‘শিল্প পুলিশের নিষেধ মানেনি গার্মেন্ট মালিকরা’

মঙ্গলবার ফাটল ধরার পরও বুধবার সকাল থেকে রানা প্লাজার চারটি পোশাক কারখানায় পুনরায় কাজ শুরুর ব্যাপারে পোশাক মালিকদের দায়ী করেছেন শিল্প পুলিশের পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান।

ফয়জুল সিদ্দিকী ও মামুনুর রশীদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2013, 03:08 AM
Updated : 24 April 2013, 12:07 PM

নয় তলা ভবনটি সকালে ধসে পড়লে অন্তত ৮০ জন নিহত হন। আহত হন আট শতাধিক।  

মুস্তাফিজুর রহমান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, “গতকাল যখন ফাটল দেখা গেল তখনই শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যেন কারখানা বন্ধ রাখা হয়। আমরা বলেছিলাম, বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ার এসে পরীক্ষা করার পর কারখানা খোলা যাবে কি না জানানো হবে।

“কিন্তু শিল্প পুলিশের নির্দেশ উপেক্ষা করে মালিকদের একক সিদ্ধান্তে বুধবার সকালে তারা কারখানা খুলে দেয়।”

ভবনটির প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, প্রসাধন সামগ্রী ও কাপড়ের মাকের্ট এবং ব্র্যাক ব্যাংকের একটি শাখা ছিল।

আর তৃতীয় তলার নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, নিউ ওয়েব স্টাইল লিমিটেড, চতুর্থ তলার ফ্যান্টম এ্যাপারেলস লিমিটেড, পঞ্চম তলার ফ্যান্টম ট্যাক লিমিটেড ও ষষ্ঠ তলার ঈথার টেক্সটাইল লিমিটেডে পাঁচ থেকে ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করতেন বলে শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

সকালে ভবন ধসের পরপরই শ্রমিকদের স্বজনেরা রানা প্লাজা এলাকায় ভিড় করেন এবং অনেকেই ভবন মালিক ও গার্মেন্ট মালিকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া অনেক শ্রমিকও জানান, সকালে ফাটল ধরা ভবনে কাজে যোগ দিতে তাদের বাধ্য করা হয়।

সাভারের এনাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুরুল ইসলাম নামের এক শ্রমিক বলেন, “আমরা কেউ ভবনে ঢুকতে চাচ্ছিলাম না। বসরা আমাদের লাঠি নিয়ে তাড়া করেন। পরে বাধ্য হয়ে আমরা কারখানায় যাই।”

ধ্বংসস্তুপের ভিতরে এখনো অনেক মানুষ আটকা আছে জানিয়ে শিল্প পুলিশের পরিচালক বলেন, “এ ঘটনার জন্য দোষীদের খুঁজে বের করতে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে।”

এর আগে স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে ঘটনাস্থলে উপস্থিত শ্রম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. ইস্রাফিল আলম বলেন, “কারখানা খোলার জন্য কে দায়ী এখনই এটা না দেখে আমাদের সবার উদ্ধার তৎপরতায় মনোযোগ দেয়া উচিত।”

পরে এ ঘটনার জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রে ইমারত বিধিমালা অনুসরণ করা হয়নি। ঠিক উপাদানও ব্যবহার করা হয়নি।

“তদন্ত কমিটির মাধ্যমে আমরা এটি উদঘাটন করব। দোষীদের আইনি ব্যবস্থায় আনবো”, বলেন মন্ত্রী। 

মঙ্গলবার ভবনটিতে ফাটল ধরার পর মঙ্গলবার দুপুরে ভবনটি  ঘুরে দেখেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

স্থানীয় প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক ভবনটি ঘুরে দেখে সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে বুয়েট থেকে প্রকৌশলী এনে ভবনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। তা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

তবে ভবনটির মালিক পৌর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহেল রানা সে সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, সামান্য একটু প্লাস্টার খুলে পড়েছে। এটা তেমন কিছু নয়।

ভবন মালিককে গ্রেপ্তার করা হবে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন,  “বিষয়টি আমার মাথায় আছে। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।”

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা ছাড়াও সেনাবাহিনীর চারটি দল এবং বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যর‌্যাব স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন।

উদ্ধার অভিযান শেষ হতে দু’একদিন লাগতে পারে বলে ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তারা মনে করছেন।