সাভারে বহুতল ভবন ধসে নিহতদের মরদেহ হস্তান্তরের কাজ শুরু হয়েছে।
Published : 24 Apr 2013, 12:30 PM
বুধবার সকালে রানা প্লাজা নামে নয়তলা এই ভবন ধসে কতজন নিহত হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, এই পর্যন্ত ৬৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বিকালে ঢাকার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানান, ৮৫টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।
বিকাল ৩টার পর সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে স্বজনদের কাছে লাশ হাস্তান্তর শুরু হয়। পরিচয় সনাক্ত করে লাশ হস্তান্তর করছেন ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইফতেখার হোসেন ও মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।
জিল্লুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু সকালে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাই সনাক্ত হয়ে যাওয়া লাশগুলো তাদের স্বজনরা এখনি ফেরত চাচ্ছেন।”
সনাক্তের পর এনাম মেডিকেলের ছাড়পত্র নিয়ে এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, লাশ দাফনের জন্য নিহতদের স্বজনদের ২০ হাজার টাকা করে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এনাম মেডিকেলে গিয়ে দেখা যায়, গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান ও গুদাম ঘরে সারিবদ্ধভাবে শুইয়ে রাখা হয়েছে পোশাক শ্রমিকদের লাশ, যাদের অধিকাংশই নারী।
বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরা একসঙ্গে এত মৃত্যু দেখে আঁতকে উঠছেন বারবার। পঞ্চম তলায় কর্মরত বেঁচে যাওয়া শ্রমিক রিতা বিডিনিউজ টেয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাদাগাদি করে একসঙ্গে এত মানুষের মৃত্যু কোনোদিন দেখিনি।”
এই হাসপাতালে ৮৭টি লাশ রয়েছে বলে বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান হাসপাতালের পরিচালক (জনসংযোগ) জাহিদুর রহমান। এর বাইরে সাভার থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সাভারের ল্যাব এইড হাসপাতালেও বেশ কয়েকটি লাশ রাখা দেখা যায়।
স্বজনের লাশের সন্ধানে এনাম মেডিকেলের ভেতরে-বাইরে অনেককে উদ্বিগ্ন অবস্থায় দেখা যায়।
নয় তলা ওই ভবনে কয়েকটি পোশাক কারখানা রয়েছে। মঙ্গলবার ফাটল দেখা দেয়ার পর ঝুঁকিপূর্ণ বলে ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের কেউ কার্যালয়ে না গেলেও কাজ চলে পোশাক কারখানাগুলোতে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, তারা না চাইলেও সকালে তাদের কারখানায় ঢুকতে বাধ্য করা হয়।
আহত অবস্থায় উদ্ধার অনেকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের একজন সেলিম ভবন ধসের সময় ষষ্ঠ তলায় কাজ করছিলেন, শরীরের বিভিন্ন অংশ থেতলে গেছে তার।
সেলিম বলেন, প্রায় ২০০ শ্রমিক ছিল সেখানে।
বেঁচে যাওয়া আরেক শ্রমিক নূপুর ষষ্ঠ তলায় কাজে যোগ দিয়েছিলেন সকাল ৮টায়। ভবনে ফাটল ধরেছে জেনেও মালিকের চাপে কাজে যোগ দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।
পঞ্চম তলায় কাটিং সেকশনে কর্মরত নুরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথমে কেউ ঢুকতে না চাইলে সুপারভাইজার লাঠি নিয়ে তাড়া করে। পিএম (প্রডাকশন ম্যানেজার) হামিদের ধমকে বাধ্য হয়ে কারখানায় যাই।”
নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেডের কারখানায় কাজ করতেন মো. সুলায়মান। তিনিও কাজে বাধ্য করার অভিযোগ জানিয়েছেন।