প্রথম নারী স্পিকার পেল বাংলাদেশ

দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী স্পিকার হিসাবে শপথ নিয়েছেন শিরীন শারমিন চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2013, 05:39 AM
Updated : 30 April 2013, 01:02 PM

সংরক্ষিত নারী সাংসদের আসন থেকে এর আগে আর কেউ স্পিকারের পদে আসেননি। ৪৬ বছর বয়সী শিরীন শারমিনের চেয়ে কম বয়সেও কেউ সংসদের কর্তৃত্ব পাননি। 

স্পিকার পদে আবদুল হামিদের উত্তরসূরি হিসাবে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম প্রস্তাব করেন  বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। তার এই প্রস্তাবে সমর্থন দেন হুইপ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি।

অধিবেশনে সভাপতিত্বকারী ভারপ্রাপ্ত স্পিকার শওকত আলী কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী প্রস্তাবটি ভোটে দিলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। আর কোনো প্রার্থী না থাকায় শিরীন শারমিন চৌধুরীকে জাতীয় সংসদের ১৩তম স্পিকার হিসাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন ভারপ্রাপ্ত স্পিকার।

সংসদ নেতা শেখ হাসিনাসহ ১৪১ জন সংসদ সদস্য এ সময় অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে সংসদ বর্জন করে আসা বিরোধী দলের কেউ অধিবেশনে ছিলেন না।

পরে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নতুন স্পিকারকে শপথ পড়ান।

প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্যরা, একমাত্র স্বতন্ত্র সাংসদ ফজলুল আজিম ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

শপথ নেয়ার পর রাত ৯টা ১০ মিনিটে স্পিকারের কার্যালয়ে যান শিরীন শারমিন। সেখানে চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ ও কার্যালয়ের সচিব মো. মাহফুজুর রহমান তাকে স্বাগত জানান।

জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর নবম সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হওয়ায় সরকারের মেয়াদের আট মাস বাকি থাকতে স্পিকার হলেন শিরীন শারমিন।

আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শুরু করার পর ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী ভারপ্রাপ্ত স্পিকারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। নতুন স্পিকারের শপথের মধ্য দিয়ে তার সেই দায়িত্বের অবসান ঘটল।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা শিরীন শারমিন চৌধুরীকে সোমবার স্পিকার পদে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় কার্যত তখনই ৪৬ বছর বয়সী শিরীন শারমিনের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়।

শিরীন শারমিন স্পিকার হওয়ায় সংসদের কর্তৃত্বময় তিনটি পদই এখন থাকছে নারীদের হাতে। সংসদ নেতার দায়িত্বে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এদের সঙ্গে সংসদ উপনেতাও একজন নারী, তিনি হলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

শেখ হাসিনার সরকারে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন নারীরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন- কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন।

সম্প্রতি সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রথম নারী হিসেবে বেঞ্চের নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব পান বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা।

ভারতবর্ষের তিনটি দেশেই এখন পার্লামেন্টের কর্তৃত্ব নারীদের হাতে। ভারতে মীরা কুমার এবং পাকিস্তানে ফাহমিদা মির্জা স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছেন।

সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য হিসেবে এবারই প্রথম সংসদে আসেন পেশায় আইনজীবী শিরীন শারমিন, ছাত্রজীবনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখা এই নারী যুক্তরাজ্যের এসেক্স ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেন।

তার জন্ম ১৯৬৬ সালে ৬ অক্টোবর ঢাকায়। তার বাবা রফিকউল্লাহ চৌধুরী ছিলেন স্বাধীনতার পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব। তার মা অধ্যাপক নাইয়ার সুলতানা বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের সদস্য ছিলেন। তার নানা সিকান্দার আলী ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান হাই কোর্টের বিচারপতি।

১৯৮৩ সালে ঢাকা বোর্ড থেকে মানবিক বিভাগে সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম স্থান নিয়ে এসএসসি পাস করেন শিরীন। দুই বছর পর একই বোর্ড থেকে মানবিক বিভাগে সম্মিলিত মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান নিয়ে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন তিনি।

১৯৮৯ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল এল বি (অনার্স) এবং ১৯৯০ সালে ওই স্থান অটুট রেখেই এলএলএম ডিগ্রি নেন শিরীন শারমিন।

এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান তিনি। ২০০০ সালে এসেক্স ইউনিভার্সিটি ‘রাইট টু লাইফ’ অভিসন্দর্ভের জন্য তিনি পিএইচডি লাভ করেন।

১৯৯২ সালে বার কাউন্সিল আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন শিরীন। ১৯৯৪ সালে হাই কোর্ট বিভাগ ও ২০০৮ সালে আপিল বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আইনজীবীদের একজন তিনি।

শিরীন শারমিন ২০০৩ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল লিগাল ডিভিশনের এডিটর ছিলেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ল’ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ার্সের (বিলিয়া) নির্বাহী কমিটি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য তিনি।

আইনজীবী হিসাবে পেশাগত জীবনে নারীর সম-অধিকারের জন্য কাজ করে আসছেন শিরীন শারমিন। তিনি প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায়ই ‘নারী উন্নয়ন নীতিমালা’ সংসদে পাস হয়।

শিরীন শারমিনের স্বামী ওষুধ শিল্পের পরামর্শক সৈয়দ ইশতিয়াক হোসেন। তাদের এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে।