দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত বুয়েট শিক্ষার্থী আরিফ রায়হান দীপ হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির বিরোধিতা করেছিলেন বলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
Published : 09 Apr 2013, 06:44 PM
দীপের তৎপরতায়ই বুয়েটের হলের একটি মসজিদের ইমামের চাকরি যায়, যিনি হেফাজতে ইসলামের লংমার্চকারীদের জন্য খিচুড়ি রান্নার ব্যবস্থা করেছিলেন।
নজরুল ইসলাম হলের ছাত্র দীপকে মঙ্গলবার সকালে হলে ঢুকেই এলোপাতাড়ি কুপিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী দীপ ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে দীপ এখন স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
দীপকে চিকিৎসা দেয়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পীযূষ কান্তি মিত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আঘাতের ধরন বলছে, হত্যার উদ্দেশ্যেই তার ওপর হামলা চালানো হয়েছে।
দীপের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত করা হয়, যার একটি বাম চোখের ওপর পড়ায় তা হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পিঠে এমনভাবে কোপানো হয়েছে যে ৫০টির বেশি সেলাই দিতে হয়েছে বলে জানান ওই চিকিৎসক।
বুয়েটের নজরুল ইসলাম হল ঘুরে দেখা যায়, হলের শিক্ষার্থী-কর্মচারী সবার চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। কেউ নিজের পরিচয় দিয়ে অপরিচিত কারো সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন না।
একাধিক শিক্ষার্থী জানান, দীপ হলের দ্বিতীয় তলার ২২৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তিনি সবসময় জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন।
তারা আরো জানান, গত শুক্রবার রাতে শহীদ স্মৃতি হলের মসজিদের ইমাম যখন সেই হলের বাবুর্চিকে নিয়ে খিচুড়ি রান্না করে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চকারীদের জন্য পাঠিয়েছিলেন, তখন দীপসহ কয়েক শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করেছিল।
ওই রাতেই শিক্ষার্থীরা বিষয়টি ছাত্র কল্যাণ পরিষদের পরিচালক ড. দেলোয়ার হোসেনকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন।
ড. দেলোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি বিষয়টি জানার পরপরই ইমাম আব্দুল আলিমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কারণ দর্শাতে বলি।”
বুয়েট ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আমিনুল হক পলাশ বলেন, “ইমাম বরখাস্ত হওয়ার পর থেকেই বুয়েট শিক্ষার্থীদের ফেইসবুক গ্রুপ ‘বুয়েটিয়ান’ এ কিছু শিক্ষার্থী দীপকে নিয়ে আজেবাজে লেখালেখি শুরু করে দেয়।
“ইমামের বরখাস্তের সঙ্গে দীপ জড়িত বলেও প্রচার চালাতে থাকে তারা।”
দীপকে অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয় বলে পলাশ অভিযোগ করেন।
দীপের ওপর হামলা হলের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতার দিকটিই তুলে ধরেছে বলে মন্তব্য করেন ছাত্রলীগ নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হলের কয়েক শিক্ষার্থী বলেন, হলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। অন্যান্য হলে যেমন সিসি ক্যামেরা রয়েছে, এই হলে তা-ও নেই।
নজরুল ইসলাম হলটি বুয়েটের ভেতরের দিকে শেষ হল এবং এর ভবন বেশ পুরনো। এই হলের কাছ দিয়ে ছোট একটি ফটক রয়েছে, যা দিয়ে বকশী বাজারে আলীয়া মাদ্রাসার দিকে বের হওয়া যায়।
নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. আফসার আলী শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, হলের নিরাপত্তা আরো জোরদারের ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করছেন তিনি।
বুয়েটের হলে ঢুকে শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক।
তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি চাপাতি, একটি হাত ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার হারুনুর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, হামলার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হলের দারোয়ান মো. জাকির হোসেনকে (৪০) লালবাগ থানায় নেয়া হয়েছে।
জাকিরের বরাত দিয়ে হারুন বলেন, আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী পাজামা-পাঞ্জাবি ও টুপি পরিহিত দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তি এই হামলা করে পালিয়ে যায়।
পুলিশ ওই কক্ষ থেকে একটি ব্যাগ উদ্ধার করেছে, যাতে একজোড়া পাজামা-পাঞ্জাবি ও একটি চাপাতি পাওয়া গেছে।
ব্যাগে ওই চাপাতি কেনার রশিদও পাওয়া গেছে। তাতে লেখা চাপাতিটি কেনা হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি। তবে সেখানে দোকানের নাম ছিল না।
বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেছেন, এই ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হচ্ছে।