ছক্কা ছয়ফুর নেই, শৈলেশ আছে

মাথায় ক্যাপ, ঘিয়া রঙের সাফারি আর টাই পরে সকাল থেকেই নির্বাচন কমিশনের ডেসপাচে ঘুরোঘুরি করছিলেন পিরোজপুরের ষাটোর্ধ্ব শৈলেশ চন্দ্র বিশ্বাস। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন জামাতাকে। আসার কারণ- তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2013, 11:14 AM
Updated : 21 April 2013, 11:34 AM

শুধু শৈলেশ চন্দ্র নয়, তফসিল ঘোষণার পর থেকে এমন অনেকেকেই দেখা গেছে নির্বাচন কমিশনে।

গত ৯ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। তফসিল অনুযায়ী, ২১ এপ্রিল পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সুযোগ ছিল। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত তা প্রত্যাহার করা যাবে। 

জামাতাকে সঙ্গে করে পলিথিনে মোড়ানো নীল ফাইল নিয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করতে এলেও প্রস্তাবক ও সমর্থক নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা নেই শৈলেশ চন্দ্রের।

প্রস্তাবক ও সমর্থকের বিষয়ে জানতে চাইতেই আগ বাড়িয়ে বলতে শুরু করলেন, মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা ও ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সমর্থন নিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে এসেছেন। তারপরও কিছু লাগলে জামাতাই সব ব্যবস্থা করবে জানালেন তিনি।

দেশের ১৯ তম রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হওয়ায় ৯০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সংবিধানের ৪৮ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হতে হলে বয়স পঁয়ত্রিশ বছরের বেশি হতে হবে, সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। এছাড়া থাকতে হবে একজন করে প্রস্তাবক ও সমর্থক।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ১০ থেকে ৪০ জন করে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ারও নজির রয়েছে। তবে এবার বিরোধীদল কিংবা অন্য কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কেউ প্রার্থী হননি। স্বতন্ত্র প্রার্থীও কেউ নেই।

রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করে করে আলোচিত ছক্কা ছয়ফুর, কৃষক সাদেকরা এবার না থাকলেও এবার আছেন শৈলেশ, রাজ্জাক, রাজাজী, ইউনুস ও জালালের মতো কয়েকজন।

ইসির নিচ তলায় ডেসপাচ কর্মচারীকে শাসাচ্ছিলেন শৈলেশ, “আমাকে মনোনয়নপত্র দিতে হবে। আমি রাষ্ট্রপতি হব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাধনা হালদার আমাকে সমর্থন দেবেন। তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।”

ইসির কর্মচারীরা তাকে কোনো কিছু বোঝানোর চেষ্টা করলে বরিশালের আঞ্চলিক ভাষা ও ইংরেজিতে বকাঝকা করতে থাকেন তিনি।

অবশেষে তার মনোনয়ন চেয়ে আবেদনপত্র নথিভুক্ত করা হয়। তবে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি।

বিকালে অপর একটি আবেদনে সিইসির কাছে আবেদন করেন- “আমি আবেদন করার পরও মনোনয়নপত্র পেলাম না। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় আরো দুই দিন বাড়ানো হোক।”

এ তো গেল শৈলেশের পর্ব। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মনোনয়নপত্র জমা দেয় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল। এ সময় বাইরে দরখাস্ত নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় সাফারি পরিহিত শ্মশ্রুমণ্ডিত রাজ্জাক নামে এক ব্যক্তিকে, যিনি জিল্লুর রহমানের সঙ্গেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন।

বিকাল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এ জন্য ভোগান্তিও পোহাতে হয়েছে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

চিৎকার করে বলছিলেন, “সিএসই’র পিএস একটা রাজাকার। আমাকে সিইসির কাছে যেতে দিচ্ছে না। তার ফাঁসি হওয়া উচিত। আমার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।”

ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এলে এমন কিছু লোক ইসিতে ঘোরাফেরা করে। তাদের বুঝিয়ে বিদায় করা হয়।

নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণার পরপরই মনোনয়ন নিতে এসেছিলেন শাহ সৈয়দ মোহাম্মদ রেজা সারোয়ার-রাজাজী। জীবনবৃত্তান্তে তিনি উল্লেখ করেন- রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএস, এলএলবি, লেখক, ভায়োলিন বাদক, কবি, সঙ্গীত শিল্পী।

পদ্মা-ইছামতির অববাহিকায় বান্দুরা গ্রামে তার জন্ম ১৯৫৮ সালে।

এছাড়া অ্যাডভোকেট ইউনুস, বাংলাদেশ পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির জালাল উদ্দিন ও একজন নারী মনোনয়ন সংগ্রহে ইসিতে এসেছিলেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের রাষ্ট্রপতি পদে অংশ না দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কোনো মন্তব্য করেননি। মুচকি হেসে গাড়িতে চেপে বসেন তিনি।

ইসি সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, মনোনয়নপত্র নিয়ে তা দাখিলের সুযোগ পেলে এসব প্রার্থীরা প্রোটেকশন দাবি করেন। জীবন নাশের হুমকি রয়েছে- এমন আবেদন করে গ্রামেগঞ্জে পুলিশ প্রটেকশন নিয়ে ঘুরে বেড়ান তারা।

আবদুল হামিদের পক্ষে রোববার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। প্রার্থী শুধু একজন থাকায় হামিদের রাষ্ট্রপতি হওয়া এখন সময়ে ব্যাপার।