সম্প্রতি মন্ট্রিয়ালভিত্তিক দি গেজেটে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে আবুল হোসেন বলেন, “আমি মনে করি, কানাডার আদালত থেকে আমি ন্যায়বিচার পাব।”
কানাডার আদালতে আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ না উঠলেও বাংলাদেশের প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এসএনসি-লাভালিনকে পদ্মা সেতুর পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দিলে প্রকল্প ব্যয়ের চার শতাংশ পাওয়া কথা ছিল তার। আরো কয়েকজন কর্মকর্তার পাওয়ার কথা ছিল আরো ছয় শতাংশ।
আবুল হোসেন দি গেজেটকে বলেছেন, চুক্তি হলে মোট ৩৫০ লাখ ডলার পেত কানাডীয় নির্মাণ সংস্থা এসএনসি লাভালিন।
বিশ্বব্যাংকের অনুরোধে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে কানাডায় এসএনসি লাভালিনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহ ও সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হলেও আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে শুনানির বিস্তারিত খবর গণমাধ্যমে আসছে না।
আগামী ২৯ মে এসএনসি-লাভালিনের এই কর্মকর্তাদের আবারো কানাডার আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে।
শুরু থেকেই ঘুষের অভিযোগ অস্বীকার করে আসা আবুল হোসেন সাক্ষাৎকারে বলেন, “যখন সবকিছু (তদন্ত) সম্পন্ন হবে, তখন তারা দেখবে আমি নির্দোষ।”
তার দাবি, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের ফলাফল সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে জমা দেয়া ছাড়া পরামর্শক নির্বাচনে তার কোনো ভূমিকাই ছিল না।
আবুল হোসেন বলেছেন, অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তাসহ এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার দুইবার বৈঠক হলেও সেখানে ঘুষ লেদেনের কোনো কথা হয়নি। একই ধরনের বৈঠক জাপান ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও হয়েছে।
আফ্রিকা ও এশিয়াজুড়ে কয়েকটি প্রকল্পে ঘুষের হিসাবের জন্য এসএনসি লাভালিন একটি বিশেষ কোড ব্যবহার করেছিল বলে খবর প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেন সাবেক মন্ত্রী।
তিনি কারো কাছে ঘুষ চেয়েছেন- এমন কথা শপথ করে বলতে পারবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই নেতা সাক্ষাৎকারে বলেন, “কেউ যদি আমার নামে কোনো কিছু চেয়েও থঅকে, আমার তা জানা নেই। আর তেমন কিছু ঘটে থাকলে সেজন্য আমাকে দায়ী করা যায় না।”
ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ইতোমধ্যে এসএনসি-লাভালিনকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বিশ্বব্যাংক। সেইসঙ্গে এসএনসি-লাভালিনের শতাধিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানকেও একই মেয়াদের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যা বিশ্ব ব্যাংকের সর্বোচ্চ নিষেধাজ্ঞা।
এ ঘটনায় বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করলেও সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেনকে এতে রাখা হয়নি।
ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ওঠার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে ২৯১ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্থগিত করে বিশ্ব ব্যাংক। এরপর বিশ্ব ব্যাংক ফেরার ঘোষণা দিলেও তাদের শর্ত নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের পর গত জানুয়ারির শেষে সরকার তাদের ‘না’ বলে দেয়।