সাভারে ভবন ধস, লাশ বাড়ছেই

সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফাটল ধরা বহুতল ভবন রানা প্লাজা ধসে পড়ে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে।

সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2013, 00:06 AM
Updated : 24 April 2013, 08:39 AM

সাভার সার্কেলের এএসপি মশিউদ্দৌলা রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বেলা ১টা পর্যন্ত ৭৬টি লাশ উদ্ধারের খবর পেয়েছেন তিনি। এর মধ্যে বেশিরভাগই নেয়া হয়েছে এনাম মেডিকেল কলেজে।

এছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকেও আরো অন্তত চারজনের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে উদ্ধারকর্মীরা জানান।

ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে আট শতাধিক মানুষকে আহত অবস্থায় স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

ওই ভবনে থাকা চারটি গার্মেন্ট কারখানায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার কর্মী কাজ করেন। মঙ্গলবার ফাটল ধরার পরও বুধবার সকালে কারখানায় কাজ চলছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।    

সাভার মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, বুধবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে নয়তলা ভবনটি পেছনের দিক থেকে হঠাৎ ধসে পড়তে শুরু করে।  অল্প সময়ের মধ্যে মূল খুঁটি ও সামনের দেয়ালের অংশবিশেষ ছাড়া পুরো কাঠামোটিই ভেঙে পড়ে। এ সময় আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা ছাড়াও সেনাবাহিনীর চারটি দল এবং বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং স্থানীয় প্রশাসনকে সর্বাত্মক উদ্ধার তৎপরতা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।   

শোক প্রকাশ করে দলীয় কর্মীদের উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে বলেছেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াও। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ৩৬ ঘণ্টা হরতালও শিথিল করা হয়েছে সাভারে।  

ওসি জানান, মঙ্গলবার সকালে ফাটল দেখা দেয়ার পরপরই ওই ভবনে থাকা  চারটি গার্মেন্ট কারখানা ও ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।  তবে বুধবার সকালে শ্রমিকরা আবারো কারখানায় গিয়েছিলেন বলে তারা জানতে পেরেছেন।

এদিকে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় জড়ো হওয়ায় ঢাকা-আরিচা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় দোকানদার সুজন মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “আমি দোকানে বসেছিলাম।  হঠাৎ বিকট শব্দ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি ধুলার ঝড়ের মতো উঠল।  আর চোখের পলকে বিল্ডিংটা ধসে পড়ল।”

ভবনটির প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, প্রসাধন সামগ্রী ও কাপড়ের মাকের্ট এবং ব্র্যাক ব্যাংকের একটি শাখা ছিল।

আর তৃতীয় তলার নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, চতুর্থ তলার ফ্যান্টম এ্যাপারেলস লিমিটেড, পঞ্চম তলার ফ্যান্টম ট্যাক লিমিটেড ও ষষ্ঠ তলার ঈথার টেক্সটাইল লিমিটেডে পাঁচ থেকে ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করতেন বলে স্থানীয়রা জানান।

ফাটল ধরার পর মঙ্গলবার দপুরে ভবনটি  ঘুরে দেখেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

স্থানীয় প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ভবনটির নিরাপত্তার স্বার্থে বুয়েট থেকে প্রকৌশলী এনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। তা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

তবে ভবনটির মালিক পৌর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহেল রানা মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, সামান্য একটু প্লাস্টার খুলে পড়েছে। এটা তেমন কিছু নয়।

সকালে ভবন ধসে পড়ার পর তিনিও আটকা পড়েন। পরে স্থানীয় সাংসদ তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ এসে তাকে উদ্ধার করেন।