এভারেস্ট জয় করে ফেরা হলো না খালেদের

পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া এভারেস্ট জয় করে নামার সময় মারা গেছেন বাংলাদেশের পর্বতারোহী মোহাম্মেদ খালেদ হোসেন সজল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2013, 04:26 AM
Updated : 21 May 2013, 07:11 AM

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বহিঃপ্রচার বিভাগের মহাপরিচালক শামিম আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সোমবার এভারেস্ট থেকে নামার সময় খালেদের মৃত্যু হয়। 

এর আগে নেপালের বাংলাদেশ মিশন দেশে খালেদের স্ত্রী তাহমিনা খান শৈলীর সঙ্গে যোগাযোগ করে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা থিল লাল গৌতমের বরাত দিয়ে সে দেশের কান্তিপুর অনলাইন জানায়, এভারেস্ট জয়ের কয়েক ঘণ্টা পর ৮ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় নিজের তাবুতে মারা যান খালেদ। দক্ষিণ কোরিয়ার আরেক অভিযাত্রী সুং হো-সিউও এদিন নামতে গিয়ে প্রাণ হারান।

সুং হো-সিউ বাড়তি অক্সিজেন না নিয়েই নামার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। তবে খালেদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু বলতে পারেনি নেপালি গণমাধ্যম। বিভিন্ন দেশের মোট আটজন এই অভিযানে অংশ নেন।

পঞ্চম বাংলাদেশি হিসাবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয়ের লক্ষ্যে গত ১১ এপ্রিল নেপালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘কাজলের দিনরাত্রি’র পরিচালক খালেদ, যিনি সজল খালেদ নামেই পরিচিত।

খালেদ ও শৈলীর একমাত্র ছেলে সুস্মিতের বয়স আড়াই বছর। রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় তাদের বাসা।

৩৫ বছর বয়সী এই তরুণ নেপালে যাওয়ার আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটি তার পঞ্চদশ অভিযান আর এভারেস্ট জয়ের দ্বিতীয় প্রচেষ্টা।

এর আগে এভারেস্টের ২৪ হাজার ফুট পর্যন্ত উঠলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে চূড়ায় পৌঁছানো হয়নি তার।

বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের সদস্য সজল খালেদের এ অভিযানে গণমাধ্যম সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক হিসাবে ছিল বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দেশ টিভি।

প্রতিষ্ঠানটির বিপণন প্রধান সাদেকুর রহমান চৌধুরী পরাগ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত কয়েক দিনে খালেদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে পারেননি। তবে ‘নেপালি সূত্রের’ মাধ্যমে খালেদের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। 

বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের আরেক সদস্য রিয়াজ আহমেদ বলেন, "আমরা খালেদের শেরপার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। কিন্তু তাকেও পাওয়া যাচ্ছে না।”

এই ক্লাবেরই দুই সদস্য এম এ মুহিত ও নিশাত মজুমদার এর আগে এভারেস্ট জয় করেন।এদের মধ্যে নিশাত হিমালয় চূড়ায় প্রথম বাংলাদেশি নারী।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০১০ সালের ২৪ মে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছান মুসা ইব্রাহিম। আর এভারেস্টজয়ী চতুর্থ বাংলাদেশি ওয়াসফিয়া নাজরীন চূড়া জয় করেন ২০১২ সালে, নিশাতের এক সপ্তাহ পর।   

নেপাল থেকে এভারেস্টে ওঠার জন্য মে মাসকেই সবচেয়ে ভাল সময় হিসাবে ধরা হয়। এ বছর তেনজিং নরগে ও এডমুন্ড হিলারির এভারেস্ট জয়ের ৬০তম বার্ষিকীতে প্রায় ৩০০ অভিযাত্রী এভারেস্ট চূড়ায় উঠেছেন।

এভারেস্টে পৌঁছেও খালেদ আর সুং দুজনেই মারা যান ৮ হাজার মিটার উঁচুতে এভারেস্টের 'ডেথ জোনে'। এ মৌসুমে আরো পাঁচ অভিযাত্রী ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার উচু এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে প্রাণ হারান।

গত ছয় দশকে প্রায় তিনশ অভিযাত্রী এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে মারা গেছেন, যাদের কারো কারো দেহাবশেষ হিমালয়েই রয়ে গেছে।

প্রকৌশলের ডিগ্রিধারী সজল খালেদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।

এর আগে হিমালয়ের মেরা পিক, চুলু ওয়েস্ট ও লান্সিসারি চূড়া জয় করেছিলেন সজল খালেদ। পর্বতারোহণ নিয়ে এডমন্ড ভিস্টর্সেলের লেখা একটি বইও তিনি অনুবাদ করেছেন, যার নাম ‘পর্বতের নেশায় অদম্য প্রাণ’।