ইন্টারনেট গেটওয়েতে বসছে নজরদারির প্রযুক্তি

সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোসহ ইন্টারনেট ব্যবস্থায় নজরদারিতে (ফিল্টারিং) ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়েগুলোতে(আইআইজি) বিশেষ প্রযুক্তি বসানোর জন্য বেশ কয়েকটি প্রস্তাব পেয়েছে সরকার।

শামীম আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2013, 03:27 AM
Updated : 22 May 2013, 03:29 AM

প্রতিটি আইআইজিতে এ প্রযুক্তি বসানোর পর ইন্টারনেটের নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণের মূল ক্ষমতা থাকবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির হাতে।

এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) গত ৮ এপ্রিল আন্তজার্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ‘ইন্টারনেট সেফটি সলিউশন’ চেয়ে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেয়। এই আগ্রহপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল গত ২০ মে।

বিটিআরসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কয়েকটি আন্তজার্তিক ইন্টারনেট সলিউশনস প্রোভাইডার কোম্পানি গত রবিবার বিটিআরসিতে আগ্রহপত্র(এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট/)জমা দিয়েছে। এগুলো যাচাই বাছাই করে পুরো প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

“রাষ্ট্রীয়, সমাজ, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায়- ওয়েবসাইটগুলো থেকে এমন বিষয় সনাক্ত করে  তা বন্ধ করে দেয়া হবে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে।”

বিটিআরসির বিজ্ঞাপনে বলা হয়, আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে এমন ইন্টারনেট নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করে দিতে হবে যাতে মূল সাইট চালু রেখেই সহজে আপত্তিকর বিষয়গুলো ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে ফেলা যায়।

এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমন হবে, যাতে আইআইজিগুলোতে বসানোর পরও ইন্টারেনেটের গতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না এবং আইআইজিগুলো নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারবে।

আইআইজিগুলোতে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বসানোর পর ওয়েব ইন্টারফেসের মাধ্যমে এর মূল নিয়ন্ত্রণ থাকবে বিটিআরসির প্রধান কাযালয়ে। ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে সলিউশনস প্রোভাইডারকেও সার্বক্ষণিক সহায়তা দিতে হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৬টি আইআইজি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ব্যন্ডউইডথ নিয়ন্ত্রণ ও পাইকারি ব্যান্ডউইডথ আইএসপিগুলোকে বিক্রি করে। আর আইএসপিগুলো গ্রাহক পযায়ে সেবা দেয়।

গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানান, বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে যাতে ‘আপত্তিকর বিষয়গুলো’ দেখা না যায়- তা নিশ্চিত করতে ‘বিশেষ প্রযুক্তি’ ব্যবহার করবে সরকার।

মন্ত্রী দাবি করেন, এ প্রযুক্তি চালুর পর ফেইসবুকের আপত্তিকর বিষয় বাদ দেয়া সহজ হবে। ফলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ করার আর প্রয়োজন হবে না, আগামী দুই মাসের মধ্যে এ প্রযুক্তি চালু করা সম্ভব হবে।

ইসলাম ও হযরত মোহাম্মদকে (স.) অবমাননা করে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ এর ভিডিও ফুটেজ সরিয়ে নিতে গুগলকে চিঠি দেয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ থেকে ইউটিউবে প্রবেশ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় বিটিআরসি।

আইআইজি প্রতিষ্ঠানের এক প্রযুক্তি কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়ন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ সফটঅয়্যার বা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যে কারো ব্যক্তিগত একাউন্টে সহজেই প্রবেশ করা যাবে এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। 

তবে এ ধরনের ‘কনটেন্ট ফিল্টারিং’ ব্যবস্থায় আইআইজিগুলোর ব্যবসায় প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করেন ফাইবার অ্যাট হোমের চিফ স্ট্রাট্রেজিক অফিসার ও তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির।

তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জববার বিডিনিউজ টোয়ন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অপপ্রচারে নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরী হচ্ছে এ প্রেক্ষাপটে এ উদ্যোগ ঠিকই রয়েছে। তবে এ ফিল্টার যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা না হয়- সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

ফিল্টার চালু হলে সামাজিক যোগযোগের ওয়েবসাইট ব্যবকারকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হবে কি না জানতে চাইলে মোস্তফা জব্বার বলেন, “বিষয়টি অন্যভাবে দেখতে হবে। কেউ যদি অন্য কাউকে সরাসরি কটাক্ষ বা ক্ষতির কারণ তৈরি করে, তা নিয়ন্ত্রণ বা ফিল্টার করা উচিত। তা না হলে সমস্যা থেকেই যাবে।”    

উন্নত বিশ্বে বিভিন্ন দেশে এ ধরণের নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে বলেও মোস্তফা জব্বার জানান।