‘সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র ছিল’

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, হেফাজতে ইসলামী নামধারীরা তাণ্ডব চালানোর প্রস্তুতি নিয়েই ঢাকায় এসেছিলেন এবং তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাতের আঁধারে সরকার উৎখাত করা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2013, 06:04 AM
Updated : 6 May 2013, 07:21 AM

সোমবার সচিবালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, "ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়েই হেফাজত নামধারীরা ঢাকায় এসেছিল। পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক, যান্ত্রিক করাত, কুড়াল ইত্যাদি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল।"

“আগের দিন বেগম জিয়ার ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম, গতকাল হেফাজতের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিএনপি-১৮ দলের নেতাকর্মীদের প্রতি বেগম জিয়ার নির্দেশ, প্রমান করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে, আগুন দিয়ে বিভীষিকা তৈরি করে রাতের আঁধারে সম্ভবত সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছিল হেফাজত”, যোগ করেন তিনি।

রোববার শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ চলার মধ্যেই বায়তুল মোকাররম মসজিদকে ঘিরে পল্টন, গুলিস্তান, বিজয়নগর, কাকরাইল ও নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে হেফাজতকর্মীরা। দফায় দফায় সংঘর্ষে নিহত হন তিনজন।

পরে শাপলা চত্বরে টানা অবস্থানের ঘোষণা দেয়া হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের গভীর রাতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে মতিঝিল থেকে উৎখাত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর আগে পল্টন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালিয়ে তাণ্ডবের চিহ্ন রেখে যায় হেফাজত।

মন্ত্রী বলেন, “হেফাজতীদের পাশে দলীয় নেতাকর্মীদের দাঁড়ানোর নির্দেশ নিয়ে খালেদা জিয়া প্রমাণ করলেন তার দিলে এতটুকুও রহম নেই। উনি নিজেকে অশান্তির প্রতীকে পরিণত করেছেন। উনি ক্ষমতার জন্য অন্ধ হয়ে গেছেন।”

“তাণ্ডবকারীদের বর্জন করুন। সংলাপে আসুন”, খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন মন্ত্রী।

ইনু বলেন, "মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষকদের সাথে জিনসের প্যান্ট-টি শার্ট পরিহিত যে যুবকরা সন্ত্রাসী তান্ডব আর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, পুলিশের উপর হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের সাধারণ জনগণই জামাত-শিবির-বিএনপি কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।"

ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য হেফাজতকর্মী ছাড়াও তাদের উস্কানিদাতাদের আইনের মুখোমুখি করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

হেফাজতে ইসলাম মতলবী রাজনীতি করছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, তারা বিএনপি-জামায়াতের ঠিকাদারী করেছে।

“হেফাজতের মাওলানারা যেভাবে ভাষণ দিয়েছেন তাদের চেহারা দেখলে তাদের পূণ্যবান মানুষ নয়, পশুতুল্য মনে হয়। তারা ঠাণ্ডা মাথায় আক্রমণ করেছে।”

মন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে যদি ব্যক্তিগত পর্যায়ে নাস্তিক থেকেও থাকে, তারা ইসলাম ধর্মসহ কোনো ধর্মের জন্য সামান্যতম হুমকিও না। তারপরেও কোনো নাস্তিক বা কেউ কোনো ধর্মের মানুষের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেয়ার চেষ্টা করলে সরকার-প্রশাসন তাৎক্ষনিকভাবে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।”

হেফাজতের ১৩ দফা সংবিধান, ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্ত মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্রের পরিপন্থী বলেও দাবি করেন ইনু।

তিনি হেফাজতে ইসলামীর কর্মীদের উপর সরকারদলীয় লোকজন হামলা করেছে বলে বিএনপি নেতা এম কে আনোয়ারের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন।

যেসব মাদ্রাসা সুপার শিশুদের সমাবেশে নিয়ে এসেছেন চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ইনু।

মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে ইনু বলেন, "যেসব মাদ্রাসা সুপার আপনাদের সন্তানদের সমাবেশে যেতে বাধ্য করেছে তাদের তালিকা করে থানায় দরখাস্ত করুন।"

হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।