্বাচনে ইভিএমে ভোট নেয়ার প্রস্তুতি ছিলো। এজন্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। তবে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

আগামী ৬ জুলাই অনুষ্ঠেয় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও একটি ওয়ার্ডের কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেয়ার প্রস্তুতি ছিলো।

কিন্তু রাজশাহীতে জটিলতার পর নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, “এখনো গাজীপুরের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি আমরা। পরে আলোচনা করে করণীয় ঠিক করা হবে।”

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার গত শনিবার ভোটের দিন ইসি সচিবালয়কে জরুরি চিঠিতে জানান, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সাতটি ভোটকক্ষের একটিতে ইভিএম বিকল হওয়ায় ফল দেয়া সম্ভব হয়নি।

এনিয়ে সেখানে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিলো, অবরুদ্ধও হয়ে পড়েছিলেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।

রাজশাহীর ওই কেন্দ্রে কাউন্সিলর পদে ব্যবধান কম হওয়ায় ব্যালট পেপারে আবার ভোট নেয়া হবে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ।

তিনি বলেন, “যন্ত্র বিকল হতেই পারে। তিন সিটির কোথাও হয়নি, একটি কেন্দ্রে ঝামেলা হলো।”

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শনিবার কমার্শিয়াল কলেজ কেন্দ্রে ভোট ইভিএমে ভোট দিচ্ছেন এক নারী ভোটার।

শনিবার রাজশাহীর সঙ্গে খুলনা, বরিশাল ও সিলেটে সিটি নির্বাচন হয়, সেখানে ১৩টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়েছিলো।

ইভিএম নিয়ে ভোটারদের কারো কারো সমস্যা হলেও বেশিরভাগই সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।

এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এবং নরসিংদী পৌরসভার নির্বাচনে ইভিএমে সমস্যা হয়েছিলো বলে জানান নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ।  

গত বছর বুয়েট পরামর্শ দিয়েছিলো, এসব যন্ত্রে দেশি ব্যাটারি যেন ব্যবহার না করা হয়। চীন থেকে ব্যাটারি এনে ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হলেও তা উপেক্ষা করেছে বর্তমান ইসি।

ইভিএমের সঙ্গে শুরু থেকে সম্পৃক্ত বুয়েটের অধ্যাপক এস এম লুতফুল কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে (নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ) ঝামেলা দেখা দিলে কেনই বা তা দূর না করে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে? এখনি যান্ত্রিক সমস্যা সমাধান করা উচিত।”

“আমার সঙ্গে এখন ইসির যোগাযোগ নেই, বর্তমান অবস্থাও জানি না,” বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলেন তিনি।

আগামীর শঙ্কা

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএমে করার পরিকল্পনা ধরে কাজ এগিয়ে রেখেছিলো এ টি এম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি, যদিও তা নিয়ে আপত্তি ছিলো প্রধান বিরোধী দল বিএনপির।

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের ইভিএম নিয়ে খুব বেশি এগোতে দেখা যায়নি।

গতবছর আগস্টে বর্তমান সিইসি কাজী রকিব জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমে ভোট না নেয়ার ঘোষণা দেন।

তবে আগের ধারাবাহিকতায় স্থানীয় নির্বাচনে কয়েকটি করে কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হয়ে আসছিলো। কিন্তু রাজশাহীর ঘটনার পর বর্তমান ইসি ইভিএম নিয়ে এগোতে সংশয়ে রয়েছে।    

একজন নির্বাচন কমিশনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি কেন্দ্রে ঝামেলা হওয়ায় সামাল দেয়া গেলো, পুরো এলাকায় হলে তো মার খেতে হতো।”

যন্ত্রে কেন সমস্যা দেখা দিলো, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে সময় লাগবে জানিয়ে ভবিষ্যতের বিষয়ে তিনি বলেন, “প্রযুক্তির ছোটখাটো বিষয়গুলো বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

‘জাতীয় নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে ইভিএম’

২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে একটি ওয়ার্ডে ব্যবহারের মধ্য দিয়ে দেশে ইভিএমের যাত্রা শুরু হয়। বুয়েট এবং গাজীপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সহায়তায় এ প্রযুক্তি চালু হয়।

এরপর নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন, নরসিংদী পৌরসভায় পুরো ভোট হয় ইভিএমে।

তবে বুয়েট-ইসির দ্বন্দ্বে সিইসির ঘোষণার পরও রংপুর সিটি কর্পোরেশনে এর ব্যবহার নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। শেষ মুহূর্তে ইসির নিজস্ব জনবল নিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে ইভিএমে ভোট হয়।

আগের ইসির চালু করা ইভিএম স্থানীয় পর্যায়েও বর্তমান কমিশন ধীরে ধীরে গুটিয়ে ফেলছে।

পুরো সিটি কর্পোরেশন-পৌরসভা থেকে মাত্র দু-একটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ প্রযুক্তিটি আমরা শুরু করেছিলাম। মানুষের উৎসাহও বেশ। ধীরে ধীরে এর বিষয়ে সচেতনতা বাড়িয়ে বড় পরিসরের চেষ্টা থাকাই ভালো।

“পরিসর এত ছোট করে ফেললে তা নিয়ে জনমনে সংশয়ও বাড়বে।”