বৃহস্পতিবার সকালে কারওয়ান বাজারে সংবাদপত্রটির কার্যালয় থেকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাকে রিমান্ডে নেয়ার পর রাতে তেজগাঁওয়ে সংবাদপত্রটির কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তারা বেরিয়ে যাওয়ার পর রাত পৌনে ১১টার দিকে ছাপাখানার ব্যবস্থাপক মহিউদ্দীন জিলানী টিপু সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের প্রেসে পুলিশ ঢুকে তালা মেরে দিয়েছে, ওয়ার্কারদেরও বের করে দিয়েছে।
“যেহেতু প্রেসে তালা, সেহেতু কাল পত্রিকা বের করার কোনো সুযোগ নেই।”
পুলিশ অভিযানের মধ্যে রাত ১০টার দিকে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের প্রেস পুলিশ ঘিরে রেখেছে, ভেতরে ঢুকে তল্লাশি করছে। আমাদের কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না।
আমার দেশের কয়েকজন সাংবাদিক জানান, ছাপাখানায় পুলিশি অভিযানের পর অন্য কোথাও পত্রিকা ছাপানোর জন্য যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু কেউ রাজি হয়নি।
ছাপাখানার ব্যবস্থাপক টিপু জানান, পুলিশ একটি কম্পিউটার নিয়ে গেছে।
তবে এই বিষয়ে কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পৌনে ১১টার একটু আগে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ছাপাখানার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়, তাদের হাতে একটি কম্পিউটার ছিল।
ঘটনাস্থলে থাকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা ছাপাখানা থেকে বেরিয়ে দ্রুত দুটি গাড়িতে উঠে চলে যান। কথা বলার সুযোগ তারা কোনো সাংবাদিককে দেননি।
দুটি গাড়িতে করে পুলিশ কর্মকর্তারা চলে গেলেও ছাপাখানার বাইরে পুলিশের পাহারা রয়েছে। তবে শিল্পাঞ্চল থানার ওই পুলিশ সদস্যরা ভেতরের অবস্থা কিছু বলতে পারেননি।
অভিযানের কারণ ব্যাখ্যা করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে মামলায় মাহমুদুর রহমান গ্রেপ্তার হয়েছেন, আদালত সেই মামলায় একটা সার্চ ওয়ারেন্ট দিয়েছে।
“এর ভিত্তিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালত আলামত জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে। সেজন্যই তদন্ত কর্মকর্তা আমার দেশের প্রেসে গেছেন।”
ছাপাখানার পাহারাদার ইলিয়াস আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাড়ে ৮টার দিকে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ভেতরে ঢোকেন। তাকে তখন বলা হয়, পাহারাদারদের কক্ষ থেকে বের না হন।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকের কথিত স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশ এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তেজগাঁও থানার একটি মামলায় মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শুনানি শেষে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত থেকে কারাগারে নেয়া হচ্ছে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে।
আদালত অবমাননার দায়ে এর আগে মাহমুদুর রহমান সাত মাস কারাভোগ করতে হয়েছে। পত্রিকার মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে মামলার পর গ্রেপ্তারও হতে হয়েছিল তাকে।
দুই বছর আগে ওই ঘটনা দুটির সময় দুই দফা আমার দেশ প্রকাশ ৪৭ দিন বন্ধ ছিল।
খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় তার জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন মাহমুদুর রহমান।
চার বছর আগে আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব নেন এই প্রকৌশলী, সংবাদপত্র জগতে যার কোনো বিচরণ আগে ছিল না।
আমার দেশ পত্রিকাটি প্রকাশিত হয় ২০০৫ সালে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলীর মালিকানায়। বর্তমান সরকার আমলে মালিকানার হাতবদল হয়।
মাহমুদুর রহমানের সম্পাদনায় প্রকাশিত আমার দেশের বিরুদ্ধে তথ্য বিকৃত করে ধর্মীয় উস্কানি দেয়ার অভিযোগ তুলে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছিল শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকারীরা শুরু থেকে এই পত্রিকাটির ‘অপপ্রচারের’ শিকার।
এদিকে আমার দেশ সম্পাদককে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামও মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করেছেন।